ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘২০১৬ চ্যালেঞ্জের বছর’ ॥ মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

‘২০১৬ চ্যালেঞ্জের বছর’ ॥ মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক কে? প্রশ্নটি উঠতেই একটা সময় সবার চোখের সামনে যে নামটি ভাসত, সেই নাম- হাবিবুল বাশার সুমন। কিন্তু এরপর সেই স্থানটি দখল করেছেন সাকিব আল হাসান। এখন সেই আসনটি মাশরাফি বিন মর্তুজার দখলে চলে গেছে। ২৮ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে যে ২০টিতেই জয় তুলে নিয়েছেন মাশরাফি। ৭১.৪২ ভাগ সাফল্য তার ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারে যুক্ত হয়ে গেছে। এ ফরমেটে সাফল্য বিবেচনায় তার ধারে কাছে নেই এখন কোন বাংলাদেশী অধিনায়ক। ২০১৫ সালে তার ‘জাদু’ই যেন মিলেছে। এ বছরে মাশরাফির নেতৃত্বে ১৮ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। যার ১৩টিতেই জয় পায় মাশরাফির দল। এজন্য বছরটিতেও অন্য যে কোন বছরের চেয়ে বেশি সাফল্যের রং লেগেছে। এবার সেই সাফল্য নতুন বছরেও, ২০১৬ সালেও ধরে রাখার পালা। শুক্রবার থেকেই যে বছর শুরু হয়ে যাবে। তা কী ধরে রাখা সম্ভব? বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি২০ অধিনায়ক মাশরাফি চ্যালেঞ্জই দেখছেন। বলেছেন, ‘২০১৬ সাল চ্যালেঞ্জের বছর।’ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে। প্রথমবারের মতো ভারতকে সিরিজ হারায়। আবার দক্ষিণ আফ্রিকাকেও প্রথমবারের মতো সিরিজে হারায়। স্বর্ণময় বছর গেছে। জিম্বাবুইয়েকেও বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। আর তাই ৫ টেস্ট খেলে ১টি হার ও ৪টিতে ড্র এবং ৫ টি২০ খেলে ২টিতে জয় সাফল্যে একচুলও ব্যর্থতার ছোঁয়া লাগাতে পারছে না। এবার বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। যে চ্যালেঞ্জে শুধু টি২০ই মিলছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে টি২০ সিরিজ শুরু হবে। এরপর এশিয়া কাপ হবে। সেটিও টি২০ ফরমেটেই হবে। এশিয়া কাপ শেষ হতেই শুরু হবে ভারতে অনুষ্ঠেয় টি২০ বিশ্বকাপ। যে বিশ্বকাপে প্রথম পর্বের গ-ি অতিক্রম করলেই বাংলাদেশ খেলবে সেরা ১০-এ। বিশ্বকাপ শেষে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট খেলা হতে পারে। আগস্টে ভারতে গিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে পারে বাংলাদেশ। অক্টোবরে ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডে খেলতে বাংলাদেশে আসবে ইংল্যান্ড। ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডে ২ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও ২টি২০ খেলতে যাবে বাংলাদেশ। তবে আপাতত এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপই মূল লক্ষ্য থাকছে। সামনে শুধু টি২০ খেলাই। আর যে খেলায় বাংলাদেশ খুবই দুর্বল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ‘সেলিব্রেশন অব ভিক্টোরি’ অনুষ্ঠান শেষে এজন্যই চ্যালেঞ্জটা বেশি বলে জানিয়েছেন মাশরাফি। বলেছেন, ‘সামনে জাতীয় দলের খেলা আসছে, অনেক বড় বড় টুর্নামেন্ট (এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ) আসছে। তাই আমাদের পুরো লক্ষ্যটাই ওই দিকে। তিন তারিখ পর্যন্ত আমাদের ছুটি রয়েছে। তাই সবাই যে যার মতো সময় কাটাচ্ছে। তিন তারিখ থেকে আমাদের সবাই ক্যাম্পে ফিরবেন কারণ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এখন আমাদের আসল চ্যালেঞ্জ। বলা যায়, এখন থেকে পরীক্ষার শুরু হলো। তবে মনে রাখতে হবে, ২০১৬ সালের প্রথম কয়েকটা মাস আমরা টি২০ই বেশি খেলব। এই ফরমেটে আমরা তিন ফরমেটের মধ্যে এখনও সবচেয়ে দুর্বল। ফলে আমাদের ভাল করার দারুণ চেষ্টা থাকবে, তবে কাজটা সহজ হবে না।’ টানা তিন সপ্তাহ খেলা থেকে দূরে রয়েছেন খেলোয়াড়রা। এ নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আপনি সবসময় জীবনটাকে খেলার মধ্যে রাখতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবসময় একটা চাপ থাকে। এই চাপ থেকে বের হয়ে আসার জন্য একটু বিশ্রামের দরকার হয়। এই সময় প্রায় তিন সপ্তাহের মতো খেলা ছিল না। তাই আমি মনে করি এটা খেলোয়াড়দের জন্য ভাল হয়েছে। যখন দলের অনুশীলন শুরু হবে, তখন তারা অনেক রিলাক্স থাকবে, অনেক শান্ত থাকবে। ফলে খেলায় মনোনিবেসটা ভাল করতে পারবে।’ আজ শেষ হতে যাওয়া বছরটি মাশরাফির জন্য দুর্দান্তই কাটল। সেটি আরও স্মরণীয় হয়ে আছে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টির জন্যই। এ ম্যাচটিতে জিতেই যে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। মাশরাফি বলেছেন, ‘পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে অবশ্যই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে জয়টাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলব। ওই ম্যাচে আমাদের জিততেই হতো। ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে এ রকম ‘ডু-অর-ডাই’ ম্যাচে অমন পারফর্মেন্স করাটা সহজ বিষয় ছিল না।’ আর এই বছরের অর্জন কী? তা জানতে চাইলে মাশরাফি আত্মবিশ্বাসকে সামনে তুলে ধরেন, ‘আমরা এই বছরে প্রায় সব ম্যাচে তিন পেসার খেলানোর মতো বিশ্বাস পেয়েছি। গত বছরই বিষয়টা শুরু হয়েছিল। বিশ্বকাপে প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু দেশের মাটিতে তিন সিরিজেই তিন পেসার খেলানো বা ভারতের বিপক্ষে চার পেসার খেলানোটা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। আমাদের দেশের মাটিতে এমন সিদ্ধান্ত কেবল আত্মবিশ্বাস থেকেই আসতে পারে।’ এ আত্মবিশ্বাস অর্জনের পেছনে মাশরাফির অনেক বড় অবদান রয়েছে। যে দলটি হারের মধ্যে ছিল। ২০১৪ সালে যে মাত্র ৫ ওয়ানডে জিতেছে দল, সেটি মাশরাফির হাত ধরেই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে। এরপর থেকেই বদলে গেল বাংলাদেশ। মাশরাফির ছোঁয়ায় তা সম্ভব হয়েছে বলেই সবার বিশ্বাস। কিন্তু মাশরাফি কি মনে করেন? বললেন, ‘ক্রিকেটে কখনও কখনও একজন মানুষ অনেক কিছু বদলে ফেলতে পারে। বাংলাদেশের বিষয়ে আমি বলতে চাই, অধিনায়ক হিসেবে আমাকে বিশাল কিছু করতে হয়নি। প্রত্যেকে নিজের জায়গায় পারফর্ম করেছে, নিজের দায়িত্বটা বুঝেছে। সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফদের। তারা পেছন থেকে এই দলটাকে প্রতিদিন তৈরি করে দিয়েছেন।’ এ দলটিকেই এখন নতুন বছরের চ্যালেঞ্জে নামতে হবে। যে চ্যালেঞ্জের কথা মাশরাফি নিজেই বলে দিয়েছেন। পারবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল চ্যালেঞ্জ জয় করতে?
×