এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ অভাই-‘কার্নিভ্যাল’ কউদ্দে ইবা কী? ইবা কেন গরিবোদে। এত সরকার গেইগৈ, ইবাতো কনোদিন নও পুনি। বিশিদবারে দইজ্যার চরত যাই চাইয়েনে বুইজ্জুম। কার্নিভ্যাল নিয়ে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল জেলাবাসীর মনে। কক্সবাজার নিয়ে এত কা-, অথচ সেই কক্সবাজারের মানুষ ইতোপূর্বে ভাল করে জানেনি বিচ কার্নিভ্যাল কী? অর্থাৎ মেগা বিচ কার্নিভ্যাল এটা কী- জানেনা কক্সবাজারের মানুষ। ইতোপূর্বে একাধিক সরকারের পালাবদল হয়েছে বটে, কার্নিভ্যালত কোনদিন শুনিনি। বৃহস্পতিবার সাগরপারে গিয়ে দেখলে সহজে বুঝে নেয়া যাবে। ঠিকই বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে গিয়ে স্থানীয়দের বুঝতে বাকি নেই, কার্নিভ্যাল মানে আন্তর্জাতিক মানের মহামেলা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে স্থানীয়রা বলাবলি করছেন, আসলে কার্নিভ্যাল প্রতিবছর হওয়া দরকার। খুবই সুন্দর, খুবই মজা করা গেছে।
কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে উদ্বোধন হয়েছে জমকালো মেগা বিচ কার্নিভ্যাল। পর্যটন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, ট্যুরিজম বোর্ড ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি তিন দিনের এই কার্নিভ্যালের আয়োজক। কার্নিভ্যাল উপলক্ষে বুধবার সকাল দশটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে পৌঁছে শেষ হয়। র্যালিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, মোহাম্মদ ইলিয়াছ এমপি, জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ‘মেগা বিচ কার্নিভ্যাল ডেস্টিনেশন-২০১৫’ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী ও পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরূপ চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত পর্যটন বর্ষ-২০১৬ সামনে রেখে কার্নিভ্যাল আয়োজন করা হয়। দেশের ইতিহাসে প্রথম এই কোন বিচ কার্নিভ্যাল অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজারে। উদ্বোধনী দিনের বর্ণাঢ্য র্যালিতে শহরের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী নানা সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, হোটেল মালিক সমিতি, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠন অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠান ঘিরে শহরজুড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। কার্নিভ্যাল সফল করতে জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার শুরু তিন দিনের এই মেগা বিচ কার্নিভ্যাল শেষ হবে ২ জানুয়ারি।
ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ‘গ্রে’ এ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেডের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কার্নিভ্যালে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ৬৯ ইভেন্টের খেলাধুলা। কার্নিভ্যালের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৬৫ হাজার টাকা। সেখানে জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ১ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং চুক্তিবদ্ধ সংস্থা ‘গ্রে’ ৩ কোটি টাকা কার্নিভ্যালের জন্য বরাদ্দ করেছে।
তিন দিনের বিচ কার্নিভ্যালে বুধবার (প্রথম দিন) সকালে ছিল লাবণী পয়েন্টে ডিসপ্লে, সুগন্ধা পয়েন্টে ফুটবল ও ভলিবল, দুপুরে ক্রিকেট ম্যাচ, বালু ভাস্কর্য, ড. জাফর ইকবালের নেতৃত্বে ঘুড়ি উৎসব, মাইক্রোলাইট এয়ারক্রাফট, ফুটবল ম্যাচ ও বলীখেলা। বিকেলে সুগন্ধা পয়েন্টে মহিলা ও পুরুষদের ঘুড়ি উৎসব, ফুটবল ম্যাচ, প্যারালাইসিং, ডিজে শো, ফানুস উড়ানো, জর্বিং, লাবনী পয়েন্টে ব্যান্ডসঙ্গীত (রেডিও এ্যাক্টিং), ব্যান্ডসঙ্গীত (মাকসুদ ও ঢাকা), ব্যান্ডসঙ্গীত (কিরণ চন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার) ও নগর বাউল (জেমস)। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজারকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চালু করেছিলেন। আজ ১ জানুয়ারি ২০১৬ সালে তার ৬০ বছর পূর্তিতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে ৬০ বছর পূর্তি পালন করবে জেলাবাসী। কার্নিভ্যালে থাকছে সার্ফিং ও জলক্রীড়া, বলীখেলা, হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবান্দা, কাবাডি, বিচ ফুটবল, বিচ ক্রিকেট, বিচ ভলিবল, মোরগ লড়াই, সাইকেল র্যালি, রাখাইন নৃত্য, রাখাইন জলকেলি, ঘুড়ি উড়ানো, ফানুস উড়ানো, বালু ভাস্কর্যসহ ৬৯ ইভেন্ট। তিনদিনের অনুষ্ঠানে দেশের নামকরা শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে বলে আয়োজকদের একটি সূত্র জানিয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: