ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কামাল লোহানী

‘মুক্তিযোদ্ধা’ খালেদা জিয়ার স্পর্ধিত উচ্চারণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

‘মুক্তিযোদ্ধা’ খালেদা জিয়ার স্পর্ধিত উচ্চারণ

(গতকালের পর) এসব উচ্চারণ যে কতটা ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং বাঙালী জাতিকে অবমাননাকর, তা বোঝাবার ক্ষমতাই তো নেই তার।... তাছাড়া হায়রে শিক্ষার বহর, প্রয়াত জিয়াউর রহমান কি করে রাষ্ট্রপতি হন? মায়ে-বেটায় বলতে বলতে ভাবছে সকলকে ইতিহাসের মিথ্যাচার গেলাতে পারবে। হ্যাঁ পারবে তবে, চাটুকারদের। মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যাদের জানা আছে, তারা একথা বিশ্বাস করবেন না। রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচারের কারণে দলের লোকজন আপাতত হয়ত মেনে নেবে। কিন্তু আদতে তো এমন হয় না। যে সব কথা মা-বেটা মিলে বলে যাচ্ছে, তা যে সংবিধানবিরোধী এবং রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল, তাও বোঝার মতন রাজনৈতিক শিক্ষা বুঝি নেই। কিন্তু তারেক জিয়া তো লন্ডনে পলাতক আসামি হয়ে ব্রিটিশ কোচিং নিয়ে যাচ্ছে, সে তো নিশ্চয়ই বুঝেই কথাবার্তা বলছে, তাতে তো বোঝা যায় সে এক জ্ঞানপাপী। নিরাপদ দূরত্বে বসে অদৃশ্য অর্থে জীবনধারণ করে যে সব কুৎসিত মন্তব্য করে যাচ্ছে তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল হলেও সে যে ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাই যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে, কিন্তু বেগম জিয়া লন্ডনে গিয়ে কোন্ কারণে এতদিন পুত্রের সঙ্গে বসবাস করে এলেন, যাওয়ার আগে কী নির্মমভাবেই আগুন-সন্ত্রাসে মানুষ হত্যা করে গেলেন। নিরীহ গরিব লোকজনকে যেভাবে হত্যা করেছেন তিনি, তা যুদ্ধাপরাধীর চেয়ে কম কী? ভুল করে ‘অবরোধ’ শব্দটা উচ্চারণ করে তিন মাস হাস্যকর কারণে গুলশান অফিসে ৪০ জন লোকলস্করকে সঙ্গে নিয়ে শান-শওকতে দিনে কাটিয়ে নৃশংসতার এক নিষ্ঠুরতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। হায়রে দেশনেত্রী! এত মানুষের জীবন খতম করেও সাধ মেটেটি। এখন পৌর নির্বাচনের আগে ওই সব উস্কানিমূলক কথা-মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল অথবা হোস্টাইল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ জেনেও, এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে চাইছেন তিনি, যে কোনভাবেই হোক তাঁকে যেন গ্রেফতার করা হয়। করলে বিএনপির তৃণমূল আর নেতাকর্মীদের মধ্যে পুনরুজ্জীবনের একটা শক্তির উদয় হবে বলে বোধ হয় ভাবছেন তিনি। তাই এই কৌশল। রাষ্ট্র হিসেবে একেবারে অকার্যকর ও অস্থিতিশীল অবস্থা পাকিস্তানে। তাদের পার্লামেন্ট, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এমনকি জেনারেল নিয়াজীর আপন ভাতিজা ইমরান খানও বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান থেকে মন্তব্য করে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দরদ উতলে উঠছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের জন্য। এসবের ঔদ্ধত্য কী করে একটি দেশ অন্য স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারে? তবু তারা করছে, তাদের ‘পেয়ারাবান্দা’দের বাঁচাবার জন্য কিংবা ফাঁসিতে মনের কষ্ট প্রকাশ করার জন্য। তাই তো দেখি বাংলাদেশের তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং ’৭১-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘জানিদোস্ত’দের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য জীবন কাটিয়ে আসার পর এ দেশের মহানায়ক, মুক্তিযুদ্ধ এবং যাদের প্রাণ বিসর্জনে স্বাধীনতা পেলাম আমরা, স্বদেশ মাতৃভূমি ফিরে পেলাম, তাদের অবমাননা করে পাকিস্তানী চিন্তা চেতনায় খালেদা জিয়াও ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। রাষ্ট্র কেন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। খালেদা জিয়াকে প্রমাণ করতে হবে, যে সব কথা বলেছেন, সব সত্য। তাকে ক্ষমা তো চাইতেই হবে, না হলে তাঁর ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ভদ্র মহিলা যে উদ্দেশ্য নিয়ে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো যে কতটা কুৎসিত, ন্যক্কারজনক-হিংসাত্মক, বিকৃত রাজনৈতিক মানসিকতার পরিচায়ক- তা তো খালেদা জিয়া বুঝেই বলেছেন। এইসব কথা বলতে পারছেন কারণ এমন উক্তি, বক্তব্য, মন্তব্য লেখা কোন কিছুর বিরুদ্ধেই কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। মানুষ এসব কথায় কত যে ক্ষুব্ধ সরকার বোধ হয় বুঝতে পারছে না। গণতন্ত্রের অধিকার বিষয়ে সরকার এমনকি রাষ্ট্র কি পরাকাষ্ঠা দেখাচ্ছে? ব্লগারসহ বিভিন্ন হত্যাকা-ের বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি বলে ‘বৈরী রাজনীতি’র এই মহাত্মনেরা ভাবছেন, এ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিলেও পাশাপাশি ওই রাষ্ট্র্রদ্রোহী অপশক্তিকে প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপই নিচ্ছে না। বর্তমানে বিএনপি এবং জামায়াতের অবস্থা অনেকটাই লেজেগোবরে। সাধারণ মানুষও বুঝতে পারছেন, জামায়াত কী করেছে মুক্তিযুদ্ধকালে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে, এজন্য সাধুবাদ জানাই মহাজোট সরকারকে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চিত্ত সিদ্ধান্তের জন্য। তিনি জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি চাপ ও বিরোধিতা সত্ত্বেও যে বলিষ্ঠ ও সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে, তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু একই ধারায় ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে যে সব নেতানেত্রী সংবিধান-অবাধ্যতা দেখাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে দেশের মানুষ শান্তি পেয়েও পাচ্ছেন না। ...তারেক জিয়া পালিয়ে আছে, সরকারী সুযোগ ব্যবহার করে, তাকে কেন ধরে আনা যাচ্ছে না? সরকারকে সত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। লন্ডনকে গোকূল ভেবে তারেক জিয়া বেড়ে উঠতে চেষ্টা করছে। ‘বধ’-এর পাঁয়তারা আছে বটে, তবে সাধ্য নেই তাদের। এখন ওখানেই ‘ছাগলের তৃতীয় বাচ্চা’র মতন লাফালাফিই করতে থাকবে। তবে বুলি কপচানি কিছুটা কমে গেছে। হয়তোবা ‘কোচ’ যারা আছে তারাই এই কৌশল শিখিয়ে দিয়েছে বোধ হয়। তাই বোধ হয় বিএনপি ‘জামায়াতের দোস্তি’ হারিয়ে নিজেদের দলের ভিত্তিমূলে দারুণ দুর্বলতা দেখে আন্দোলনে যেতে সাহস পাচ্ছে না। একমাত্র অফিসে সংবাদ সম্মেলন, গুলশানে প্রেস ব্রিফিং, প্রেসক্লাব আর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে দলীয় সভা ডেকে সরকারের অযৌক্তিক সমালোচনা-বিরোধিতা করেই চলেছে কিন্তু ময়দানে নামার সাহস পাচ্ছে না। তবে বুদ্ধিমানের মতন সিদ্ধান্ত নিয়ে পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এতে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দল নড়াচড়া করছে। ফলে সবার মধ্যে একটা তৎপরতা-চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া বোধ হয় এই চঞ্চলতাকে নির্ভর করতে পারছেন না। তাই বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পৌর নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। নির্বাচনকালীন তার জন্য ধরনা দিয়েছিল। বিএনপি নেতা মঈন খান কথা বলেছেন, এরপর কিন্তু রাষ্ট্রদূতরা কেউই কোন কথা না বলেই চলে গেছেন। হায়রে হ্যাংলামো! নিজের দেশ, সেই দেশের একটি অপরাজনীতির দল বিএনপি সরকার, নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের অভিযোগ না জানিয়ে বিদেশীদের কাছে নিজেদের দুর্বলতা, লজ্জার কথা ঢোল পেটাতে গেল কেন? বিএনপি কি আশা করছে, বিদেশী কূটনীতিকরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে... জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে তো আর তাদের কাছে যাওয়ার মুখ থাকে না। তাই পরের কাছে ঘরের কথা বলতে গিয়েছিল বিএনপি। দেশের মানুষ এক কথা বলেন আর বিএনপিরা ভিন্ন কথা বলে নিজেরা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ খুঁজছে। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
×