ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ধূলোবালি ওবেসিটি বাড়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

ধূলোবালি ওবেসিটি বাড়ায়

‘এ শহর... জাদুর শহর ... প্রাণের শহর ঢাকারে...’ ঢাকাকে নিয়ে চিরকুট ব্যান্ডের একটি অসাধারণ গানের কলি। এই গানটি শুনলে হয়ত যে কেউই ঢাকা নগরীকে প্রাণের বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাইবেন। কিন্তু জাদুর শহর এই ঢাকা আদৌ কী আমাদের প্রাণের হতে পেরেছে? অনেকের কাছেই উত্তরটি ‘না’ সূচক। কেননা ধুলাবালি, খানা-খন্দরে ভরা রাস্তাঘাট নগর জীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। যার প্রধান কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ বিশেষভাবে দায়ী করা হয়। সচেতনতাই পারে আমদের এসব বিপদ থেকে রক্ষা করতে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিরাপদ ও আবাসযোগ্য নগর জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হলে আমাদেরকে কাজ শুরু“করে দিতে হবে আজ থেকেই... বর্তমান সময়ে আমাদের নগর ব্যবস্থা গড়ে উঠছে অনেকটাই অপরিকল্পিতভাবে। যেখানে সচেতনতার রয়েছে বড্ড অভাব। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আমারা হরহামেশাই নিজেদের শিক্ষিত প্রমাণের চেষ্টায় কাগজের সার্টিফিকেট বের করে নিচ্ছি। কিন্তু শিক্ষার যথাযথ প্রয়োগ আমরা করছি কোথায়? সবকিছু দেখেও কেন জানি না দেখার ভান করে থাকতেই আমরা যেন বেশি পছন্দ। অনেকসময় আবার নগর বর্ধনের কাজে নিয়োজিত দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের অদক্ষতার কারণে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে নগর জীবন। করি। যার ফল ভোগ করতে হতে পারে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেই। তাই সচেতনতার এখানে বিকল্প আর কোন কিছুই নেই। রাজধানীসহ নগরগুলোতে যে হারে ধুলাবালি এবং যানবাহনের ধোঁয়া বাড়ছে, তাতে করে নগরগুলো যদি মরুভূমিতে পরিণত হয় এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ঢাকা মহানগরের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে কর্মরত আছেন তিনি। নগরে ধুলাবালি বৃদ্ধি এবং মানবদেহে এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে কথা বলছিলেন ইমার্জেন্সি মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডাঃ রিয়াজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আশঙ্কাজনকভাবে দিনদিন আমাদের পরিবেশে ধুলাবালিসহ যানবাহনের ধোঁয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিকে এগুলো যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে, অন্যদিকে মানবদেহে অস্বাভাবিকভাবে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরাই। এ সমস্ত ধুলাবালি এবং ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানবদেহের ভেতরে গিয়ে শ্বাস কষ্ট, হাঁপানিসহ বিভিন্ন ধরনের এ্যালার্জি (চুলকানি, ব্রন, চামড়ার উপরি অংশ জ্বালাপোড়া করা প্রভৃতি) রোগের সৃষ্টি করছে। এ্যালার্জিজনিত রোগের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রায়ই রোগীরা আমাদের কাছে আসছেন। আশঙ্কাজনকভাবে শিশুদের সংখ্যা এখানে বেশি। অনেকসময় ধুলা ও ধোঁয়াজনিত কারণে হরমোনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। যার ফলে মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ রকম যদি চলতে থাকে তবে এর প্রভাব পড়বে মানুষের গড় আয়ুতে। অর্থাৎ মানুষের গড় আয়ু প্রতিনিয়ত হ্রাস পেতে থাকবে। এ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দিতে গিয়ে ডাঃ রিয়াজ বলেন, ধোঁয়া এবং ধুলাজনিত কারণে সৃষ্ট রোগগুলোকে হয়ত একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তবে একটা সময় পর্যন্ত এগুলকে শুধুমাত্র দমিয়ে রাখা যায়। মাস্ক পরিধান করে বাইরে চলাফেরা করা একটি প্রাথমিক সমাধান হতে পারে। কিন্তু যে হারে ধুলাবালি বাড়ছে তাতে করে এই পদ্ধতি কতটুকু কার্যকরী হবে, তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। নিয়মিতভাবে রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে নগরপালের কর্তা-ব্যক্তিদের। রাস্তাঘাট সংস্কারের সময় প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। তাই দ্রুত রাস্তাঘাট মেরামতের মাধ্যমে ধুলাবালির হাত থেকে নগরীকে রক্ষা করতে হবে। ডাঃ রিয়াজ আরও বলেন, এখানে গণমাধ্যমগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যমগুলোর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে আমরা দেখতে পাই, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে কালো ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন চলাচলা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। বর্তমানে এরকম আরও একটি মিডিয়া বিপ্লব ঘটানো জরুরী হয়ে পড়েছে। এখন মানুষ কেবল প্রাতিষ্ঠানিক সনদ অর্জনে ব্যস্ত। কিন্তু এর পাশাপাশি যে পরিবেশ বিষয়ক জ্ঞান থাকাও জরুরী, তা মানুষ বেমালুম ভুলে যাচ্ছে। এখনই সময় জাতীয়ভাবে দেশের প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইন করে সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এবং ক্যাম্পেইন থেকে অর্জিত জ্ঞান বাস্তবজীবনে প্রয়োগের নিশ্চয়তা প্রদান করা। এভাবেই যদি সবাই একসঙ্গে সচেতন হয় তবেই দেশকে একটি বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। নাসিফ শুভ
×