ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোম ও মঙ্গলবার সরকারী কলেজ শিক্ষকদের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি ১১ জানুয়ারি থেকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি ১১ জানুয়ারি থেকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেলে মর্যাদাহানির অভিযোগ এনে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি বাস্তবায়নে আল্টিমেটাম শেষে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে। কোন ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। সান্ধ্যকালীন কোর্স পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এদিকে দাবি পূরণে আগামীকাল ও পরদিন দেশের সকল সরকারী কলেজ ও সংশ্লিষ্ট দফতরে পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)। এর আগে গেল সপ্তাহে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি স্ব স্ব ক্যাম্পাসে একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি বাস্তবায়নে পাঁচ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেছিলেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। হতে পারে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচী।’ শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ দাবি বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর কাছে আমরা প্রতারিত হয়েছি। তিনি শিক্ষক সমাজের সঙ্গে তামাশা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার শিক্ষকরা বৈঠক করে বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ। বৈঠক শেষে ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এস এম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকদের দাবি আদায়ে আগামী ১১ জানুয়ারি দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে। সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরুর আগে ৩ জানুয়ারি শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পরে ক্লাসে যাবেন এবং ৭ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। মাকসুদ কামাল আরও বলেছেন, তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আগামী ১০ জানুয়ারি তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে কালোব্যাজ ধারণ করা হবে না। কর্মসূচী চলাকালে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য ডাকা হলেও কর্মসূচি বন্ধ করা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত গেজেট প্রকাশ করে দাবি পূরণ করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মসূচী চলবে। ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য প্রথম নরম ও অহিংস কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই বলছি। দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকেছে, আর পেছনে ফেরার সময় নেই। অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকরা। এরপর সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই দাবি পর্যালোচনায় কমিটি করে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন। গত ৬ ডিসেম্বর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার ১০ দিন পর বেতন কাঠামোর গেজেটে তার মধ্যে প্রথম দুটির প্রতিফলন ঘটেনি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ। শিক্ষকদের তিনটি দাবির মধ্যে ছিল- অষ্টম বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে এবং এক্ষেত্রে সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কমানো হবে না; জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য সৃষ্টি করা সুপার গ্রেডে সিলেকশন গেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলে অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করা। প্রজ্ঞাপনে প্রথম দুটি দাবির প্রতিফলন না ঘটায় সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করে অষ্টম বেতন কাঠামো সংশোধনের পর আবার গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠিও দিয়েছিল শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এদিকে পে স্কেলে মর্যাদাহানির প্রতিবাদ জানিয়ে আগামীকাল সোমবার ও পরদিন দেশের সকল সরকারী কলেজ ও সংশ্লিষ্ট দফতরে পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন সরকারী কলেজ শিক্ষকরা। সারাদেশে ৩০৫ সরকারী কলেজ, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে এ কর্মসূচী পালিত হবে। অষ্টম বেতন কাঠামোতে সরকারী কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে মন্তব্য করে শিক্ষকরা বেতন বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সাড়ে ১৫ হাজার সদস্যের মর্যাদা ও বেতন সমুন্নত রাখার দাবি শিক্ষকদের। বেতন বৈষম্য রেখে পে স্কেল বাস্তবায়নের খবরে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা শনিবার সর্বাত্মক কর্মসূচীর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়। এটা শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। শিক্ষক নেতারা আরও বলেছেন, সারাদেশে পে স্কেল নিয়ে ব্যাপক আন্দোলনের মধ্যেই বৈষম্য নিরসন কমিটি করা হলো। সকলে আশা করেছিলেন অবশ্যই শিক্ষকদের বৈষম্যের অবসান হবে। কিন্তু তার কোন প্রতিফলন দেখা গেল না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে বলেও হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষকরা। র্শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিকে বিবেচনায় না এনে অধ্যাপক পদের বেতন স্কেল ও গ্রেড অবনমন করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকসহ র্শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরের বেতন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার সদস্য এটি উপভোগ করতে পারছে না। প্রাপ্য মর্যাদায় উন্নীত না করে স্কেল ও পদ অবনমনে শিক্ষকরা মর্মাহত। বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলনে আইডিইবি ॥ অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন বৈষম্য নিরসনে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কর্মসূচীর মধ্যে ৪ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান, ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সকল জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন শেষে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রেরণ করা হবে। ১৮ জানুয়ারি বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করা এবং ২০ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সমীপে পত্র মিছিল করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে বেতন বৈষম্য নিরসনে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন হয় নাই। ফলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এই অসন্তোষ নিরসনে ৬ দফা দাবি দেয়া হয়। দাবি হচ্ছে : ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের প্রারম্ভিক বেতন ক্যাডার এন্ট্রি পদের একধাপ নিচ্ছে অর্থাৎ ৯ম গ্রেডে নির্ধারণ; বেতন বৈষম্য হ্রাসে ক্যাডার নন-ক্যাডার এন্ট্রি পদ একই গ্রেডে নির্ধারণ; উপ-সহকারী প্রকৌশলী/সমমান পদে কর্মরতদের ৪ বছর চাকরি পূর্তিতে ৮ম গ্রেড, ৮ বছর চাকরি পূর্তিতে ৭ম গ্রেড, ১২ বছর চাকরি পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড ও ১৫ বছর চাকরি পূর্তিতে ৫ম গ্রেড স্কেল প্রদান এবং একইভাবে ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের গ্রেড পরিবর্তনের সুযোগ রাখা; ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদোন্নতি সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ৫ বছর চাকরি পূর্তিতে সহকারী প্রকৌশলী/সমমান, ৮ বছর চাকরি পূর্তিতে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী/সমমান, ১৫ বছর চাকরি পূর্তিতে নির্বাহী প্রকৌশলী/সমমান, ২০ বছর চাকরি পূর্তিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী/সমমান ও ২৫ বছর চাকরি পূর্তিতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী/সমমান পদে পদোন্নতির বিধান রাখা এবং শূন্য পদ না থাকলে সুপার নিউমারী পদ সৃষ্টি করে টাইমবার পদোন্নতি প্রদান; প্রযুক্তিগত কর্মকা-ের গুরুত্ব ও ঝুঁকি বিবেচনায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রাথমিক নিযুক্তিতে ডিগ্রী প্রকৌশলীর ন্যায় বর্ধিত বেতন প্রদান; সরকার নিয়ন্ত্রিত সকল বিদ্যুত কোম্পানিসহ বিভিন্ন সংস্থায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য একাধিক গ্রেড প্রথার পরিবর্তে সরকার নির্ধারিত একই বেতন স্কেল মর্যাদা ও পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান এবং এসএসসি (ভোক) শিক্ষকসহ সকল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ৮ম জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় অবিলম্বে আনার দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সংগঠন সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শামসুর রহমান এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সভাপতি এ কে এম এ হামিদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি এ কে এম আব্দুল মোতালেব, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আতিয়ার রহমান, ফজলুর রহমান খান, আবুল বাসার, কামরুজ্জামান, রেহান মিয়া প্রমুখ।
×