ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তেহরানে সৌদি দূতাবাসে আগুন, ভাংচুর

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

তেহরানে সৌদি দূতাবাসে আগুন,  ভাংচুর

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সৌদি আরব সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে শিয়া নেতা শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ইরানে। শিয়া বিক্ষোভকারীরা শনিবার গভীর রাতে তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকরের জন্য সৌদি আরবকে ‘কঠোর প্রতিশোধ’র মুখোমুখি হতে হবে। খামেনি শেখ নিমর আল নিমরকে ‘শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন তার বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ এবং তিনি কোন ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন না। নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকরের পর থেকে বাকযুদ্ধ চলছে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে। সৌদি আরব ইরানের কূটনীতিককে তলব করে প্রতিবাদ জানায়। আর ইরানও সৌদি কূটনীতিককে তলব করে পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়েছে। সৌদি আরবে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং ইরাক, বাহরাইন ও অপর কয়েকটি দেশেও নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষুব্ধ শিয়ারা মিছিল নিয়ে সৌদি আরবের দূতাবাস ভবনে ঢুকে পড়ে এবং আসবাবপত্র ভাংচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ইরানী পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ইরানের প্যারামিলিটারি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর সদস্যদের সৌদি দূতাবাস ভবনে পেট্রোল বোমা ছুড়তে দেখা গেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। রাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ইরানী কর্তৃপক্ষ জানায়, দূতাবাসে হামলার অভিযোগে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসেন জাবের আনসারি বলেন, এ ধরনের নীতি অবলম্বনের জন্য সৌদি আরবকে কঠিন মূল্য দিতে হবে। পরে সৌদি আরব ইরানের কূটনীতিককে তলব করে নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকরের তেহরানের প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদ জানায়। এক বিবৃতিতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মৃত্যুদ- কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে ইরান তার মুখোশ উন্মোচন করল। তারা যে সন্ত্রাসবাদের সমর্থন করে এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, সৌদি শাসকদের বিরোধিতা করায় নিমরকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। এক টুইটে তিনি উল্লেখ করেন, নিপীড়নের শিকার নিমর জনগণকে সশস্ত্র আন্দোলন করতে আহ্বান জানাননি বা গোপন চক্রান্তে জড়িত ছিলেন না। তার একমাত্র দোষ ছিল সৌদি শাসকদের প্রকাশ্য সমালোচনা। তিনি বলেন, অবৈধভাবে শেখ নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকর করায় ‘সৌদি আরবকে ‘কঠোর প্রতিশোধে’র মুখোমুখি হতে হবে। ২০১১ সালে সৌদি আরবের আওয়ামিয়া শহরকে কেন্দ্র করে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে সৌদি রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে যে শিয়া আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাতে জোরালো সমর্থন ছিল শেখ নিমরের। দুই বছর আগে গ্রেফতারের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হলে ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল অস্থিরতা । শনিবার সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার খবর জানায়। বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে এই মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার জন্য সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। ইরান বলেছিল, নিমরের দণ্ড কার্যকর করা হলে সৌদি আরবকে ‘বড় ধরনের খেসারত’ দিতে হবে। সৌদি সরকার সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে শেখ নিমরকে প্রাণদণ্ড দিলেও এই শিয়া নেতার সমর্থকদের বিশ্বাস, রাজতন্ত্রের সমালোচনা করায় ‘বিচারের নামে এই প্রহসন’ করা হয়েছে। সুন্নিপ্রধান সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে ‘কঠিন প্রতিশোধ’ নেয়ার অঙ্গীকারের কথাও ইতোমধ্যে জানিয়েছে ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড। অবশ্য শনিবার রাতে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার ঘটনার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কূটনৈতিক এলাকায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
×