ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দলীয় ভিত্তিতে ২শ’ ৩৪ পৌরসভায় ॥ আজ ভোট

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

দলীয় ভিত্তিতে ২শ’ ৩৪ পৌরসভায় ॥ আজ ভোট

শাহীন রহমান ॥ পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের ভাগ্যপরীক্ষা আজ বুধবার। প্রায় ৭১ লাখ ভোটার তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে আজ ভোট দেবেন। ইতোমধ্যে ইসির পক্ষ থেকে ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানে প্রস্তুতি নিয়েছেন। সকাল থেকেই তারা ভিড় জমাবে ভোট কেন্দ্রে। ইসি জানিয়েছে, ৪টায় ভোট শেষ হলেও এ সময়ে যারা ভোট কেন্দ্রে ভেতরে বা লাইনে ভোটের অপেক্ষায় থাকবেন তাদের ভোট শেষ সময়ের পরেও নেয়া হবে। তবে ৪টার পরে কোন ভোটারকে আর ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে সব ধরনের সরঞ্জাম রাতেই ভোট কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে তা চারটা পর্যন্ত চলবে। এরপরেই ভোট গণনা করে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। ২৩৪ পৌরসভায় মেয়র কাউন্সিলরসহ ১২ হাজারের বেশি ভোটার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যারা দীর্ঘ ২১ দিন প্রচার শেষে আজ চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। তবে মেয়র পদে প্রায় সাড়ে নয় শ’ প্রার্থী নির্বাচনে থাকলেও মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সঙ্গে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের। এ কারণে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের মর্যাদার লড়াইও আজ। দীর্ঘ ৭ বছর পরে প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে দল দুটি। এর আগে দশম জাতীয় সংসদে বিএনপি অংশ না নেয়ায় ওই নির্বাচন অনেকটা একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ ২০ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়ায় নির্বাচন অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তফসিল ঘোষণার পর রাজনীতিও আবর্তিত হচ্ছে পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনে একে অন্যের বিরুদ্ধে চলছে দোষারোপের খেলা। ইসি জানিয়েছে, ২৩৪ পৌরসভায় আজ ভোটগ্রহণ করা হলেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত ২২২ পৌরসভায়। বাকি ১২ পৌরসভায় বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। এর মধ্যে ৭ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাদের সবই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বাকি ৫ পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন ৪টিতে। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪০ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ইসি জানিয়েছে, যেসব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট পৌরসভায় সেসব পদে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন নেই। ইসি জানিয়েছে, ২৩৪ পৌরসভায় মেয়র পদ রয়েছে ২৩৪টি। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদ ২ হাজার ১৯৩টি এবং সংরক্ষিত ৭৩১টি পদের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে মেয়র পদে সব রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছে ৯৪৩ জন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৮ হাজার ৭৪৬ প্রার্থী এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ হাজার ৪৮০ নারী কাউন্সিলর প্রার্থী। মেয়র পদে ৯৪৩ প্রার্থীর মধ্যে ২০ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ৬৫৮ জন। বাকিরা স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন। এর মধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ১ জন, জাতীয় পার্টির ৬ জন, সিপিবির ৪ জন, ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৩৩ জন, বিএনপির ২২২ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ জন, বিকল্পধারার ১ জন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের ১ জন, জাতীয় পার্টির ৭৪ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ১ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ৪ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ২১ জন, বাসদের ১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৭ জন, ন্যাশনাল আওয়মী পার্টি ন্যাপের ১ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫৭ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩ জন, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন, খেলাফত মজলিশের ১ জন রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যে ৭ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পৌরসভায় মেয়র পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে না। এবারই প্রথম পৌরসভায় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ২৪ নবেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ দেশের ৩২৩ পৌরসভার মধ্যে ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এরপর গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আরও দুটি পৌরসভায় তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে দুটি পৌরসভায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল ও ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভায়ও নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয়া হয়। পরে আপীলে এসব স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলে পুনরায় এসব পৌরসভায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দেয় ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীরা গত ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের মনোনয়পত্র জমা দেন। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তারা এসব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে। ৯ ডিসেম্বর থেকে প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করলেও প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় ১৪ ডিসেম্বর। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৩ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে প্রার্থীরা শুরু করেন আনুষ্ঠানিক প্রচার। রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য ইসির নিবন্ধিত প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ইসির নির্ধারিত প্রতীক। দীর্ঘ ২১ দিন প্রচার শেষে আজ ভোটযুদ্ধে নামছেন প্রার্থীরা। এদিকে পৌরসভা নির্বাচনে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, সিলমোহর, ছবিসহ ভোটার তালিকা। কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তার বাইরেও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও নির্বিঘেœ কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ২৩৪ পৌরসভার ৩ হাজার ৫৫৮টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ জন্য প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং কর্মকর্তাসহ মোট ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিকেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার। প্রতি বুথের দায়িত্বে রয়েছেন একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার। এছাড়া পোলিং অফিসাররা সর্বক্ষণিক ভোটগ্রহণের কাজে নিয়োজিত থাকবেন। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বেলা ৪টা পর্যন্ত বিরতি ছাড়া ভোটগ্রহণ করা হবে। এরপরই শুরু হবে ভোট গণনা। ইসি জানিয়েছে, কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল গণনার পরেই জানিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া সব কেন্দ্রের ফলাফল যোগ করে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হবে। এদিকে ২৩৪ পৌরসভায় মোট ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন আজ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ জন। আর মহিলা ভোটার রয়েছে ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ জন। এদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। সব নির্বাচনী এলাকায় গত সোমবার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল প্রদান করছেন। ইসি জানিয়েছে, সব পৌরসভায় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ জন সদস্য মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ বাহিনীর সদস্য রয়েছে ৪৫ হাজার, বিজিবির রয়েছে ৯ হাজার ৪১৫ জন ও র‌্যাবের সংখ্যা রয়েছে ৮ হাজার ২২৪ জন। এছাড়া উপকূলীয় ৬ পৌরসভায় মোতায়েন করা হয়েছে কোস্টগার্ডের ২২৫ সদস্য। এছাড়া কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার ভিডিপির ৪৯ হাজার ৭৩৮ জন সদস্য, ব্যাটালিয়ন আনসারের ৪ হাজার ৫১২ জনসহ মোট ১ লাখ ১৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া কেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রতিকেন্দ্রে ১৯ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ঝুঁকি পূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে ২০ জন করে সদস্য। নির্বাচনী অপরাধ রোধ এবং তাৎক্ষণিক অপরাধের শাস্তি প্রদানের জন্য ১ হাজার ২০৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। পৌরসভায় নির্বাচনে গত সোমবার শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রচার, মিছিল-মিটিং, পথসভা। বর্তমানে নিবাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চলছে। এছাড়া ইসির অনুমোদিত যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যান চলাচলের ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ইসি জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইসির মনিটরিং সেল ॥ এদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ইসির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহ উদ্দিনকে প্রধান করে সাত সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পুলিশের এক পুলিশ সুপার (এসপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপির মেজর পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তা। নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম বলেন, নির্বাচনের দিন কমিটি ২৩৪ পৌরসভার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করবে এই মনিটরিং সেল। কমিটি যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ইসিকে অবহিত করবে। প্রয়োজনে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে মাঠপর্যায়ে নিদের্শনা দেয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ॥ ২৩৩ পৌরসভার মোট ৩৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টিই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে ইসি। ইতোমধ্যে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। ইসির প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগের ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া রংপুর বিভাগে ৩০৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি, বরিশাল বিভাগে ১৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি, ঢাকা বিভাগে ৯৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৬টি এবং সিলেট বিভাগে ১৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপির পাল্টাপাল্টি নালিশ ॥ এদিকে নির্বাচনের আগের দিন মঙ্গলবার ইসিতে নানা অভিযোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফল পাল্টে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ নির্বাচনে তাদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে বলে ইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, এ নির্বাচনে ফল পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে পাল্টানোর বিরুদ্ধে ইসিকে শক্ত ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, সত্যিকার অর্থে এ নির্বাচনে যারা ভোট দিচ্ছেন সেসব ভোটারের মতামতে যদি ফলাফল হয় তাহলে বিএনপি ফল মেনে নেবে এবং স্বাগত জানাবে। তিনি বলেন, কমিশনকে বলেছি ভোটাররা যেন নিঃসঙ্কোচে তাদের খুশিমতো ভোট দিতে পারেন। ফলাফল যেন তার ভিত্তিতে হয়। ফলাফল শিট যাতে কারও নির্দেশে না হয়। নির্বাচনে কত শতাংশ ভোটার ভোট দিল, তা যেন বাড়ানো কমানোর চেষ্টা না হয়। বিএনপি নির্বাচনে প্রচারের সমান সুযোগ পায় উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির তিনজন নিহত এবং তিন শ’র বেশি আহত হয়েছে। কয়েক হাজার কর্মীকে বন্দী করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তাদের দলের প্রার্থীকে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনে সহিংসতার জন্য ক্ষমতাসীনরাই দায়ী বলে তিনি অভিযোগ করেন। এদিকে বিকেলে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাত করে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ দায়ের করেন। সাক্ষাত শেষে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ইসি ক্ষমতাসীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। বিএনপির অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ইসি যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির আন্তঃকোন্দলের দায়ভারও সরকারের ওপর চালিয়ে দিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে তিনি বিএনপির শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সাংবাদিকদের কাছে। আগের দিনও নানা স্থানে হামলা, ভাংচুরের অভিযোগ ॥ এদিকে পৌর নির্বাচনে আগের দিনও নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা, ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভা নির্বাচনে মৌলভীবাজারে নেতাকর্মীদের আটক, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে পরাজয় মেনে দলের নেতাকর্মীদের মামলা ছাড়াই আটক করা হচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে মারপিট ও পুলিশে সোপর্দ করার অভিযোগ আনেন তারা। এছাড়া এ নির্বাচনে সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসের রহমান। মুন্সীগঞ্জ ॥ এদিকে মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ভোরে দুর্বৃত্তরা এটি পুড়িয়ে দেয়। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শাহীন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন এটি জ্বালিয়ে দিয়েছে। বরিশাল ॥ মেহেদীগঞ্জ পৌরসভার এক কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান খোকনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে টেবিল-চেয়ার ভাংচুর করা হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সোয়েব হোসেনের সমর্থকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্ল ॥ পৌর নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য সীমান্ত থেকে আনার পথে ৪ রাউন্ড গুলিভর্তি রিভলবারসহ রুবেল নামের এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। সোমবার রাতে আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
×