ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টানা চতুর্থবার ফাইনালে স্বাগতিক ভারত

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১ জানুয়ারি ২০১৬

টানা চতুর্থবার ফাইনালে স্বাগতিক ভারত

রুমেল খান, ত্রিবান্দ্রাম, কেরল থেকে ॥ যদি বলা হয়, ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ ফুটবল’ খ্যাত ‘সাফ সুজকি কাপ’-এর পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের নামটি অক্ষুণœ রেখেছে ভারত। বৃহস্পতিবার প্রথম সেমিফাইনালে গ্রুপ ‘এ’ চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক ভারত হারিয়েছে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ মালদ্বীপকে। খেলার স্কোরলাইন ছিল ৩-২। এ জয়ে সাফ ফুটবলে টানা চতুর্থবারের মতো ফাইনালে নাম লেখাল ভারত। পক্ষান্তরে এ নিয়ে টানা তিন আসরেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিল মালদ্বীপ। হারলেও ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছে মালদ্বীপ। ম্যাচে গোল করার বেশ ক’টি সুযোগ পায় তারা। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে না পারায় মাথা কুটে আফসোস করতে হয়েছে তাদের। যদিও খেলার প্রথম গোলটি ভারতেরই। ম্যাচের তখন ২৫ মিনিট। মালদ্বীপের সীমানায় বল পেয়ে ভারতের লিংডোস শট নেন। মালদ্বীপ গোলরক্ষক ইমরান সেই শট ফিরিয়ে দিলে বল চলে যায় ভারতের ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রির পায়ে। এবার ছেত্রি গোলমুখ লক্ষ্য করে শট নেন। বল আবারও রক্ষণভাগের দেয়ালে লেগে ফেরত আসে। নারজারি ক্রস করলে বল হেড করে মালদ্বীপের জালে পাঠিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন ছেত্রি (১-০)। ৩৪ মিনিটে আবারও ব্যবধান দ্বিগুণ করে ভারত। মালদ্বীপের ডিফেন্সের ওপর দিয়ে বক্সে বল ফেলেন নারজারি। বল পান সতীর্থ চেন্নাইয়ের ফরোয়ার্ড শাফিউ আহমেদ। তার পাস থেকে বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন জেজে লালপেখুলা (২-০)। গোল শোধে মরিয়া মালদ্বীপ কয়েকটি ব্যর্থ আক্রমণের পর সফল হয় প্রথমার্ধের ইনজুরি (৪৫+২ মিনিটে) সময়ে। মালদ্বীপ অধিনায়ক আলী আশফাকের কাছ থেকে বল পেয়ে আহমেদ নাশিদ গোল করে ব্যবধান কমান (১-২)। ৬৬ মিনিটে আবারও ব্যবধান বাড়ায় ভারত। ছেত্রি-জেজে কম্বিনেশন আবারও সফল হয়। বক্সের ভেতর ঢুকে গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে প্লেসিং শটে গোল করেন জেজে (৩-১)। যখনই মনে হচ্ছিল এই ব্যবধানেই হারতে যাচ্ছে মালদ্বীপ, তখনই ৭৫ মিনিটে গোল করে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনে তারা। অর্ণব ম-লের কর্নার থেকে হেডে গোল করে আবারও ব্যবধানে কমায় তারা (২-৩)। বাকি সময় অনেক শাণিয়ে গোল করে ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে বা টাইব্রেকার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারেনি মালদ্বীপ। রেফারি ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজালে ফাইনালে ওঠার আনন্দে মেতে ওঠে ভারত দল। এ পর্যন্ত সাফ ফুটবলের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে দশবার। দশবারের মধ্যে সর্বোচ্চ নয়বারই ফাইনাল খেলেছে তারা এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সর্বাধিক ছয়বার! সত্যি অভাবনীয় সাফল্যই বটে! ১৬০ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী মালদ্বীপ এ পর্যন্ত সাফের ফাইনালে খেলেছে চারবার। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে একবার। যদিও মালদ্বীপ ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয় ধাপ এগিয়ে ভারতের চেয়ে (ভারতের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১৬৬), তারপরও হেড টু হেড পরিসংখ্যানে পিছিয়ে আছে তারা। বৃহস্পতিবারের ম্যাচ শেষে পরিসংখ্যান হলো এ রকম- ১৫ বারের মোকাবেলায় ভারত জিতেছে ১১ ম্যাচেই, মালদ্বীপ জিতেছে মাত্র ২ ম্যাচে, আর বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। সাফে দু’দল সর্বশেষ মোকাবেলা করেছে ২০১৩ কাঠমা-ু সাফে। মজার বিষয় হচ্ছে- সেবারও সেমিফাইনালেই দেখা হয়েছিল উভয় দলের। সেবার জয়ী হয়েছিল ভারতই, স্কোর ছিল ১-০। স্বাগতিক দল হিসেবে ভারতীয় দল নিয়ে সেদেশের ফুটবলপ্রেমীদের যে প্রত্যাশা ছিল, তার প্রতিদান তারা দিল ফাইনালে উঠে। তবে ফাইনালে ওঠাটা এত সহজে হয়নি। প্রতিপক্ষ হিসেবে মালদ্বীপ অনেক বেগ দিয়েছে তাদের। করেছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এই ম্যাচে মালদ্বীপের হারার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে গেল আলী আশফাকের মতো দুর্ধর্ষ ফরোয়ার্ডের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। কেননা আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন এই সাফ ফুটবল আসরই হবে তার শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। গ্রুপ পর্বে ব্যক্তিগত ২টি গোল করেছেন মালদ্বীপের অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড আলী আশফাক। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে একটি গোল করে সাফে নিজের ২০তম গোলের মাইলফলক পূরণ করার বিরল কৃতিত্ব দেখান তিনি। এবারের আসরে ভারত গ্রুপ ম্যাচে ২-০ গোলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুভসূচনা করে। এরপর দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে নেপালকে ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে নাম লেখায় শেষ চারে। পক্ষান্তরে এই আসরে গ্রুপ ‘বি’তে মালদ্বীপ ৩-১ গোলে ভুটানকে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করে, দ্বিতীয় ম্যাচে ৩-১ গোলে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিতে খেলা নিশ্চিত করলেও গ্রুপসেরা হওয়ার দ্বৈরথে আফগানিস্তানের কাছে ৪-১ গোলে হেরে আবার নেমে আসে মাটিতে। সাফ টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই আলী আশফাক ঘোষণা দিয়েছিলেন এটাই হবে তার শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, তাই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করতে চান সাফ সুজকি কাপের শিরোপা জিতে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দলীয়ভাবে তিনি জিতেছেন ২০০৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। সেটা শুধুই খেলোয়াড় হিসেবে। ২০০৯ সালে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পান আশফাক। ওই বছরই এবং ২০১৩ সালে তার অধীনে খেলে মালদ্বীপ সাফে ফুটবলের সেমিতে উঠেছিল। এবার মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন অধিনায়ক হিসেবে সাফের সুদৃশ্য ট্রফিটি নিজের হাতে উঁচিয়ে ধরতে। সেটা আর হলো না দল ফাইনালে উঠতে না পারায়। দক্ষিণ এশিয়ার এই ফুটবল টুর্নামেন্টে আধিপত্য ভারতেরই। ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হওয়া সাফ ফুটবলে তারা সর্বোচ্চ ছয়বারের (১৯৯৩, ৯৭, ৯৯, ২০০৫, ০৯, ১১) চ্যাম্পিয়ন। মালদ্বীপ শিরোপা জিতেছে ২০০৮ আসরে।
×