ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচ কার্নিভ্যাল ও পর্যটন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

বিচ কার্নিভ্যাল ও পর্যটন

খ্রিস্টীয় নববর্ষকে সামনে রেখে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী জেলা কক্সবাজারে শুরু হয়ে গেল তিন দিনব্যাপী বিচ কার্নিভ্যাল। উৎসবের আয়োজক পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। মূলত বিশ্ব দরবারে পর্যটননগরী কক্সবাজারকে আরও ভালভাবে তুলে ধরতেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় ‘মেগা বিচ কার্নিভ্যাল ডেস্টিনেশন-২০১৬।’ এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী কক্সবাজারকে একটি আধুনিক ও সুদৃশ্য পর্যটননগরী হিসেবে ব্যাপক পরিসরে তুলে ধরা, যাতে বিদেশী পর্যটকরা আরও আকর্ষণ অনুভব করেন। তিন দিনের অনুষ্ঠানে ছিল নানামুখী ও বিচিত্র আয়োজন। বিদেশী পর্যটক ছাড়াও বিপুলসংখ্যক পর্যটক উপভোগ করেন এই মনোরম কার্নিভ্যাল। গণমাধ্যম বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচারের সুবাদে অগণিত দর্শক-শ্রোতাও উপভোগের সুযোগ পেয়েছেন এই মনোরম ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানমালা। বছর শেষে যৎসামান্য বিষাদ এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর বাঁধভাঙ্গা আনন্দ-উচ্ছ্বাস যাতে কোন অবস্থাতেই লাগামহীন হয়ে শেষপর্যন্ত ট্র্যাজেডিতে পরিণত না হয় সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশ্বের অনেক দেশেই নববর্ষ আহ্বানকে কেন্দ্র করে অল্পবিস্তর অঘটন এমনকি প্রাণহানি, দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ঘটে শ্লীলতাহানির ঘটনাও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীসহ সারাদেশে আগেভাগেই ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এবার তেমন কোন অপ্রীতিকর খবর পাওয়া যায়নি। গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় উপাসনালয়সহ বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলা, বিদেশী নাগরিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনা আছে। একাধিক প্রাণহানির ঘটনাও আছে। সেই প্রেক্ষাপটেই বিবেচনা করতে হবে বিচ কার্নিভ্যালের আনন্দ উৎসবটি। কেননা, পর্যটকরা যে কোন দেশেই বেড়াতে গিয়ে সর্বপ্রথম যে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকেন তা হলো নিরাপত্তা। সম্প্রতি জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটন ব্যবসায় প্রায় ধস নেমেছে। বলা যায়, বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত এসব দিক থেকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। কক্সবাজারকে বলা হয় বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত। এর সুদীর্ঘ প্রলম্বিত বেলাভূমিতে সূর্যাস্ত উপভোগের যে মনোরম মায়া ও স্নিগ্ধতা; অনুরূপ সৌন্দর্য রয়েছে কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে একই সঙ্গে সকালে সূর্যোদয় ও অপরাহ্ণে সূর্যাস্ত উপভোগের। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভও হতে পারে বিনোদনের অন্যতম প্রধান একটি মাধ্যম। তদুপরি সুবিশাল ও মনোরম সমুদ্র সৈকতের অপেক্ষাকৃত নির্জন ও জনবিরল স্থানে কেবল বিদেশীদের জন্য গড়ে তোলা যেতে পারে এক্সক্লুসিভ জোন বা বিশেষ এলাকা। থাইল্যান্ডের পাতায়া, মালয়েশিয়ায় জেন্টিং আইল্যান্ড, ভারতের গোয়ায় এ রকম বিশেষ এলাকা স্থাপন করে বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও না পাওয়ার কোন কারণ নেই। এর জন্য প্রয়োজনে পর্যটনসমৃদ্ধ দেশগুলোর পরামর্শ ও সহায়তা নেয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি বলা যায়, কক্সবাজারের বেলাভূমিতে থোরিয়াম, ইউরেনিয়াম, টাইটেনিয়ামের মতো কতিপয় দুর্লভ ও দুর্মূল্য খনিজসম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো পারমাণবিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব আহরণ করা সম্ভব হলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মোট কথা, পর্যটনসহ নানা দিক থেকে কক্সবাজারকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করতে পারলেই বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক আরও আকর্ষিত হবে। পর্যটন মন্ত্রণালয় সেই লক্ষ্যপূরণেই অগ্রসর হবে বলে প্রত্যাশা।
×