ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেশ কয়েকজন আহত ॥ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ফাঁকা গুলি

অফিস দখল নিয়ে জিয়া-খালেদা জিয়া গ্রুপের সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

অফিস দখল নিয়ে জিয়া-খালেদা জিয়া গ্রুপের সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল নিয়ে বিএনপি (খালেদা জিয়া) ও ‘আসল বিএনপি’ নামে জিয়াপন্থী নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিকেল পৌনে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে যুবদলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হাকিম আরজুকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে সন্ধ্যায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের মদদে টোকাইরা বিএনপি অফিসে হামলা করেছে। রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের প্রকৃত বিএনপি দাবি করে তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানায় ‘আসল বিএনপি’। জানা যায়, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জিয়া গ্রুপের নেতা কামরুল হাসান নাসিমের নেতৃত্বে প্রায় দেড় শ’ নেতাকর্মী হাতে লাঠি ও মাথায় পতাকা বেঁধে পল্টন থানার সামনের এলাকা থেকে ‘জিয়ার সৈনিক এক হও, লড়াই কর’ সেøাগানসহ নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে রওনা দেন। সে সময় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন বিএনপির প্রায় তিন শ’ নেতাকর্মী। পৌনে চারটার দিকে জিয়াপন্থী নেতাকর্মীরা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ভাংচুর শুরু করে। একপর্যায়ে তারা বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। তাদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এ ঘটনায় একজন সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে নয়াপল্টন এলাকা থেকে সরে যান বিএনপির জিয়াপন্থী নেতাকর্মীরা। তবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফের অবস্থান নেন বিএনপি কর্মীরা। সন্ধ্যায় এ ঘটনার প্রতিবাদে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। যুবদলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হাকিম আরজুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর পুরো নয়াপল্টন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উল্লেখ্য, বেশ কয়েক দিন আগেই ‘আসল বিএনপি’র পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তারা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করবে। আর তাদের এ ঘোষণা শুনে বিএনপি নেতাকর্মীরাও সতর্ক পাহারায় থাকে। আর এ জন্যই শনিবার আসল বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে সংগঠিত হয়ে বিএনপি অফিস দখল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। ওই কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আসল বিএনপির চেয়ে বেশি হওয়ায় তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সন্ধ্যায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে গভীর নীলনক্সার অংশ হিসেবে টোকাইদের নিয়ে গঠিত প্রকৃত বিএনপি নামে বিএনপি অফিসে হামলা করানো হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রকৃত বিএনপি নামে দেশে আবার কোন রাজনৈতিক দল আছে? বিএনপি কার্যালয়ে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, টোকাইদের নিয়ে গঠিত ওই রাজনৈতিক দলের আকস্মিক হামলায় বিএনপির ১৪ থেকে ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তিনি এ হামলার ঘটনা তদন্ত দাবি করে দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান। রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারি বিএনপির কর্মসূচী নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে সরকার। তাই এই টোকাইদের দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু এই টোকাইদের নিয়ে গঠিত দল দিয়ে বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে মুছে ফেলা যাবে না। হামলার বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে রিজভী বলেন, আমরা পল্টন থানায় লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহদফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি ও আসাদুল করিম শাহীন। এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসল বিএনপির নেতা কামরুল হাসান নাসিম বলেন, আমি গত এক বছর ধরে বিএনপি পুনর্গঠন নিয়ে কাজ করছি। গেল ২৬ নবেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি জনতার নিম্ন আদালত করেছিলাম। সেখানে দুই রায় পেয়েছিলাম। একটা হচ্ছে- আমাদের দলের গঠনতন্ত্র স্থগিত; আরেকটা হচ্ছে- জনতার উচ্চ আদালত বসবে নয়াপল্টন কার্যালয়ে। তিনি বলেন, আজকে আমাদের কর্মীরা কার্যালয়ে গিয়ে উচ্চ আদালত কবে বসবে সেটার জন্য কথাবার্তা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু তারা যে নাশকতার রাজনীতি বেছে নিয়েছিল আজও তার প্রমাণ করেছে। দেশের পতাকা নিয়ে যাওয়া ছেলেদের মিছিলের ওপর ককটেল চার্জ করেছে। এখানেই খালেদা জিয়া ও কামরুল হাসান নাসিমের পার্থক্য। এ কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দিয়েছে উল্লেখ করে নাসিম বলেন, উচ্চ আদালত বসবে এবং নয়াপল্টনেই বসবে। সেটা অহিংসভাবেই বসবে। আমরা সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেই না।
×