ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরের শত্রু বিভীষণ

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

ঘরের শত্রু বিভীষণ

অমিত দাস ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ধর্ম একটি বড় নিয়ামক। ধর্মের দোহাই দিয়ে ধার্মিক ধর্মভীরু কোটি কোটি মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করে। ধর্মের অপব্যবহার ঘটায়, রাজনৈতিক আদর্শের দ্বন্দ্বের জন্ম দেয় এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাবকে বিনষ্ট করে। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। জাতিগত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সংঘর্ষ, সহিংসতার সৃষ্টি করে। এর বড় উদাহরণ হলো- ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ধর্মভিত্তিক ভারত ও পাকিস্তান জাতি-রাষ্ট্রের উদ্ভব। এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা কালে কালে ধর্মকে মই হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। যেখানে সাধারণ হিন্দু ও মুসলমান ধর্ম ভীরু ধার্মিক নিরীহ জনের কোন যোগসূত্রতা থাকে না। এমনকি সাম্প্রদায়িক কোন ভেদাভেদের ক্ষেত্রেও তাদের কোন ভূমিকা নেই। এগুলো হচ্ছে ধর্ম ব্যবসায়ীদের অপরাজনীতি এবং কারসাজি। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধার্মিক মানুষকে ভুল পথে ধাবিত করে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও বিকৃত বক্তব্য প্রদান করে। কেননা তারা সংস্কৃতির প্রগতিকে ভয় পায়। বাঙালী জাতীয়তাবাদকে ভয় পায়। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা তারা চায় না এবং সামন্তবাদী মনোভাব পোষণ করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশে তারা উন্মত্ত ষাঁড়ের মতো প্রতিক্রিয়া করে। পাশাপাশি বিচারবুদ্ধি যুক্তি বিবেকহীন উগ্র ধর্মান্ধ শ্রেণী সৃষ্টি করা তাদের উদ্দেশ্য যা প্রকারান্তরে ধর্ম ধার্মিকজন তথা দেশের আপামর জনসাধারণের বিশাল ক্ষতি সাধন করে। পাকিস্তানের বাঙালী জাতীয়তাবাদের জোয়ারে পাকিস্তানের ভাঙ্গন ও বাংলাদেশের জন্ম এবং যখন অবশ্যাম্ভাবী হয়ে ওঠে তখন তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষায় মরিয়া। এমনকি তারা পূর্ব পাকিস্তানে সেই সময়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এদেশের লাখ লাখ হিন্দু জনগোষ্ঠীকে ভারতের চর ও কাফের অভিধায় আখ্যায়িত করে এবং ধর্মকে রক্ষা কবজ হিসেবে ব্যবহার করে এই প্রচারণা চালায় যে, ইসলামকে বাঁচাতে হবে, পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার চার দশক পরেও বাংলাদেশের জন্ম নিয়ে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতিহাসের মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশ্নে জাতিকে সংশয়ে ফেলার চেষ্টা করছে জাতির গণদুশমনরা এবং তারা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মাহুতি ও দেশপ্রেমকে অপমান করছে। কেননা তারা এদেশে বাস করলেও মনেপ্রাণে এরা পাকিস্তানী। এদের মনে সব সময়ই বাজে পাকসার জমিন সাদবাদ পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি বাংলাদেশের অতিসুমধুর জাতীয় সঙ্গীতটি তাদের কর্ণশূল, আর লাল সবুজের পতাকাটি তাদের চক্ষুশূল কেননা তারা চানতারা মার্কা পাকিস্তানের পতাকাটিকেই বেশি ভালবাসেন। এরা দেশের শত্রু, স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ, এরা মীরজাফর এবং ঘরের শত্রু বিভীষণ। চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×