ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি-ইরান সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গভীর উদ্বেগ

ব্যাহত হবে আইএস বিরোধী যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

ব্যাহত হবে আইএস বিরোধী যুদ্ধ

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে হঠাৎ উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে চলমান লড়াই, সিরীয় গৃহযুদ্ধ বন্ধের কূটনৈতিক প্রয়াস এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনার বৃহত্তর প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে। ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। তেহরানের সঙ্গে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়ার পর প্রশাসন দু’পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়। তেহরানে বিক্ষুব্ধ জনতা শনিবার রাতে সৌদি দূতাবাস তছনছ করার পর সৌদিরা ওই ঘোষণা দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কারবি রবিবার বলেন, মতপার্থক্য দূর করতে হলে কূটনৈতিক তৎপরতা ও সরাসরি কথাবার্তা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। আমরা উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে ওই অঞ্চলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই। কিন্তু ওই প্রকাশ্য আহ্বানের মধ্য দিয়ে ইরান ও অন্যান্য প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যকার দীর্ঘদিনের মতপার্থক্যকে ধামাচাপা দেয়া হলো এবং দুটি দেশের সম্পর্ক গুরুতরভাবে ক্ষুণœ হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি করা হলো। প্রশাসন কর্মকর্তারা বিশিষ্ট শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকর করে গত সপ্তাহান্তে উত্তেজনা উস্কে দেয়ার দায়ে ঘরোয়াভাবে সৌদিদের সমালোচনা করেন। নিমরকে দু’বছর আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তাকে ক্ষমতাসীন সুন্নী রাজপরিবারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ছড়ানোর দায়ে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, তারা এক বিপজ্জনক খেলা খেলছে। তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি মার্কিন-সৌদি সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এসব মৃত্যুদ- কার্যকর করার ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছাড়াও আরও বড় রকমের প্রভাব পড়ছে। যেমন- ইসলামিক স্টেটকে দমন করার উদ্যোগ এবং সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সৌদি আরব স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, গত সপ্তহান্তের ঘটনা নিয়ে মার্কিন আশঙ্কা সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ অনেক ইস্যুতে ইরানের কাছে পাশ্চাত্য নতিস্বীকার করে চলেছে বলে তাদের বিশ্বাসের তুলনায় কিছুই নয়। সৌদিদের ভাবনা ব্যক্ত করার কর্তৃত্ব রয়েছে এমন একজন তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। ইরান সন্ত্রাসবাদে মদদ যুগিয়ে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে বারবার পাশ্চাত্যের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে চলেছে। এ নিয়ে কেউই কিছু করছেন না। ওই ব্যক্তি বলেন, প্রতিবারই যখন ইরানীরা কিছু করে, তখন যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটে যায়। সৌদিরা আসলেই কিছু করছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের রবিবার রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা ইরানকে আমাদের নিরাপত্তা বিনষ্ট না করতে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা ইরানকে আমাদের দেশে বা আমাদের মিত্রদের দেশগুলোতে সন্ত্রাসী চক্র মোতায়েন, সৃষ্টি বা প্রতিষ্ঠা না করতে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা তা করতে ইরানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেব। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসদমন অভিযানে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উন্নতি ঘটাতে দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করে এসেছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর দু’দেশের সম্পর্ক ক্রমশ চাপের মুখে পড়ে। ২০১১ সালের শেষদিকে সূচিত সিরীয় গৃহযুদ্ধ কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে প্রায়ই মতপার্থক্য দেখা দেয়। রিয়াদ চেয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপসহ আরও শক্তিপ্রয়োগ করুক এবং সিরীয় সরকার-বিরোধীদের আরও আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করুক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, সৌদি আরব গত গ্রীষ্মকালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক আলোচকরা তেহরানের সঙ্গে চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিল। চুক্তিটি একবার কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে দেশটিকে অর্থ সহায়তা দেবে। কিন্তু ইরান এ অঞ্চলটি দখল করতে ওই অর্থকে কাজে লাগাবে বলে সৌদি আরব মনে করে। ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলেও রিয়াদের ধারণা। সিরিয়ার শান্তি প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে : সৌদি আরবের সুন্নি রাজপরিবারের সঙ্গে শিয়া ইরানের নতুন করে তৈরি হওয়া উত্তেজনায় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগেরিনি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, রোববার তিনি ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফকে একথা জানিয়ে সতর্ক করেছেন। সৌদি আরব শিয়া নেতা শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর ইরানে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জারিফের সঙ্গে মোগেরিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব পক্ষকে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে বলে একমত হয়েছেন তারা। মোগেরিনি আরও বলেন, সিরিয়ার সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়টিতে সহায়তার জন্য এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিপক্ষে একটি বাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় এবং প্রধান আঞ্চলিক পক্ষগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। নতুন অস্থিতিশীলতা দিয়ে এসব উদ্যোগকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া ঠিক হবে না। তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলার বিষয়ে আমাকে অবহিত করে সৌদি কূটনীতিকদের রক্ষায় ও উত্তেজনা প্রশমনে ইরানী কর্তৃপক্ষ যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানিয়েছেন জারিফ। মোগেরিনি রবিবার বিকেলে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইরের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন। এ সময় শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিরুদ্ধে ইইউ-র অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি।
×