ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেজা ফারুক

নতুন বছরে টাঙ্গাইল শাড়ির চালচিত্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

নতুন বছরে টাঙ্গাইল শাড়ির চালচিত্র

দেশীয় ঐতিহ্যের এক অনস্বীকার্য শিল্পের মধ্যে টাঙ্গাইলের শাড়ি শিল্প একটি অন্যতম মাধ্যম। বাঙালী রমণীদের কাছে টাঙ্গাইল শাড়ির গ্রহণযোগ্যতা অপরিসীম। স্বাধীনতাত্তোরকালে এ শিল্পে লাগে আধুনিকতার গভীর ছোঁয়া। বিশেষ করে আশির দশকের শুরুতে ধীরে ধীরে টাঙ্গাইল শাড়ি শিল্প বিকশিত হতে হতে একটা স্বকীয় অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত রচনায় সমর্থ হয়। বাঙালী সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়ি বিশেষ স্থান করে নেয়। প্রথমত দেশীয় তাঁতশিল্পের বিকাশ, দ্বিতীয়ত ওই শাড়ির সহনীয় দাম, বুননশৈলী, মান, আধুনিক ছোঁয়া এবং শৈল্পিক মোটিফের দরুন দিন দিন টাঙ্গাইল শাড়ি পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে সব ঋতুতেই একটা আলাদা অবস্থান তৈরির পর এক সময় বৃহৎ ঈদ উৎসবসহ সব ধরনের উৎসবেই প্রথম পছন্দের শীর্ষে চলে আসে টাঙ্গাইল শাড়ি। সুতি শাড়ির পাশাপাশি সিল্ক, মার্সলাইস, জামদানি মোটিফে গর্জিয়াস টাঙ্গাইল শাড়ি নগর জীবনে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়ে ওঠে। টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভের পর ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের রুচিশীল ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে বড় আউটলেটগুলো বিপণন ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে যেমন টাঙ্গাইল শাড়ি এক নিজস্ব শিল্পমাধ্যম হিসেবে একটা শক্ত ভিত্তি খুঁজে পায়, সেই সঙ্গে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাঁতশিল্পীদের জীবনেও সচ্ছলতা ফিরে আসে। ক্রমশ টাঙ্গাইল শাড়ি দেশীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি হতে থাকে। এমতাবস্থায় বিগত দু-তিন বছর ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির বাজার হঠাৎ অস্থির হয়ে পড়ে। এই অস্থিরতার কারণ হিসেবে এই ব্যবসায় যুক্তরা বলছেনÑ কাঁচামাল, রং, জরিসহ শাড়ি বুননের প্রায় সবগুলো উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় একটা শাড়ি বুননে দুই বছর আগে যে টাকা খরচ করতে হতো, বর্তমানে সে খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় শাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি দামে শাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে বাজার হারাচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ি। এই শাড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তাই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জোর আবেদন জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে কথা হয় ফ্যাশন ডিজাইনার বিশিষ্ট তাঁতশিল্পী মন্টু বসাকের সঙ্গে। দেশীয় তাঁতশিল্পের বাজার বিশেষ করে টাঙ্গাইল শাড়ির শিল্প টিকে থাকার সংগ্রামে আজ অনেকটা পর্যুদস্ত বলে জানানÑ টাঙ্গাইল শাড়ি প্রস্তুতকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান মনেমন্টুর শাড়ির কর্ণধার মন্টু বসাক। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ব্যবসা গুটিয়ে আমাদের বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। বিগত ২০১৫ সালের ব্যবসায়িক মন্দাবস্থা, কাঁচামালের উর্ধগতি এবং বিদেশী শাড়ির দাপটে আজ আমাদের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের শাড়ির ব্যবসা মুখথুবড়ে পড়ার উপক্রম বলে উল্লেখ করেন মন্টু বসাক। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি যারা শাড়িশিল্পের কারিগর, সেই হাজার হাজার কারিগরের পিঠও আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এমতাবস্থায় এ ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের শাড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি একটু সুদৃষ্টি প্রসারিত করেন তাহলে দেশীয় তাঁতশিল্প দেশের সুনামকে অক্ষুণœ রেখে এগিয়ে যাবে। সবশেষে মন্টু বসাক বলেন, বিদেশী শাড়ির আগ্রাসনে যেন দেশীয় টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্য বিনষ্ট হতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরী। শাড়ি : মনেমন্টু
×