ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘চ্যাম্পিয়ন হতে চাই, তবে...’

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২ জানুয়ারি ২০১৬

‘চ্যাম্পিয়ন হতে চাই, তবে...’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা।’-কথাগুলো গিরিশ চন্দ্র ভোষের। এ কথাগুলোই খুব দুঃখ করে বললেন বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিসিএল) প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন দল ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক উদয় হাকিম। এবার চতুর্থ আসরেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা আছে দলটির। তবে সেই আশা মিটবে; যদি পাওয়া যায় চাহিদামতো দল। ওয়ালটন গ্রুপের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম আক্ষেপ করেই তাই বললেন, ‘প্রথম আসরে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। পরের আসরগুলোতে ভাল রেজাল্ট করতে পারেনি আমাদের দল। এর কারণ হল, এই যে জোনটা ভাগ করা হয়েছে, নর্থ, সাউথ, সেন্ট্রাল, ইস্ট-চারটি; দেখা গেছে যে প্রথমবারের পর থেকেই এক জোনের খেলোয়াড় আরেক জোনে চলে যাচ্ছে। যে কারণে আমাদের দল হয়ে যাচ্ছে দুর্বল। অন্য জোনগুলো হয়ে যাচ্ছে সবল।’ সঙ্গে যোগ করেন ‘গত আসরে যেমন আমাদের দলে একজনও ভাল মানের পেসার ছিল না। ভাল খেলার মতো যোগ্য একজনও ফাস্ট বোলার ছিল না। এবার আবু হায়দার রনি ছিল। কিন্তু লংগারভার্সনে কখনও ভাল করেনি, বিপিএলে এবার ভাল করেছে। রনিও চলে গেল জাতীয় দলের ক্যাম্পে। আমরা বিসিবিকে একটি চিঠি দিয়েছি বুধবার। ২৭ তারিখে বিসিবির সঙ্গে একটি মিটিং হয়েছে। বলেছি, প্রত্যেক জোনের ক্ষেত্রে একটি নিয়ম থাকা উচিত, জোনের খেলোয়াড় ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে না চাইলে অন্য জোনে খেলতে পারবে। তারপরও দেখা যাচ্ছে আমাদের ভাল ভাল খেলোয়াড় অন্য জোনে চলে যাচ্ছে। অন্য জোনের কোন খেলোয়াড় আমাদের দেয়া হয় না। আমাদের যে কোন ফাস্ট বোলারও নেই এটা নিয়েও কারও মাথাব্যথা নেই।’ এরপরও কেন বিসিএলে আছে ওয়ালটন? উদয় হাকিম বললেন, ‘বিসিবি ও আমরা (ওয়ালটন) প্রায় বন্ধুর মতই। ঘরোয়া যে টুর্নামেন্টগুলো হয় প্রায় সবগুলোর স্পন্সরই ওয়ালটন। আমরা চাই না যে বিসিবির সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা কোনভাবে নষ্ট হোক। কিন্তু এরপরও বলতে হয়, বিসিএল যে গতি নিয়ে শুরু হয়েছিল, সেটা আর নাই। আহম মোস্তফা কামাল (সাবেক আইসিসি ও বিসিবি সভাপতি) যখন বিসিবির সভাপতি ছিলেন তার উদ্যোগে এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল। তার ভিশন ছিল। রঞ্জি ট্রফির আদলে ওই মানের টুর্নামেন্ট হবে। প্রথমবার একটা স্ট্যান্ডার্ডও ছিল। কিন্তু তারপর থেকেই সেই স্ট্যান্ডার্ডে নেই। পেশাদারিত্ব যেন নেই, এনসিএলের মত পিকনিক ক্রিকেট হয়ে গেছে যেন।, সঙ্গে যোগ করেন ‘এই যে নেই এর কারণ, এরজন্য নির্দিষ্ট একটা কেলেন্ডার থাকা উচিত। যে সময়ে খেলা হবে, তা আগেই জানা থাকলে ভাল। সেটি নেই। যখন বিরতি পাচ্ছে বিসিবি, তখনই বিসিএল সেরে ফেলতে চাচ্ছে। কখনও ওয়ানডে করছে। কখনও লংগারভার্সন হচ্ছে। আমাদের বলে আসেন মিটিং করি। প্রস্তুত হয়ে নেন। আমরা বলি এ সময় খেলতে পারছি না। বলা হয়, নাহলে বিসিএলই এ বছর হবে না। আর এমন সময় বিসিএল করা হয় জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের পাওয়া যায় না। আবার খেলা সরাসরি দেখানোর কথা ছিল। এখন পর্যন্ত তা হয়নি। আমাদের ধারণা দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ দলের পাইপলাইন তৈরির জন্য এ লীগ করা হচ্ছে। আসল ক্রিকেট যেহেতু লংগারভার্সনই, আমরাও চেয়েছিলাম এটাকেই গুরুত্ব দেই।’ যখনই ঘরোয়া কোন টুর্নামেন্টে বিসিবি স্পন্সর সঙ্কটে পড়েছে তখনই ওয়ালটন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। যত সমস্যাই হোক, ক্রিকেটের পাশে থাকার, সঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞাও আছে প্রতিষ্ঠানটির। উদয় যেমন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে, ক্রিকেটের স্বার্থে সবসময়ই থাকতে চায় ওয়ালটন। যে কোন নতুন আইডিয়া, ক্রিকেট নিয়ে বোর্ডের আরও কোন ভাল চিন্তা থাকলে থাকতে রাজি আছি সবসময়। সবার টার্গেট থাকে ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট নিয়ে। কিছু কাভারেজ নিবে শেষ। কিন্তু ওয়ালটন ঘরোয়া লীগে রেগুলার করে যাচ্ছে। এটা করার কারণ ক্রিকেটের উন্নয়নে ওয়ালটন সবসময় আছে। স্বাধীনতা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। দ্বিতীয় অর্জন আমাদের ক্রিকেট। খেলাধুলার প্রতি দুর্বলতা আছে। এখন যে যুবসমাজ ভিন্নদিকে চলে যাচ্ছে। নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। বিপথে চলে যাচ্ছে। স্পোর্টসের সঙ্গে থাকলে পড়াশুনা আর স্পোর্টসে থাকবে।’ উদয় হাকিমের সঙ্গে ওয়ালটনের এ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর মিলটন আহমেদও বললেন, ‘স্পোর্টসের মাধ্যমে দেশকে ব্র্যান্ডিং করার যে সুযোগ আছে, অন্য কোন মাধ্যমে নেই। তাই ওয়ালটন স্পোর্টসের সবক্ষেত্রে আছে। বিদেশী ক্রিকেট দলকেও স্পন্সর করছে। যা প্রথম কোন বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান করেছে।’ বিসিএল শুরু হবে ১০ জানুয়ারি। রাজশাহী ও বগুড়াতে খেলা হবে। আছে আর ৮ দিন। এখন পর্যন্ত কোন দলই প্রস্তুতি নিতে পারছে না। খেলোয়াড় তালিকাই যে হাতে আসেনি। তাই জানালেন দলের পেছনে প্রতিবছর দেড় কোটি টাকা করে খরচ করা ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক, ‘এখন পর্যন্ত কোন প্রস্তুতি নেই। এখনও খেলোয়াড়ই পাইনি। এখন পর্যন্ত আমাদের তালিকাই চূড়ান্ত হয়নি। কোন খেলোয়াড়কে পাচ্ছি, পাচ্ছি না; সেটাই জানি না। খেলা ১০ জানুয়ারি শুরু। উনারা (বিসিবি) খেলোয়াড় তালিকা দেন, আমরা পরে বেছে নেই। সেটাই হচ্ছে না এখনও। সাদমান অনিক আছে। সে আমাদের জোনের ভাল খেলোয়াড়। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আছে। লংগারভার্সনের জন্য খুবই ভাল খেলোয়াড়। মেহেদী মারুফ আছে। তাদের দেয়া হবে কিনা জানি না।’ বাংলাদেশ দল ২০১৫ সালে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। সেই সাফল্যে মহাখুশি ওয়ালটনও। উদয় হাকিম বলেছেন, ‘২০১৫ সাল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটা অভাবনীয় সুখের সময় গেছে। আশাকরি, নতুন বছর ২০১৬ সালটাও আরও ভাল হোক।’ বিসিএলে ভাল’র প্রত্যাশায় আছে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলও।
×