ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পাচার্যের জন্মবার্ষিকীতে ৩ দিনের জয়নুল উৎসব চারুকলায়

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

শিল্পাচার্যের জন্মবার্ষিকীতে ৩ দিনের জয়নুল উৎসব চারুকলায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌষের রোদেলা সকাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ছড়িয়েছে প্রাণের উচ্ছ্বাস। পুরো প্রাঙ্গণজুড়ে বইছে আনন্দের আবহ। লিচুতলা থেকে বকুলতলা- সবখানেই উৎসবের আমেজ। ভেসে বেড়াচ্ছে গানের সুর। কোথাও বা বসেছে মেলা। স্টলগুলো ঠাঁই পেয়েছে শখের হাঁড়ি, টেপাপুুতুল, নকশীকাঁথাসহ মনকাড়া রকমারি পণ্যসামগ্রী। এমন আনন্দময় পরিবেশের উপলক্ষ ছিল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিন উদ্্যাপন। মঙ্গলবার ছিল শিল্পচার্যের ১০২তম জন্মদিন ও ১০১তম জন্মবার্ষিকী। সেই সুবাদে রঙময় হয়ে ওঠে চারুকলা প্রাঙ্গণ। এদেশের চারুশিল্প ও চারুশিক্ষার পথিকৃৎ শিল্পীর স্মরণে তিন দিনের জয়নুল উৎসবের সূচনা হয়। শিল্পাচার্যের শ্রম, মনন ও মেধায় গড়া চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে এই উৎসব ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে শুরু হলো তিন দিনের জয়নুল মেলা ও জয়নুল উৎসব। চারুকলার বকুলতলায় উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন জয়নুল ভক্তানুরাগীরা। ঢাক-ঢোলের বাজনার তালে তিন দিনের মেলা ও উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্পাচার্যের সহধর্মিণী জাহানারা আবেদিন ও ছেলে প্রকৌশলী মঈনুল আবেদিন এবং শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় শিল্পাচার্যকে নিবেদিত তিনটি গান পরিবেশন করেন চারুকলার শিল্পীরা। অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায় ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার’, ‘আজি শুভ দিনে পিতারও ভবনে’ ও ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে সত্য-সুন্দর’ শিরোনামের গানগুলো। এবারের উৎসবে চারুশিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জয়নুল সম্মাননা দেয়া হয়েছে শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবদুল মতিন সরকার ও অধ্যাপক বুলবুল ওসমানকে। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারকসহ উপহারসামগ্রী তুলে দেন উদ্বোধক আরেফিন সিদ্দিক ও জাহানার আবেদিন। অন্যদের সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন। চারুকলায় বিশেষ অবদানের জন্য সুশান্ত ঘোষকে দেয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। জয়নুল আবেদিনের পরিবারের উদ্যোগে এ পুরস্কারটি তুলে দেন জয়নুল আবেদিনের সন্তান মঈনুল অবেদিন। অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে চারুকলা গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক মামুন কায়সার সম্পাদিত ‘শিল্পাচার্য জয়নুল অবেদিন জন্মশত বর্ষ উপলক্ষে বার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনীর-২০১৪’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ জয়নুল আবেদিনের সংগৃহীত পুতুলের প্রদর্শনী। জয়নুল গ্যালারিতে আট দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জাহানারা আবেদিন। এ প্রদর্শনী চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। জয়নুল মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কারুশিল্পীদের অংশগ্রহণে সাজানো হয়েছে ১৭টি স্টল। এগুলোর মধ্যে রাজশাহীর পৃৃথক পৃথক দুইটি স্টলে রয়েছে টেপাপুতুল ও শখের হাঁড়ি। মৌলভীবাজার থেকে আগত দুটি স্টল সজ্জিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি দিয়ে। সোনারগাঁও থেকে আসা তিনটি স্টলে রয়েছে হাতপাখা, নকশীকাঁথা ও তামা-কাঁসায় নির্মিত রকমারি অলঙ্কার। এছাড়াও আছে ঝিনাইদহ, মাগুরা, নওগাঁ এবং ঢাকার মহাখালী ও নারিন্দার কারুশিল্পীদের পণ্যসম্ভার। সকালের উদ্বোধন আয়োজন শেষে পৌষের বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সুরে সুরে মাতিয়ে উৎসব আঙিনা মাতিয়ে রাখে চারুকলার শিক্ষার্থীরা এবং গান পাগল নামের সঙ্গীতদল। মেলা প্রসঙ্গে অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে স্মরণ করাই এ উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য। কোন ব্যবসায়িক মুনাফার উদ্দেশে এ উৎসবের আয়োজন করা হয় না। প্রতিটি বিভাগের ছাত্রছাত্রী এবং যশস্বী শিল্পী-শিক্ষকদের সৃষ্ট শিল্পকর্ম ও চিত্রমালা প্রদর্শনই মেলার লক্ষ্য। উৎসবে উদ্বোধনের আগে শিল্পাচার্যের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে জয়নুল আবেদিনের পরিবার, চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ, জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। বাঁশ দিয়ে নান্দনিকভাবে তৈরি করা হয়েছে চারুকলার মূল ফটকের উৎসবের প্রবেশদ্বার। বর্ণিল কাগজ ও কাপড়ের আশ্রয়ে চারুশিক্ষার্থীরা তৈরি করেছেন নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড, দেয়ালিকা, দিনপঞ্জি, ডায়েরি প্রভৃতি। অঙ্কন, ছাপচিত্র ও প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নান্দনিক ও বাণিজ্যিক উভয় দিক বিবেচনা করে সাজিয়েছে পণ্যের পসরা। ভাস্কর্য বিভাগের আয়োজনে ঠাঁই পেয়েছে ছোট-বড় নানা আকৃতির ভাস্কর্য ও মুখোশ। মৃৎশিল্প বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাদামাটির ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন লোক-ঐতিহ্যকে। তিন দিনের এ উৎসব চলবে কাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে থেকে রাত ৮টা চলছে পর্যন্ত চলবে সবার জন্য উন্মুক্ত উৎসবের কার্যক্রম। শিল্পাচার্যের জন্মবার্ষিকীতে শিল্পকলার আয়োজন ॥ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রপ্রদর্শনী ও সনদপত্র প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত বছরব্যাপী শিশু চিত্রাঙ্কন কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিশুশিল্পীদের সনদপত্র বিতরণ এবং শিশুদের আঁকা চিত্রকর্মের ১০ দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্পাচার্যের ছেলে মঈনুল আবেদিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক উৎপল কুমার দাস। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৬নং গ্যালারিতে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং শুক্র ও শনিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে শিশু শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।
×