ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তম চক্রবর্তী

শুরুতে সন্ত্রাস শান্তিতে সমাপ্তি

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ১ জানুয়ারি ২০১৬

শুরুতে সন্ত্রাস শান্তিতে সমাপ্তি

ভয়াল-বিভীষিকাময় অগ্নিসন্ত্রাস আর প্রতিহিংসার দ্রোহে শুরু, পরে আত্মসমর্পণ, স্বস্তি আর কলঙ্কমোচনে শেষ। বিদায়ী বছর ২০১৫ কেমন গেল? এ প্রশ্নের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পুরো বছরের রাজনীতিকে এমননিভাবে এক কথায় তুলে ধরেছেন বিশ্লেষকরা। যে দ্রোহের আগুন আর শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি নিয়ে বছরটি শুরু হয়েছিল, শত ষড়যন্ত্রের কুহেলিকা ছিন্ন করে আক্রান্ত দিশাহারা-বিভ্রান্ত মানুষকে সেই ভয়াল সহিংসতার হাত থেকে মুক্তির স্বাদ এবং বাংলাদেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির মিছিলে শামিল করতে সক্ষম হয়েছিল বর্তমান সরকার। তাই প্রথম তিনটি মাস ছাড়া, বাকি সময়ে মোটামুটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ রেখেই বিদায় নিল আলোচিত একটি বছর, ২০১৫ সাল। বিগত বছরগুলোর মতো বিদায়ী বছরেও রাজনীতির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। সরকার পতনের ‘অলীক স্বপ্নে’ যে প্রতিহিংসার দ্রোহের আগুন দিয়ে দেশবাসীকে পুড়িয়ে হত্যার মাধ্যমে বছরটা শুরু করেছিল বিএনপি-জামায়াত, মাত্র তিন মাসেই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়েছে। এরপর বাকি ৯টি মাস স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উন্নয়নের মহাসড়কে দেশের যাত্রা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দেশকে কলঙ্কমোচন আর জনমনে স্বস্তি দিয়েই কালের গর্ভের হারিয়ে গেছে ২০১৫ সাল। তবে বছরের শেষ পর্যায়ে বিভিন্নস্থানে পুনরায় জঙ্গীদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা, মসজিদ-মন্দিরে বোমা হামলা, বিদেশী নাগরিক হত্যা এবং সর্বশেষ রাজশাহীর বাঘমারাতে শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় জনমনে কিছুটা হলেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনির্দিষ্টকালের অবরোধের কর্মসূচীর মধ্যে ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করার অলীক স্বপ্ন নিয়ে প্রচ- দ্রোহে বছর শুরু করা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই বছর শেষ করেছে। কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত ‘অপরিণামদর্শী’ কর্মসূচী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চালানোর ঘোষণা দিয়ে কোন অর্জন ছাড়াই মাঝপথে ঘরে ফিরেছেন খালেদা জিয়া। বছরের বাকি ৯টি মাস ক্ষমতা ও জাতীয় সংসদের বাইরে থেকে নিদারুণ যন্ত্রণা নিয়েই তাদের পার করতে হয়েছে। অন্যদিকে বছরের শেষে- ‘সেই নির্বাচন কমিশন’, ‘সেই প্রধানমন্ত্রীর’ অধীনে নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের লড়াই মেনে নিয়ে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন বিএনপিপ্রধান। তবে কেউ কেউ আবার বিষয়টিকে আত্মসমর্পণ হিসেবে না দেখে আত্মোপলব্ধি হিসেবে দেখছেন। এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বিএনপি আবার মূলধারার রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পেল- এমনটিই মনে করছেন তারা। ঠিক এক বছর আগে যে চরম অনিশ্চয়তা নিয়ে বিদায়ী ২০১৫ সালটি শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতে মোটামুটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণই ছিল দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ। নির্বাচনে না এসে দু’কূল হারানো খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজনৈতিক পরাজয় স্বীকার করে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণের পর বাকি সময়ে মাথা তুলেই দাঁড়াতে পারেনি। বরং অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখোমুখি পড়েছে জোটটি। বিএনপি-জামায়াত ভেবেছিল, নির্বাচন হলেও তাদের সহিংস আন্দোলনের মুখে বিজয়ী সরকার একমাসও টিকতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। বরং তাদের আগুনসন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে দেশের জনগণ। জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে কোন উপস্থিতিই দেখা যায়নি। যেভাবে শুরু বছরটা নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে আগেই বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু ষড়যন্ত্রের অনেকটাই সরকারের কাছে ফাঁস হয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখতে পারেনি তারা। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন ঢাকায় বড় ধরনের গণসমাবেশের আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া। কিন্তু দু’দিন আগে ৩ জানুয়ারি রাত দশটার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হয়নি কোন মহলেরই। আগেই গোয়েন্দা মাধ্যমে নয়াপল্টনের অফিসে খালেদা জিয়ার অবস্থানের কথাটি জেনে যাওয়ায় তাঁকে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েই আটকে দেয়া হয়। তার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই একটি খোলা পিক-আপ ভ্যানে আঁটসাঁট করে বাঁধা লেপ-তোশক, বালিশ, জাজিম, ম্যাট্রেস ও বিপুল পরিমাণ শুকনো খাবার নেয়া হয় গুলশানের কার্যালয়ে। তখন বুঝতে কারোর বাকি রইল না, গুলশানের অফিসে দীর্ঘ সময় অবস্থানের প্রস্তুতি নিয়েছেন খালেদা জিয়া। গুলশানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া প্রায় ৬০ নেতাকর্মীকে নিয়ে ৫ জানুয়ারি গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু হার্ডলাইনে থাকা সরকার তাঁকে রাস্তায় বের হতে দেয়নি। পরে পুলিশের ব্যারিকেড তুলে দিয়ে তাঁকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ দিলেও তিনি কার্যালয় থেকে বের হতে অস্বীকৃতি জানান। কিছুক্ষণ পরেই আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন তিনি। ঘোষণা দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচী চলবে, তিনিও অবস্থান করবেন গুলশানের কার্যালয়ে। শুরু হলো অবরোধের নামে নজিরবিহীন নাশকতা, সহিংসতা ও অগ্নিসন্ত্রাস। শত শত নিরীহ মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে পুড়িয়ে হত্যার মহোৎসবে মেতে উঠে বিএনপি-জামায়াতের সমস্ত সন্ত্রাসীরা। এরই মধ্যে গুজব ছড়ানো হলো, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির চেয়ারম্যান অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন। সাত মার্কিন কংগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত সরকারবিরোধী একটি যুক্তবিবৃতিও প্রচার করা হলো বিএনপির তরফে। পরে জানা গেল, অমিত শাহ ফোনই দেননি। আর সাত মার্কিন কংগ্রেসম্যানও কোন বিবৃতি দেননি। দুটো ঘটনাই ছিল বিএনপির নির্জলা মিথ্যাচার। টানা অবরোধ ও নজিরবিহীন নাশকতার মধ্যে ২৪ জানুয়ারি খবর এলো খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছেন। ছোট ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না দিতে ওইদিন সন্ধ্যায় গুলশানের কার্যালয়ে ছুটে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে না দিয়ে অনেকটা অপমান করেই ফেরত পাঠান খালেদা জিয়া। রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সবশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে গিয়ে ছেলের বাসায় টানা দুই মাস অবস্থান করেন তিনি। টানা দুই মাস ৬ দিন লন্ডনে অবস্থানের পর ২১ নবেম্বর দেশে ফিরে এসে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনেই দলীয় প্রতীকের পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের ষোলোকলা পূর্ণ করেন খালেদা জিয়া। বিষয়টিকে ‘দ্রোহে শুরু, আত্মসমর্পণে শেষ’ হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বস্তি-উন্নয়ন দিলেও সুখে ছিল না আওয়ামী লীগ বছর ধরেই রাজনীতির লাটিমের সুতো শেখ হাসিনার হাতে থাকলেও মাঝে মধ্যে বেশকিছু ঘটনা সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে। শক্তহাতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ৯২ দিনব্যাপী ভয়াল নাশকতা মোকাবেলা করে দেশের মানুষকে স্বস্তি এনে দিলেও বছরের শেষ দিকে এসে একের পর এক ব্লগারদের হত্যা, দুই বিদেশী নাগরিককে হত্যা, ইমামবাড়ায় শিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা, দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দিরে গুলি-বোমা হামলা এবং ১০ ডিসেম্বর কাহারালোই ইসকন মন্দিরে পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় সরকারের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। এসব ঘটনায় বছরের শেষ পর্যায়ে এসে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা আর বিশ্বের বড় বড় কয়েকটি দেশ কর্তৃক তাদের নাগরিকদের এদেশে চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ঘটনা সরকারের বিপুল অর্জনকে প্রশ্নের মুখোমুখি করতে সক্ষম হয় ষড়যন্ত্রকারীরা। তবে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সরকার হার্ডলাইনে থেকে এসব গুপ্তহত্যা ও চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করে যাচ্ছে। বছরের শেষ প্রান্তে এসে ঢাকার মিরপুরে একটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গী জেএমবির ৭ সন্ত্রাসীসহ বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বিদায়ী বছরে শাসক দল আওয়ামী লীগের বড় সাফল্যে হচ্ছে দেশী-বিদেশী সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা। বিদায়ী বছরে তিনজন শীর্ষ একাত্তরের ঘাতক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে বাংলাদেশে। এপ্রিল মাসে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের। নবেম্বর মাসে একযোগে কার্যকর করা হয় জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেকমন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ-। তবে এ তিন মৃত্যুদ- কার্যকর নিয়ে সরকারকে দেশী-বিদেশী নানা চাপ মোকাবেলা করতে হয়। মৃত্যুদ- কার্যকরের পর পরাজিত পাকিস্তান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা চালানোর দায়ী অস্বীকার করলে সরকার তার কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানায়। দেশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্পর্ক ছিন্নের প্রবল দাবিও উঠেছে। সবশেষে বছরের শেষ প্রান্তে এসে পাকিস্তানের সঙ্গে কণ্ঠমিলিয়ে একাত্তরের শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রশ্ন তোলার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়ের সৃষ্টি করে। আইন করে শহীদদের অবমাননা রোধের প্রচ- দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে সরকার নতুন একটি আইন তৈরির পথেই হাঁটছে। এতকিছুর পরও রাজনৈতিক দল হিসেবে বিদায়ী বছরে খুব একটা স্বস্তিতে ছিল না আওয়ামী লীগ। শুধুমাত্র দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল-সংঘাত আর গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জ্যেষ্ঠ নেতাদের লাগামহীন বেফাঁস মন্তব্যের কারণে বিদায়ী বছরের বিভিন্ন সময় চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে দলটিকে। ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকা- আর দলীয় কোন্দল সামাল দিতে না পারার ব্যর্থতায় সরকারের বিপুল অনেক অর্জনই যেন ম্লান করে দিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তে পৌরসভা নির্বাচনেও শুধুমাত্র দলীয় শৃঙ্খলার অভাবে অর্ধ শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বিপুলসংখ্যেক পৌরসভায় সুনিশ্চিত বিজয় হাতছাড়া হওয়ার দশা হয়েছে। ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ অবস্থা জাতীয় পার্টির ২০১৪ সালটি ছিল জাতীয় পার্টির সব পাওয়ার বছর। আর বিদায়ী ২০১৫ সাল দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিরোধী দলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টির অবস্থা হয়েছে ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ প্রবাদের মতোই। এ বছরটিতে এই দলটির নেতারা ক্ষণে ক্ষণে ভোল-পাল্টানোর রাজনীতিতে যুক্ত ছিল। নির্বাচন বর্জনের বিএনপির ভুলের মাশুল জাতীয় পার্টিকে সরকার ও বিরোধী দলে একসঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ এনে দিলেও তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। জাতীয় পার্টির কা-ারি কে- রওশন নাকি এরশাদ? এমন প্রশ্নে বছরজুড়েই বিভক্ত থেকেছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। আর স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বের কারণেই বিদায়ী বছরেও বিরোধী দলের উপনেতা নির্বাচন করতে পারেনি দলটি। সংসদের ভেতরে-বাইরে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ সরকারের ভাল কাজগুলোর প্রশংসা করলেও দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ তাঁর দ্বৈত রাজনীতির চরিত্র বদলাতে পারেননি বিদায়ী বছরেও। আর এসব কারণেই দিন দিন জনপ্রিয়তা হারাতে বসেছে দলটি। লাঙ্গলের দুর্গ বলে খ্যাত বৃহত্তর রংপুরেও এরশাদের জনপ্রিয়তা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এমনকি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের অনেক পৌরসভাতেই মেয়র পদে প্রার্থী দিতেই ব্যর্থ হয়েছে দলটি। এরশাদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি সরকারবিরোধী এবং রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন অংশটি সরকারের পক্ষে সভা-সমাবেশ, কর্মিসভায় বক্তব্যে দিয়েছেন। ফলে বছরজুড়েই কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির শিবিরে গড়ে ওঠা দ্বন্দ্ব-বিভাজন গত এক বছরেও শেষ হয়নি। খাদের কিনারে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত বিদায়ী বছরটি শুরুই হয়েছিল জামায়াত-শিবিরের ভয়াল তা-ব-সহিংসতা ও মানুষকে নিষ্ঠুর কায়দায় পুড়িয়ে হত্যার মধ্য দিয়েই। মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে, বাসে অগ্নিবোমা নিক্ষেপ করে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে একাত্তরের ঘাতক দলটির উল্লাস নৃত্যও দেখেছে বিশ্ববাসী। কিন্তু টানা ৯৩ দিনের ভয়াল নাশকতা চালানোর পর অবশেষে রণেভঙ্গ দেয়া সেই জামায়াত-শিবির এখন অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখোমুখি। বিদায়ী বছরের প্রথম তিন মাস ছাড়া বাকি সময়ে আন্দোরন করার তো দূরের কথা, প্রকাশ্য রাজপথে দাঁড়াতে পারেনি দলটির নেতাকর্মীরা। বছর ধরেই আত্মগোপনে থেকে দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র করলেও সরকারের কঠোরতার সামনে টিকে থাকতে পারেনি দলটি। বরং বছরজুড়েই দেশব্যাপী জামায়াত নিষিদ্ধের দাবির মুখে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন হওয়ার মহাতঙ্কে ভুগছে আত্মগোপনে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে পুরো দেশকেই ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে মেতেছিল জামায়াত-শিবির। কিন্তু পারেনি। সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকরের পর রাজপথে সামান্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও ব্যর্থ হয়েছে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তরা। জামায়াতের সকল শীর্ষ নেতার অধিকাংশই কারাগারে অন্ধকার প্রকোষ্টে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। অনেকেই আমৃত্যু কারাভোগের সাজা খাটছেন। সভা-সেমিনার ও বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ বামদলগুলো বিদায়ী বছরেও রাজপথে তেমন কোন তৎপরতা ছিল না বহুধা বিভক্ত দেশের বামপন্থী দলগুলোর। তেল-গ্যাস ইস্যুতে সিপিবি ও বাসদ ঐক্যবদ্ধভাবে কিছু কর্মসূচী পালন করলেও বাকি দলগুলোর তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি বিদায়ী বছরে। সভা-সেমিনার আর বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ ছিল বেশিরভাগ বামদলের কর্মকাণ্ড। এছাড়া বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রচেষ্টা বছরের বিভিন্ন সময়ে নেয়া হলেও তা সফল হয়নি। আবার জনসমর্থন হারিয়ে অনেক বামপন্থী দল এখন কার্যত নাম সর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে। একমাত্র সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ছাড়া রাজপথে অন্য বামদলগুলোর অস্তিত্ব খুব একটা দেখা যায়নি।
×