ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি জোট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য রিয়াদ যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

সৌদি জোট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য রিয়াদ যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তৌহিদুর রহমান ॥ সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী জোটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি সৌদি আরব যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এদিকে সৌদি জোটে যোগ দেয়ার আগেই ওমরা ভিসা চালু ও আরও জনশক্তি রফতানির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। সে কারণে আগের চেয়ে এখন অধিক হারে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার। সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী জোটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এই জোটের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চায় বাংলাদেশ। এই জোট সামরিক জোট হবে কি-না সে বিষয়ে সৌদি আরবের সুস্পষ্ট বক্তব্য জানতে চায় বাংলাদেশ সরকার। কেননা সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে জোট হচ্ছে, তা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই জোটের রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সৌদি আরব এই জোটের বিষয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরব জানিয়েছে, এই জোট মূলত জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তবে এই জোট সামরিক জোট হবে কি-না সেটা এখনও চূড়ান্ত নয়। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সামরিক সহযোগিতা করা হবে। সৌদি আরব ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, তারা একটি জঙ্গীবাদবিরোধী সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবে। জঙ্গীবাদ নিরসনে সদস্য দেশগুলোকে তথ্য আদান-প্রদান, সহযোগিতা, অভিজ্ঞতা বিনিময় ইত্যাদি কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়া এই সেন্টার থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সহযোগিতাও করা হবে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামী ৫ জানুয়ারি তিন দিনের সফরে সৌদি আরব যাচ্ছেন। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এই জোটে যোগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশের কাছে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, সেখানে সামরিক সহযোগিতার কথা বলা হলেও এটি যে সামরিক জোট হবে, সেটা বলা নেই। রিয়াদে একটি জঙ্গীবাদবিরোধী মুসলিম সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটি হবে মুসলিম দেশগুলোর সন্ত্রাসবিরোধী জোট। তবে প্রয়োজনে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টিও আসবে এই জোটে। তবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে জোটের বিষয়ে যে ঘোষণা দেয়া হয়, সেখানে বলা হয়, এটি হবে একটি সামরিক জোট। সে কারণে সৌদি আরবের ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে একেবারে স্পষ্ট হতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এসব বিষয় নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিস্তারিত আলোচনা করবেন। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন এই জোট কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন দেশ। সৌদি আরবের ঘোষণায় সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের রূপরেখাটি এখনও অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। তাই জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া এই জোট গঠনের পর আইএস ইতোমধ্যেই সৌদি আরবকে হুমকি দিয়েছে। তারা এটিকে নির্বোধদের জোট হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে আইএসের হুমকি উপেক্ষা করেই সৌদি আরব এই জোটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে অংশগ্রহণের আগে বাংলাদেশীদের ওমরা ভিসা চালু ও জনশক্তি রফতানির বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়। দুই দেশই আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছে যে, বাংলাদেশীদের জন্য সৌদি আরব ওমরা ভিসা চালু করবে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নেবে সৌদি আরব। চলতি বছরের ২২ মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের ওমরা ভিসা বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। ওমরা ভিসা চালুর জন্য সৌদি আরবকে দফায় দফায় অনুরোধ জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। এছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত ৩ আগস্ট জেদ্দায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজার বিন ওবাইদ মাদানির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেও ওমরা ভিসা চালুর জন্য সৌদি আরবকে বিশেষ অনুরোধ করেন। তবে মানবপাচারের অভিযোগ তুলে সৌদি আরব বাংলাদেশের অনুরোধে কোন সাড়া দেয়নি। সৌদি আরবের অভিযোগ, বাংলাদেশের কয়েকটি হজ এজেন্সি ওমরা ভিসার নামে মানবপাচারে জড়িত। এসব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়ে আসছিল সৌদি আরব। তবে সরকার থেকে এসব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও সৌদি আরব ওমরা ভিসা চালু করতে দেরি করছিল। ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ওমরা হজের সুযোগলাভে বঞ্চিত হচ্ছিলেন।
×