ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোয়েন্দা রিপোর্ট

৫ জানুয়ারি রাজধানীতে নাশকতা চালাতে পারে জামায়াত-শিবির

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

৫ জানুয়ারি রাজধানীতে নাশকতা চালাতে পারে জামায়াত-শিবির

শংকর কুমার দে ॥ ৫ জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি জনসভা আহ্বানে টান টান উত্তেজনার সুযোগে নাশকতা ও হামলা চালাতে পারে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা। যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায়ের আগে এবং ৫ জানুয়ারিতে রাজধানীতে নাশকতা ও হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে তারা। এই ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পর ৫ জানুয়ারিতে বড় ধরনের কোন জনসভা বা সমাবেশ করতে না দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এদিকে চলতি মাসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জঙ্গী হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ভারতের বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টাও করা হতে পারে ৫ জানুয়ারিতে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী এলাকা থেকে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকাসহ জামায়াতের ৫ নেতাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের শীর্ষ কয়েক নেতার যুদ্ধাপরাধের মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে ৫ জানুয়ারিতে নাশকতা ও হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ৫ জানুয়ারিতে পাল্টাপাল্টি জনসভার প্রস্তুতি নিয়ে টান টান উত্তেজনা ও অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়। নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে শনিবার রাতে দুই রুকনসহ জামায়াতের গিয়াস উদ্দীন, আমিনুর রহমান, আবুল হাশেম, শাহজাদুর রহমান সোহেল ও ওসমান গনি- এই ৫ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল থানার উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রায় ঘিরে গোপন বৈঠকে বসেছিল আটকরা। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় এবং ১ কোটি ৪৭,৫০০ টাকা জব্দ করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ডেট লাইন ৫ জানুয়ারিতে দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি জনসভা আহ্বানের উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে নাশকতা, হামলা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর পরিকল্পনার জন্য গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। জঙ্গী হামলার প্রতিবেদন ॥ এদিকে চলতি মাসে বাংলাদেশের জনবহুল এলাকা বা মেলায় জঙ্গীরা হামলা চালাতে পারে গোয়েন্দারা এমন তথ্য দিয়েছে বলে আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তাই জঙ্গী দমনে সরকার ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গী দমনে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও শুরু করেছে ব্যাপক তল্লাশি ও ধরপাকড়। উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর গ্রেনেড ও গ্রেনেড বানানোর বিস্ফোরক। জঙ্গী দমন অভিযানের গতি বাড়াতে কাউন্টার-টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম নামে আলাদা একটি ইউনিট গড়ে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে বাংলাদেশ প্রশাসনে। নতুন ওই ইউনিটের কাজ শুরু হবে চলতি মাসেই। এ মাস থেকেই জঙ্গী দমনে সর্বাত্মক অভিযানে নামছে বাংলাদেশ সরকার। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জনসভার আহ্বানকে কেন্দ্র করে টান টান উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। দুই রাজনৈতিক দলের উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে নাশকতা, হামলা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য পরিকল্পনা করেছে জামায়াতÑশিবির ও জঙ্গীগোষ্ঠী। যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ জামায়েতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের রায়ের আগে ৫ জানুয়ারিকে বেছে নিতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এর আগের ২০১৪ ও ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নৃশংস সহিংসতাসহ সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়ে বহু সংখ্যক মানুষকে হত্যা ও গুরুতর আহত এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের দ্বিতীয় বর্ষের পূর্তিতে রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ জানুয়ারি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আর এ নিয়েই রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
×