ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরে চারটি নতুন রুট ;###;নিউইয়র্ক, মন্ট্রিয়ল ও নারিতা প্রক্রিয়াধীন ;###;বছরে যাত্রী পরিবহন ১৭ লাখ

বিমান লাভের মুখ দেখেছে ॥ আজ ৪৪তম বর্ষে পদার্পণ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

বিমান লাভের মুখ দেখেছে ॥ আজ ৪৪তম বর্ষে  পদার্পণ

আজাদ সুলায়মান ॥ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে লাভের প্রবাহে বিমান। জগদ্দল পাথরের মতো লেগে থাকা লোকসানের দুর্নাম ঘুচিয়ে নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয়ে নব দিগন্তে ডানা মেলেছে বিমান। “আকাশে শান্তির নীড় সেøাগান” নিয়ে বাহাত্তরের ৪ জানুয়ারি শুভযাত্রার পর আজ (সোমবার) ৪৪তম বর্ষে পদার্পণ। বিশ্বসেরা বোয়িং কোম্পানির নিজস্ব ৬টি ব্র্যান্ড নিউ উজোজাহাজ নিয়ে বিমান এখন ঈর্ষা জাগানো এয়ারলাইন্সে পরিণত। গ্রাউন্ড সার্ভিস ও সিডিউলে ব্যাঘাত ঘটার শত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বিমান এখন আর্থিকভাবে প্রবল পরাক্রমশীল। গত বছর রেকর্ডসংখ্যক যাত্রী টেনেছে ১৭ লাখ। তাতে লাভের অঙ্ক ২৭১ কোটি টাকা। এ লাভ যে, শুভঙ্করের ফাঁকি নয়Ñ সেটার প্রমাণ মেলে বিদেশী এমডির কাইল হেউডের লভ্যাংশ দাবিতে। চুক্তি মোতাবেক বিমান লাভ করলে এমডি পাবেন লভ্যাংশ। এ্যাভিয়েশান বিশেষজ্ঞরা বলছেনÑ এ সবই সম্ভব হয়েছে হঠাৎ বিশ্বজুড়ে তেলের দাম পড়ে যাওয়া, আর এয়ারমার্শাল জামাল উদ্দিনের মতো লৌহ মানবের কঠোর নীতির দরুন। তিনি বলেছেন, নতুন বছরে নুতন আঙ্গিকে সাজানো হবে বিমান। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের পার্টনার নেয়া, নতুন অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, নতুন নতুন রুট চালু করা, বৈদেশিক স্টেশনে বিমানের প্রচারণা শুরু, বিমান বহরে আরও অন্তত ৫টা উড়োজাহাজ যোগ করা ও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই স্বপ্নের ড্রিমলাইনার দুটো হলেও দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া, বিশ্বমানের ডিজিটাইলাইজড বিলবোর্ডের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন আলোকচ্ছটায় বলাকার প্রচার করা । অর্থাৎ বিমানের জন্য এ বছরই হবে এ দেশের কর্পোরেট বিজনেসের সেরা মডেল। নুতন বছরে নতুন রুট ॥ ঠিক এ বছরেই চালু হচ্ছে আরও ছয়টি রুট। এগুলো হচ্ছে কলম্বো, মালদ্বীপ, গুুয়াংজু, হংকং, দিল্লী ও ভুটান। বিমানের পরিচালক ডক্টর সাফিকুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, আগামী মাসেই কলম্বো ফ্লাইট চালু হচ্ছে। নতুন দুটো ৭৩৭ দিয়ে অপারেট করা হবে নিকট গন্তব্যের রুটগুলো। পরিকল্পনায় রয়েছে নিউইয়র্ক, কানাডা অস্ট্রেলিয়া ও নারিতা। এসব রুটের জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলছে। মার্কেট বিশ্লেষণের কাজ চলছে। লাভ-লোকসানের চেয়ে কর্পোরেট ব্র্যান্ড ইমেজ কতোটা গড়ে ওঠবে সেটাই হবে বিবেচনার মুখ্য বিষয়। এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সিভিল এ্যাভিয়েশানের ক্যাটাগরি ওয়ান হওয়ার ওপর নির্ভর করছে নিউইয়র্ক ফ্লাইট। এরই মধ্যে সিভিল এ্যাভিয়েশানের অডিট হয়েছে। এখন বিমানের রি-সার্টিফাাইড কাজ হবে। তারপর এফএএ টিম এসে অডিট করে অনুমোদন দিলেই সম্ভব। এটা চলতি বছরেই হবে বলে আশা করছি। শক্তিশালী বহর ॥ বিমান বহরে এ মুহূর্তে রয়েছে নিজস্ব ও লিজের মিলে ১৪টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে নিজস্ব ৪টি ব্র্যান্ড নিউ বোয়িং ৭৭৭, ২টি ৭৩৭, ২টি এয়ারবাস। আর লিজে আনা, ২টি ৭৩৭, ২টি বোয়িং ৭৭৭ ও ২টি ড্যাশ-৮। আরও নতুন ২টি উড়োজাহাজ (হয় ৭৭৭ নতুবা ৭৩৭) লিজে নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র ডাকা হয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে এ দুটো লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তখন বিমানের বহর দাঁড়াবে ১৬টি। এছাড়া এ বছরেই কানাডা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য কেনা হবে সম্পূর্ণ নতুন জাহাজ বোম্বাডিয়ার কোম্পানির ৪টি উড়োজাহাজ। এরই মধ্যে কানাডার হাইকমিশনার একাধিকবার বিমানের চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল জামাল উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাত করে অফার দিয়েছেন। আবার ফ্রান্সের বিখ্যাত এটিআর কোম্পানিও ৩টি উড়োজাহাজ বিমানের কাছে বিক্রির জন্য তৎপর হয়েছে। এ বিষয়ে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য অবশ্যই এসব ছোট উড়োজাহাজের প্রয়োজন রয়েছে। লিজের উড়োজাহাজ দিয়ে আর কত দিন চলবে? এটিআর ও বোম্বাডিয়ারের মধ্যে তুলনামূলক বেশি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিমান স্টাডি করছে। তারপর বলা যাবে কোনটা কতটা ভাল। এ সম্পর্কে কাইল হেউড বলেছেন, আগামী তিন বছরে বিমান বহরের বর্তমান সংখ্যা দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৪টি করার টার্গেট রয়েছে। বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে, মর্যাদাবান এয়ারলাইন্স করতে হলে অবশ্যই বিমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বর্তমান সরকারের মেয়াদে ২০১৮ সালেই বোয়িং থেকে নিজস্ব চারটি ড্রিমলাইনারের মধ্যে দুটো দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বোয়িং কোম্পানিও সম্মত হয়েছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডিলিং জয়েন্ট ভ্যাঞ্চারে ॥ চুয়াল্লিশ বছর ধরে স্ব-মহিমায় শিল্পোন্নত রেখে মহীরুহের মতো দাঁড়িয়ে থাকা বিমানের সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডিলিং সার্ভিস ও সিডিউলের মান। এ দুটো ইস্যু নিয়েÑ বার বার প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হচ্ছে বিমানমন্ত্রী, সচিব, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। সিডিউল ঠিক রাখা এখনও বিমানের জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয়। বিমান যুগ যুগ ধরে এই একটি জায়গায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যান জামাল নিজেও যেমন ক্ষুব্ধ তেমনই লজ্জিত। বছরে বিমান রেকর্ডসংখ্যক লাভ করলেও সমালোচানা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। একই অবস্থা গ্রাউন্ড হ্যান্ডিংলিংয়ের। আধুনিক বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডিলিং খুব দ্রুততম সময়ে করা হয়। এমনকি আমাদের পাশের ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও নেপালের মতো দেশেও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং মান খুবই সন্তোষজনক। ভুক্তভোগী যাত্রী সাখিনা খানমের মতে, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এয়ারপোর্টে উড়োজাহাজ থেকে নেমে ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে বেল্টের কাছে এসে দেখা যায় লাগেজ নামিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ শাহজালাল বিমানবন্দরে লাগেজ পেতে সময় কখনও কখনও দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। যারা লাকি তারা অনেক সময় হয়তো আধ ঘণ্টাতেই লাগেজ পেয়ে যান। কিন্তু সর্বশেষ লাগেজটা যিনি পান তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। কিন্তু কেন? প্রশ্ন করা হলে বিমানের পরিচালক ভারপ্রাপ্ত আতিক সোবহান জনকণ্ঠকে সেই পুরনো দিনের কথাইÑ যা তার পূর্বসূরীরা দুই যুগ আগেও বলে গেছেন। বলেছেন, প্রয়োজনীয় জনবল আর যন্ত্রপাতির অভাব। টাকার অভাবে যন্ত্রপাতি কেনা যায় না। অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত না হওয়ায় জনবলও নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। জনকণ্ঠের নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা যায়, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত ত্রুটি। একে তো বিশাল যাত্রীর তুলনায় এই বিমানবন্দরের আয়তন ও বিদ্যমান সুবিধার পরিধি একেবারেই সীমিত। যেমন টার্মিনাল নিচতলার পশ্চিম পাশের বেল্টের মাথায় যেখানে লাগেজ কার্ট এনে বেল্টে ফেলানোর জায়গাটা খুবই ছোট। তার ওপর রয়েছে বড় বড় পিলার। এ সব পিলারের কারণে ইচ্ছে করলেও ভারি যন্ত্রপাতি প্রয়োগ করে বেল্টে দ্রুত লাগেজ ফেলানো সম্ভব নয়। যে কারণে দূরে কার্ট দাঁড় করিয়ে হাতে টেনে লাগেজ ফেলা হয় বেল্টে। যে কারণে জয়েন্ট ভ্যাঞ্চারে বিদেশী কোম্পানির কাছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছেড়ে দেয়ার দাবি এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইল হেউড জনকণ্ঠকে বলেন, এটা একটা দীর্ঘদিনের পুরনো ও জটিল সমস্যা। এ থেকে রেহাই পেতে হলে অবশ্যই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। সেজন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছেড়ে দেয়া দরপত্রও ইতোমধ্যে ডাকা হয়েছে। এখন বিশ্বসেরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহও প্রকাশ করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কৌশলগত অংশীদার বাছাই করে কার্যাদেশ দেয়া স¤ভব। তবে এক্ষেত্রে বিমানের কর্মচারী কর্মকর্তা ও সর্বোপরি গণমাধ্যমগুলো ইতিবাচক সহায়তা দরকার। তবেই কেবল সম্ভব দ্রুততম সময়ে এটা সম্পন্ন করা। ডিজিটাল ভিডিও ওয়ার্ল্ড ॥ নিউইর্য়কের টাইম স্কোয়ার ও লন্ডনের পিকাডেলী পার্কসের সেই বিশ্বখ্যাত ডিজিটাল ভিডিও ওয়ার্ল্ড যারা দেখেছেন তারাই কেবল অনুধাবন করতে পারেন আজকের কর্পোরেট বিজনেস সেক্টরের প্রচারণায় কতটা মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে এসব। বিমানের সদর দফতর বলাকা ভবনের চারপাশে এমনই বিশ্বসেরা স্যামসাং কোম্পানির ভিডিও ওয়ার্ন্ড বসানো হচ্ছে। বলাকার চারপাশে চারটা বিশাল টেলি পর্দার এই ভিডিওতে দেখানো হবে বিমানের বিভিন্ন সেবা ও কর্মকা-। জানা যায়, এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে দরপত্রের মাধ্যমে কিংবা বিশেষ প্রতিযোগিতায় আগামী তিন মাসের মধ্যেই তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। নতুন উচ্চতায় বিমান ॥ বিমান গত চুয়াল্লিশ বছরে কত বার কত টাকা লাভ করেছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান কখনও প্রকাশ করেনি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সেই সরকারের বিমানমন্ত্রীই দাবি করেন, তার আমলে লাভ হয়েছে। লোকসান কমেছে। আগের তুলনায় ভাল হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বিমান কোন কোন সময়ে লাভ করেছে কোন সময়ে কতটা মর্যাদা লাভ করেছে সেটা নিয়েও ছিল বরাবর বিতর্ক। বিমানের ভেতর থেকে সব সময়ই একটা পক্ষ অভিযোগ করেÑ বিমান কখনই লোকসান করে না। লাভের বিমানকে লোকসান দেখানো হয়। দুর্নীতি অপচয় অনিয়ম জালিয়াতিতে সে লাভ ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। তবে বিমানের এ দুর্নাম এখন কিছুটা হলেও দূরীভূত হয়েছে। বিমানের একজন পরিচালক বেশ জোর দিয়েই বলেছেন, বিমান যে ২০১৫ সালে প্রকৃত অর্র্থেই লাভ করেছে তার প্রকৃত প্রমাণ মেলে বর্তমান ব্রিটিশ এমডি কাইল হেউডের লভ্যাংশ দাবিতে। তার চুক্তিতে লেখা রয়েছে, তার আমলে যদি বিমান লাভ হয় তাহলে তাকে লভ্যাংশ দিতে হবে। তার এ দাবি অস্বীকারও করতে পারছে না বিমানের কেউ। জানতে চাইলে বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, চুক্তিতে যদি থাকে তাহলে সেটাতে কোন শর্ত আছে কিনা তা দেখতে হবে। বিমান সদ্য বিদায়ী বছরে লাভ করেছে ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু হজ খাতেই লাভ হয়েছে দুই শত কোটিরও বেশি। বাকিটা সারা বছরের লাভ। এ লাভের মূল কারণ হিসেবে জানতে চাইলে এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ শনিবার রাতে তার বাসভবনে এক আলাপচারিতায় বলেন, গোটা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় এয়ারলাইন্সগুলোর পোয়াবারো। এয়ারলাইন্সের সবচেয়ে বড় খরচের খাতই হচ্ছে জ্বালানি। এটা কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী এ্যাভিয়েশানের খরচ অর্ধেকে নেমে আসে। বিমানেও তাই। তারপরের সবচেয়ে বড় খরচ রক্ষণাবেক্ষণ। বিমানে এতদিন পুরনো ডিসি-১০ ছিল। যাতে অস্বাভাবিক তেল পড়তো। এখন সেগুলো বিমান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বিশ্বসেরা বোয়িং-এর নিউ ব্র্যান্ড জাহাজে এমনিতেই জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে। তারপর রক্ষণাবেক্ষণ খাতেও ব্যয় কমে আসছে। তৃতীয় কারণ হচ্ছে অপচয় ও দুর্নীতির বিরদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি। যে যত প্রভাবশালী হোক না কেন, বড় ধরনের আর্থিক জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া মাত্রই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেটা আগে হতো না। মূলত এসব কারণেই বিমান এখন লাভের ধারায় ফিরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন জোর গলায় গর্বের সঙ্গে বলা যায়Ñ সত্যি সত্যিই বিমান এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ সম্পর্কে বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দীর্ঘ চার দশকের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বৈমানিক শেখ নাসির উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বিমান আজ যে উচ্চতায় ওঠেছে তা একদিনে হয়নি। গত ছয় বছর ধরে এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদের দৃঢ় ঐকান্তিকতায়, ও সাহসী পদক্ষেপের দরুন বিমানের দীর্ঘদিনের জঞ্জাল মুছে নুতন আবরণে লাভের আকাশে উঁকি দিয়েছে। এ বিষয়ে বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক খান মোশাররফ হোসেন বলেন, বিমানের প্রথম বিদেশী ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল বেশকিছু যুগান্তকারী ও দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নেন। যেটা বিগত চার দশকেও দেশীয় কোন এমডি নিতে পারেনি। মূলত কেভিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই চলছে বিমান। অনিয়ম দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স ॥ বিমান গত চার দশকেও ব্যবসা সফল হতে না পারার প্রধান কারণ ছিল দুর্নীতি ও অপচয়। এ অপবাদ ঘুচাতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বছর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে। এতে গত পাঁচ বছরে অযোগ্যতা অদক্ষতা দুর্নীতি ও অপচয়ের অভিযোগে প্রভাবশালী পরিচালক, জিএম ডিজিএম পদমর্যাদার বেশ কয়েক জনকে চাকরিচ্যুত করে। বিদায়ী বছরেও বিমানের এক শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে বরখাস্ত করে ঢাকায় তলব করা হয়। এখন তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া চলছে। জানা যায়, বিমান পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এসএম জাকারিয়ার নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি জেদ্দা অফিস সরেজমিন তদন্ত শেষে এ সব অভিযোগের সত্যতা পায়। এ সম্পর্কে বিমান পর্ষদের এক প্রভাবশালী সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু বড় দুর্নীতি নয়- ছোট দুর্নীতিবাজদেরও রেহাই দেয়া হবে না। যেমন নববষের্র ক্যালেন্ডারের মুদ্রণে বড় ধরনের ভুল ত্রুটি ও অবহেলা করার অভিযোগেও ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেনÑ এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ রেহাই পাবে না। অর্গানোগ্রাম ও সার্ভিস রুল ॥ একটি আধুনিক মর্যাদাবান এয়ারলাইন্স হিসেবে বিমানের জন্য ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে অর্গানোগ্রাম। এতে সাড়ে জনবলের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এখন শুধু সার্ভিস রুল তৈরির জন্য এটা আটকে আছে। এদিকে অর্গানোগ্রাম না হওয়ায় বিমানে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো, বিএফসিসি, এমটি ও কাস্টমার সার্ভিসের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বিমান পর্ষদ সব ধরনের নিয়োগও বন্ধ রেখেছে। একদিকে অর্গানোগ্রামও পাস করা হচ্ছে না। অন্যদিকে লোক নিয়োগও বন্ধ রাখায় বিমানকে বড় ধরনের সঙ্কট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব কারণে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ থেকে কার্গো নেয়া বন্ধ করে দিলেও বিমানের টনক নড়ছে না। এ সব বিষয় জরুরী ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত বলে মনে করেন এ্যাভিয়েশান বিশেষজ্ঞরা।
×