ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্লগার হত্যার রায়

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

ব্লগার হত্যার রায়

বিদায়ী বছর ২০১৫ সালের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল ব্লগার তথা তরুণ মুক্তচিন্তকদের ওপর বর্বর জঙ্গী আক্রমণ। জঙ্গীরা একের পর এক হত্যাকা- ঘটিয়েছে। সন্দেহভাজন ক’জনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বিশেষ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এতে সমাজে কিছুটা হতাশা সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে বছর শেষে দেশের ব্লগার হত্যা মামলার প্রথম রায় ঘোষণার বিষয়টি মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক। ব্লগার রাজীব হত্যা সংঘটিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী দু’জনকে মৃত্যুদ- ও হত্যাকা-ে জড়িত অপর পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। ব্লগার হত্যাকা-ের রায় ঘোষণা দেশে আইনের শাসনের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রায়ের পর্যবেক্ষণে যেসব কথা উঠে এসেছে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য অনুসরণীয়। হত্যা মামলার মতো একটি মামলার যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য-প্রমাণ ও নথি আদালতে উপস্থাপন বিশেষ জরুরী। এক্ষেত্রে কোন রকম দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিহত ব্লগার রাজীবের পিতা এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারেননি। তিনি খোলাখুলি বলেছেন, এই হত্যা মামলার পাঁচজন আসামি আত্মস্বীকৃত খুনী। অথচ তাদের সবার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হয়নি। মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। সেটি হলো- সামান্য কারণে মানুষ খুন করার বিষয়টি। এটা আদালতকে ভাবিয়ে তুলেছে। বর্তমানে কিছু যুবক বিপথগামী হচ্ছে, সে ব্যাপারেও আদালতের ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে। বলা বাহুল্য, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের মানুষ এটাই চায়। এর মাধ্যমে নীরবে গোটা সমাজে স্বস্তিবোধ ফিরে আসে। সরকারের প্রতিও মানুষের আস্থা বাড়ে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালকে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সুবর্ণকাল হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। সরকার সব হত্যাকাণ্ডকে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। আইন ও বিচার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণ এখন আস্থাশীল। সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় ও কার্যকর থাকা জরুরী সেগুলো বর্তমানে তাৎপর্যপূর্ণভাবে কর্মক্ষম। এর ফলে অন্যায় ও অপকর্ম করে পার পাওয়া যাচ্ছে না, অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে, সাধারণ মানুষ বিচার পাচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে। এতে সমাজে অপরাধ হ্রাসের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশের মর্যাদা যে বাড়ছে তাতে কোন সংশয় নেই। আমরা আগেও বলেছি, মুক্তচিন্তার বিপক্ষ শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। মুক্তচিন্তার মানুষগুলো একের পর এক আক্রমণের শিকার হয়ে চলেছে। তাদের নানাভাবে অপদস্থ ও বিপদগ্রস্ত করে রেখেই ক্ষান্ত হয়নি মুক্তচিন্তার বিপক্ষ শক্তি, তারা মেতেছে হত্যাযজ্ঞে। আমরা স্মরণ করতে পারি একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরে মুক্তচিন্তার মানুষগুলোকে হত্যার মূল অভিপ্রায়কে। আজকে যারা মুক্তচিন্তক ও মুক্তচিন্তার পক্ষের মানুষগুলোকে অপমান করছে, হত্যার হুমকি দিচ্ছে তারা কোনভাবেই মানবতাবাদ, সমাজের সুস্থতা ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অনুসারী হতে পারে না। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ আজ সময়ের দাবি। ব্লগার রাজীব হত্যার রায় হয়েছে। দেশবাসী আশা করে সব ব্লগার হত্যাকা-েরই বিচার সম্পন্ন হবে।
×