ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী বই নিতে টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

সরকারী বই নিতে টাকা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, নীলফামারী ও কক্সবাজারের টেকনাফ, নওগাঁ ও বাউফলে বিনামূল্যের বই বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় বিনামূল্যের বই নিতে টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। টাকা ছাড়া শিক্ষার্থীদের বই দেয়া হয়নি। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। নারায়ণগঞ্জ ॥ সিদ্ধিরগঞ্জের একটি প্রাইমারী স্কুলে বিনামূল্যের বই বিতরণকালে স্কুলটির শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দু’ শ’ টাকা করে আদায় করছিল স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ। এ সময় প্রতিবাদ করায় পর্ষদের এক সদস্য কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে। বই না পেয়ে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থী কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে বের হয়। পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভের মুখে কিছু শিক্ষার্থীর আদায়কৃত অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হয় পরিচালনা পর্ষদ। অভিভাবকরা জানান, শনিবার সকাল থেকে ৮৯নং তাঁতখানা সরকারী প্রাইমারী বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও নতুন বই দেয়ার নামে দু’ শ’ টাকা করে হাতিয়ে নেয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের বই না দিয়ে জোর করে স্কুল থেকে বের করে দেয় তারা। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রইসউদ্দিন সাংবাদিকের জানান, সরকারের নিয়ম মেনে শুক্রবার থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করছি। তাহলে কেন এ টাকা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ভাল জানেন। পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা এমএ বারি জানান, আমি গাজী সেলিমকে বার বার টাকা নিতে নিষেধ করেছিলাম। সে অতি উৎসাহী হয়ে ভর্তি ফি’র জন্য বই দেয়ার সময় টাকাটা নিয়েছিল। পরে অভিযোগ পাওয়ার পর সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। নীলফামারী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনামূল্যে বিতরণের জন্য আমাদের পাঠ্যপুস্তক দিয়ে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমাদের স্কুলের হেডস্যার টাকা ছাড়া বই দেয় না। শনিবার এমন অভিযোগ তুলেছে জলঢাকার গোলমু-া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। টাকা দিতে না পারায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বই ছাড়া খালিহাতে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়। প্রতিষ্ঠানটির ৭ম হতে ৮ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম, আব্দুর রহমান ও ৭ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ তানজিনা জানান, ‘আমরা নতুন বইয়ের জন্য স্কুলে গেলে হেডস্যার ২৫০ টাকা করে চেয়েছে। তা নাহলে আমাদের বই দিবে না। তাই আমাদের খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।’ কক্সবাজার ॥ টেকনাফে হোয়াইক্যং মহেশখালীয়াপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের এক শ’ টাকা করে দিয়ে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত বই নিতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় টেকনাফ পশ্চিম মহেশখালীয়াপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলের বই বিতরণ উৎসবে শিক্ষার্থী মোঃ আলম, আরাফাত, রিদুওয়ান ও সবুজ জানায়, আক্তার স্যার নতুন বইয়ের জন্য এক শ’ টাকা করে আমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন। ২য় শ্রেণী পড়ুয়া মনিরা আক্তারের পিতা ফেরদৌস বলেন, নতুন বইয়ের জন্য ১শ’ টাকা হারে নিয়েছে। ৫ম শ্রেণী পড়ুয়া রিয়া মনি ও আমিয়া আক্তারের পিতা শামসুল আলম বলেন, তার দুই মেয়ের বইয়ের জন্য শিক্ষকরা ২শ’ টাকা নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং উপরোক্ত নামের কোন অভিভাবক ওই স্কুলে নেই বলে জানান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার ধর বলেন, বইয়ের জন্য টাকা নিয়ে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নওগাঁ ॥ মান্দায় ও রানীনগরে বিনামূল্যের পাঠ্যবই দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীকে বই দেয়া হয়নি। মান্দা এসসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবং রানীনগর উপজেলার বড়খোল উচ্চ বিদ্যালয় ও ত্রিমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বই বিতরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা। বাউফল ॥ বাউফলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের সরকারের বিনামূল্যের বই টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। জানা গেছে, নতুন বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন বাউফলের ৬১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারী বই বিতরণের দিন ধার্য করা হয়। সে অনুসারে শিক্ষার্থীরা ওই দুই দিন নিজ বিদ্যালয়ে বই আনতে গেলে তাদের কাছে ২০০ টাকা করে দাবি করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন। এ খবর পাওয়ার পর কিছু কিছু অভিভাবক টাকা দিয়ে তাদের সন্তানদের বই ছাড়িয়ে নেন। কেশবপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি হাবিব মেম্বর জানান, বাজেমহল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ ও ৯ম শ্রেণীতে ফারজানা ও হামিদা নামে তার দুই মেয়ে পড়ে। টাকা দিতে না পারায় তাদের বই না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। একই স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র রিক্সাচালক মজিবরের ছেলে জিহাদ, কৃষক লিটন সিকদারের ছেলে নাঈম, রাশেদুলের ছেলে জাহিদ, হাসান মিয়ার ছেলে রাকিব ও মোয়াজ্জেম সিকদারের ছেলে ৮ম শ্রেণীর ছাত্র এনাম টাকার জন্য বই পায়নি বলে তাদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন। কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী থেকে ৫২০ টাকা হারে ভর্তি ফি ও বই আনার খরচ নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
×