ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ লক্ষ্যে এখন তারা নানা ধাপে নাশকতা চালাচ্ছে

আইএসের আনুকূল্য পেতে মরিয়া জেএমবি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

আইএসের আনুকূল্য পেতে মরিয়া জেএমবি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ মিরপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত তিন জেএমবি সদস্য গ্রেনেড তৈরি ও মজুদের পাশাপাশি নিজেরাও গ্রেনেড পৌঁছে দিত। তবে পাঁচটির বেশি গ্রেনেড সরবরাহ বা বহন করা জেএমবির তরফ থেকে নিষিদ্ধ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুইজন সশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হামলা পর্যবেক্ষণ করত। কিভাবে গ্রেনেড ছুড়তে হয়, অনেক সময় সরেজমিনেও তার প্রশিক্ষণ দিত এ দু’জন। গ্রেফতারকৃতদের একজন হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হামলার সময় অদূরে দাঁড়িয়ে হামলা পর্যবেক্ষণ করেন। নানা ধাপে জেএমবি কাট আউট পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এ ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়ি থেকে ১৬টি হ্যান্ডগ্রেনেড ও ১টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাইপ গ্রেনেড, সুইসাইডাল ভেস্ট (আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য শরীরের সঙ্গে গ্রেনেড বেঁধে রাখার বিশেষ বেল্ট) ও ২শ’ হ্যান্ডগ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম ও বিস্ফোরকসহ তিন জেএমবি সদস্য আবু সাইদ ওরফে রাসেল ওরফে সালমান (২২), ইলিয়াস ওরফে ওমর ফারুক (২৩) ও মোহসীন আলী ওরফে রুবেল (২০) গ্রেফতার হয়। প্রথম দফায় ৬ দিনের পর দ্বিতীয় মেয়াদে শুক্রবার তাদের ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেএমবি সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের আনুকূল্য পেতে মরিয়া। এজন্য বাংলাদেশে তারা নানা ধাপে মারাত্মক নাশকতা চালাচ্ছে। সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা জেএমবির নতুন ও পুরনো সদস্যদের ইসলাম ধর্মের নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গীবাদের দিকে ধাবিত করছেন। উদ্বুদ্ধ হওয়ার পর নতুন সদস্যদের প্রাথমিকভাবে শারীরিক কসরত করানো হচ্ছে। এরপর তাদের মানসিকভাবে ধীরে ধীরে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে জিহাদের নামে নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে। নাশকতা চালানোর জন্য তাদের বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। জেএমবির সাথী পর্যায়ের সদস্যরা বিস্ফোরক সংগ্রহ করছেন। অধিকাংশ বিস্ফোরক চোরাই পথে এবং ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংগৃহিত বিস্ফোরক দেশের বিভিন্ন জেলার অপেক্ষাকৃত দুর্গম জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে মজুদ করা হচ্ছে। ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বাসা ভাড়া নেয়ার দায়িত্ব পালন করছেন জেএমবির উচ্চ শিক্ষিত সদস্যরা। এরপর সেখানে বই বহনের ব্যাগে, বইয়ের ভেতরে বা সাধারণত সন্দেহ হয় না, এমন সব জিনিসের আড়ালে বিস্ফোরক মজুদ করা হয়। গ্রেনেড বা বোমা তৈরির কারিগরদের অধিকাংশই ছাত্র। আবার কেউ কেউ ছাত্রর বেশে সেই বাড়িতে বসে বসে গ্রেনেড তৈরি করছে। বাসার ভেতরে শারীরিক কসরত, বোমা তৈরি, মজুদ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শেখানো হচ্ছে। সার্বিক সবকিছু শেখানোর পর রাতে বা দিনে ঢাকার বিভিন্ন নির্জন জায়গায় বোমা বা গ্রেনেড নিক্ষেপ বা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে নিপুণভাবে গুলি চালানোর বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। জেএমবির এসব কার্যক্রমে জড়িতদের নাম-ঠিকানা থেকে শুরু করে সবকিছুই পরিবর্তন করে রাখা হয়। মূলত সাংকেতিক ভাষায় তাদের সবকিছু চলতে থাকে। মূলত গ্রেফতার এড়াতেই এমন পদ্ধতি। যাতে একজন ধরা পড়লেও আরেকজনের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ না পায়। এমনকি অন্যজন সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য না দিতে পারে। চূড়ান্ত হামলার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর টার্গেটকৃত ব্যক্তি বা স্থান নির্ধারণ করা হয়। সেখানে অনেক আগ থেকেই বাসা ভাড়া নেয়। হামলায় অংশগ্রহণকারীরা সেই ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। আর ফাঁকে ফাঁকে টার্গেটকৃত জায়গায় রেকি করতে থাকে। চূড়ান্ত রেকি করা হয় অন্তত সপ্তাহখানেক আগে। এরপর হামলার জন্য গ্রেনেড সরবরাহ করা হয়। হামলায় অংশগ্রহণকারীরা কোন কারণে কারখানা থেকে গ্রেনেড নিতে সক্ষম না হলে তাদের কাছে গ্রেনেড বা বোমা পৌঁছে দেয়া হয়।
×