ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২ জানুয়ারি ২০১৬

আজ কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ এক লেখক শওকত ওসমান। কলমের শাণিত শক্তিতে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে করেছেন সোচ্চার উচ্চারণের সঙ্গে বলেছেন অসাম্প্রদায়িকতা ও সম্প্রীতির কথা। গল্প-উপন্যাস, নাটক, কবিতা কিংবা নিবন্ধের আশ্রয়ে চেয়েছেন সমাজের সংস্কার। মুক্তচিন্তার সমাজ বিনির্মাণে সাহিত্যকে বেছে নিয়েছিলেন হাতিয়ার হিসেবে। এই সমাজমনস্ক সব্যসাচী লেখকের সাহিত্য রচনায় বিষয় হিসেবে বারংবার উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আজ শনিবার বরেণ্য এ কথাশিল্পী ও সমাজচিন্তকের শততম জন্মদিন ও ৯৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯১৭ সলের ২ জানুয়ারি তিনি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার খানকুল থানার সবলসিংহপুর গ্রামে জন্ম নেন। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নানা আয়োজনে শ্রদ্ধা-ভালবাসায় স্মরণ করা হবে এ লেখককে । আজ বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার সেমিনার কক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করেছে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ। স্মরণানুষ্ঠানে শওকত ওসমানের সাহিত্যকর্ম, জীবন ও সৃষ্টি সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নেবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী ও কবি নাসির আহমেদ। পিতৃস্মৃতিচারণ করবেন কথাশিল্পীর ছেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। সভাপতিত্ব করবেন ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক আহমদ রফিক। এছাড়াও কথাশিল্পীর জন্মদিনে সকাল ১১টায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ। প্রবন্ধ পাঠ করবেন গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. আবুল আজাদ। আলোচনা করবেন বিশিষ্ট নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করবেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম আজিজুর রহমান আজিজ। বাংলা কথাসাহিত্যে শওকত ওসমান বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালীদের একজন। মূলত গল্প ও উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকের মনে বোধ সৃষ্টির পাশাপাশি সমৃদ্ধ করেছেন এদেশের সাহিত্য ভুবনকে। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদবিরোধী এ মানুষটি আজন্ম শোষকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। লেখনীর মাধ্যমে বলেছেন শোষিতের কথা। শুধু তাই নয়, আজীবন সংগ্রাম করেছেন দেশদ্রোহী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে। তার রচিত উপন্যাস ক্রীতদাসের হাসি আজও যে কোন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে জনজাগরণের দিশারী। তার বহুল আলোচিত ও সমাদৃত জননী উপন্যাসটি ইংরেজী ভাষায় অনূদিত হয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্বসাহিত্যে। শওকত ওসমান প্রধানত ঔপন্যাসিক ও গল্পকার হিসেবে খ্যাতি কুড়ান। তবে এর বাইরেও প্রবন্ধ, নাটক, রম্য রচনা, স্মৃতিকথা ও শিশুতোষ গ্রন্থ রচনায়ও রেখেছেন মুনশিয়ানার ছাপ। অনুবাদেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য উপন্যাস, গল্প ও নাটক অনুবাদ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোÑ জননী, ক্রীতদাসের হাসি, সমাগম, চৌরসন্ধি, রাজা উপাখ্যান, জাহান্নাম হইতে বিদায়, রাজপুরুষ, নেকড়ে অরণ্য, আর্তনাদ ইত্যাদি। গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প, মনিব ও তাহার কুকুর, ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভৃতি। লিখেছেন স্মৃতিকথা। এগুলো হলোÑ স্বজন সংগ্রাম, কালরাত্রির খ-চিত্র, অনেক কথন, গুডবাই জাস্টিস-মাসুদ, উত্তর পূর্ব ও মুজিব নগর। নাটকের মধ্যে রয়েছে আমলার মামলা ও পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ব্যাপকভাবে পাঠক সমাদৃত শেখের সম্বরা। সৃষ্টিশীলতার নেশায় সব সময় নিজেকে বিভোর রেখেছিলেন শওকত ওসমান। সাহিত্যকর্মে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরমেন্স পদক, নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক, মুক্তধারা পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯১৭ সলের ২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় জন্ম নেন শওকত ওসমান। পারিবারিকভাবে শেখ আজিজুর রহমান নাম রাখা হলেও পরবর্তীতে সাহিত্য ভুবনে শওকত ওসমান নামে পরিচিত হন। বাবা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ও মা গুলজান বেগম। ১৯৩৮ সালে সালেহা খাতুনকে বিয়ে করেন। তার পাঁচ ছেলেÑ বুলবন ওসমান, আশফাক ওসমান, ইয়াফেস ওসমান, তুরহান ওসমান (প্রয়াত), জাঁ-নেসার ওসমান ও এক মেয়ে আনফিসা আসগর। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের প্রভাষক ও ঢাকা কলেজে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত কথিকা পাঠ করেছেন। ১৯৮৮ সালের ১৪ মে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন শওকত ওসমান। জীবন ও মৃত্যুর মাঝের দীর্ঘ সময় বিচরণ করেছেন সাহিত্য আঙিনায়। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্য ভা-ারকে।
×