ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকে চাকরি ॥ আবেদন ফি, প্রজ্ঞাপন জারি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

ব্যাংকে চাকরি ॥ আবেদন ফি, প্রজ্ঞাপন জারি

দেশের তফসিলী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে চাকরি আবেদনে কোন প্রকার ফি না নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এ এস এম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি শাখা থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চাকরির আবেদনের সময় পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট করতে শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক ব্যয় ও কষ্টসাধ্য বিষয়। তাই বিষয়টি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দেশে কার্যত সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আবেদনকারীদের কাছে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার চাইতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কোন প্রতিষ্ঠান এমনটি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ও কনজুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ব্যাংক ও আর্থিক খাতের গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন গবর্নর। গ্রাহকদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে নানামুখী সুযোগ সৃষ্ট করা হচ্ছে বলে জানান আতিউর রহমান। তিনি বলেন, গ্রাহকদের দুর্ভোগ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ‘এফআইসিএসডি’ নামের আলাদা একটি বিভাগ খোলা হয়েছে। যেখানে ‘১৬২৩৬’ নম্বরে কল দিয়ে তার সমস্যার কথা জানাতে পারে। কোন ব্যাংক জালিয়াতি, অনিয়ম, আত্মসাত বা নিয়মবহির্ভূত কোন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ কোটি টাকা আদায় করে তা গ্রাহককে ফেরত দিয়েছে। গবর্নর বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জমাপড়া মোট অভিযোগের ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ নিষ্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ২০১৫ সালে নিষ্পন্ন হয়েছে শতভাগ। এখন ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। এর প্রভাবে দেশের রেমিটেন্স ও রিজার্ভ বাড়ছে। ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যা বা অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আলাদা একটি ডেস বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যেখানে ব্যাংক লোন, এলসি খোলাসহ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত সমাধান হচ্ছে। গ্রাহককে তাঁর প্রাপ্য সেবা সম্পর্কে সচেতন করতে ফেসবুক, ওয়েবসাইটসহ নানা মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানান গবর্নর। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর সার্ভিস চার্জ যাতে গোপন না থাকে তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন ব্যাংক যাতে এমনটি না করতে পারে সেদিকে মনিটরিং করছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা সহজ করতে ব্যাংকগুলো ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। কর্মীদের প্রশিক্ষিত করার ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের তিন কোটি মোবাইল গ্রাহক যাতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পায় সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চাকরি প্রত্যাশীদের উদ্দেশে ড. আতিউর বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রত্যাশীদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। সদ্য পড়ালেখা শেষ করে অনেকেই বেকার থাকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনকারীর কাছে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার না চাইতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক গ্রাহকভিত্তিক ভোক্তা সংগঠন এখন সময়ের দাবি। এটি ব্যাংকের দুর্নীতি ও আর্থিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করবে। এ ধরনের খাতভিত্তিক ভোক্তা সংগঠন সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতার মধ্যে সমন্বয় করবে। ব্যাংক সুদ প্রসঙ্গে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংক মালিকরা দ্বৈত ভূমিকা রাখছেন। ব্যবসায়ীদের চেম্বার থেকে সুদের হার কমানোর দাবি করছেন। আবার তারাই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বসে উচ্চ সুদের হার ধার্য করেছেন। আলোচনাসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কনজুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হোসেন প্রমুখ। অর্থনীতি প্রতিবেদক
×