ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলাকারীরা চিহ্নিত, কিলিং মিশনে ছিল জেএমবির ইসাবা টিম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলাকারীরা চিহ্নিত, কিলিং মিশনে ছিল জেএমবির ইসাবা টিম

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার শিয়া মসজিদে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেফতার এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী গোষ্ঠী জেএমবি হামলা করেছিল নিজদের ফোকাস ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য। আর জেএমবির বেশিরভাগই জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। হামলা চালায় জেএমবির কিলার গ্রুপ ‘ইসাবা’। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এমন তথ্যই জানিয়েছেন। একই গ্রুপ বগুড়ায় আরও হামলার পরিকল্পনা করলেও পুলিশের তৎপরতার কারণে তা ভেস্তে যায় বলে সূত্র জানায়। ২৬ নবেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমূল ইউনিয়নের শিয়া মসজিদে নামাজের সময় মুসল্লিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে একজন নিহত এবং চারজন গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনার পর পরই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ শুরু করে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিয়া মসজিদে হামলার আগে গ্রেফতার হয়েছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি গ্রুপ। তাদের সূত্র ধরেই পুলিশ এই মামলার কিলার গ্রুপদের শনাক্ত ও রহস্য উন্মোচনে এগিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে সাতজনই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। আর গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন শিয়া মসজিদে হামলার ঘটনায় জড়িত। অন্যরা জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ের ক্যাডার। সূত্র জানায় জেএমবি’র ‘দায়ি’ ও ‘ইসাবা’ টিমের সমন্বয়ে শিয়া মসজিদে হামলা করা হয়। ‘দায়ি’ গ্রুপের দায়িত্ব থাকে সদস্য, অর্থ সংগ্রহ ও পরিকল্পনা এবং ইসাবা গ্রুপের কাজ কিলিং বা কতল মিশন। শিয়া মসজিদে হামলার ২-৩ দিন আগে এক জেএমবি ক্যাডারের বাড়িতে হামলার মূল পরিকল্পনা হয়। ওই বৈঠকে মোট পাঁচজন অংশ নেয়। এর মধ্যে একজন পরে ঘটনাস্থল রেকিসহ কিলিং মিশনে অংশ নেয়। ইসাবা’র তিন সদস্য কিলিং মিশনে ছিল। বৈঠকে অংশ নেয়া পাঁচজনের মধ্যে তিন জনকে ইতোমধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে জেএমবি ক্যাডার ইয়াছিন। পরিকল্পনা বৈঠকে অংশ নেয়া এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার অন্য দু’জন হচ্ছে এমদাদুল হক ও আব্দুল বাছেদ। এখন চলছে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া তিনজনের গ্রুপকে গ্রেফতারের কাজ। সূত্র জানায়, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বগুড়ায় জেএমবিসহ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাংগঠনিক অবস্থা, পরিকল্পনাসহ তাদের ভয়ানক পরিকল্পনার বিষয় জানতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন দ্রুত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ায় জঙ্গীদের একটি পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বগুড়ায় জেএমবি সক্রিয় সদস্য রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন। এদের ১৫-২০ জনের নাম পুলিশের গ্রেফতার তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে আবার ইসাবা টিমের সদস্য রয়েছে অন্তত ৪-৫ জন। জেএমবি’র এক পর্যায়ের ক্যাডারদের সঙ্গে অন্য পর্যায়ের ক্যাডারদের সংযোগ থাকে না। আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে এরা অভিজ্ঞ। শিয়া মসজিদে হামলার সময় জেএমবি’র ইসাবা টিমের সদস্যরা চতুরতা ও সতর্কতার আশ্রয় নেয়। হামলার সময় তারা ওই এলাকায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনি এবং মোবাইল ফোন তাদের সঙ্গেও ছিল না। এ কারণে তাদের শনাক্ত করতে তদন্তকারীদের বেশ বেগ পেতে হয়। এ অঞ্চলে দিনাজপুরে জেএমবি’র এক ক্যাডার বিভিন্ন ধরনের অপারেশনাল নির্দেশনা দিয়ে থাকে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
×