ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলবে সকাল আটটা থেকে একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত;###;সারাদেশে ২৩৪ পৌরসভায় ভোট কেন্দ্র ৩,৫৫৮;###;নির্বাচনী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

রাত পোহালেই ভোট

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

রাত পোহালেই ভোট

স্টাফ রিপোর্টর ॥ রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে ভোটের উৎসব। দেশে ২৩৪ পৌরসভায় আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। তা বিরতি ছাড়াই চারটা পর্যন্ত চলবে। ইতোমধ্যে পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, ভোটার সিলমোহরসহ সব নির্বাচনী সরঞ্জাম আজ রাতের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট সব ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে যাচ্ছে। সারাদেশে ২৩৪ পৌরসভায় ৩ হাজার ৫৫৮ ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ করা হবে। এসব পৌরসভার ৭২ লাখের বেশি নারী-পুরুষ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ভোটার ছাড়া বহিরাগত সবাইকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় কেউ সংশ্লিষ্ট পৌরসভায় অবস্থান করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী প্রচার চালাতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ভোটার হলে তাঁরা ভোট প্রদান করার জন্য এলাকায় যেতে পারবেন। তবে কোন প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়া বা প্রচার চালাতে পারবেন না বলে জানিয়েছে ইসি। বিএনপির যেসব কেন্দ্রীয় নেতারা প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করেছেন তারা সেসব এলাকার ভোটার না হলে তাদের অবশ্যই এলাকা ছেড়ে যাওয়ারও নির্দেশ রয়েছে। সোমবার শেষ হয়েছে পৌর নির্বাচনে সব ধরনের প্রচার, মিছিল-মিটিং, পথসভা। বর্তমানে নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চলছে। এছাড়া ইসির অনুমোদিত যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যান চলাচলের ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচনের দিনসহ এর পূর্ববর্তী এবং পরের দিন পৌর এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ নির্বাচনী অনিয়ম রোধ এবং তাৎক্ষণিক বিচার ব্যবস্থার জন্য নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে দায়িত্বে নিয়োজিত কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, ভোট শুরু অন্তত আধাঘণ্টা আগে প্রিসাইডিং অফিসার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার নির্বাচনী এজেন্ট অথব পোলিং এজেন্টদের খালি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেখিয়ে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করবেন। একই সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে যত ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয়েছে তা সবার উপস্থিতিতে প্রদর্শন করে যথা নিয়মের ভোটগ্রহণ শুরু করতে হবে। এদিকে পৌরসভায় নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগামীকাল বুধবার ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ইসির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহ উদ্দিনকে প্রধান করে সাত সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পুলিশের একজন পুলিশ সুপার (এসপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপির মেজর পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তা। নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব সামসুল আলম বলেন, নির্বাচনের দিন কমিটি ২৩৪ পৌরসভার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করবে এই মনিটরিং সেল। কমিটি যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ইসিকে অবহিত করবে। প্রয়োজনে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে মাঠপর্যায়ে নিদের্শনা দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ নির্বাচনে প্রস্তুতি সম্পর্কে সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোন ঘটনা না ঘটায় কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করছে। ভোটাররাও তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘেœ প্রয়োগ করতে পারবেন। তাদের আশ্বস্ত করতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠের যে খবর তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম হলেও ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলানিউজ জানায়, পুলিশ র‌্যাব বিজিবি কোস্টগার্ড ও আনসার মিলিয়ে প্রায় সোয়া লাখ ফোর্স মোতায়েন থাকছে। ইসির উপসচিব শামসুল আলম জানান, নির্বাচনে ৪৫ হাজার পুলিশ ৯ হাজার ৪১৫ বিজিবি ও ৮ হাজার ৪২৪ র‌্যাব সদস্য এবং উপকূলের ৬ পৌরসভায় কোস্টগার্ডের ২২৫ সদস্য থাকবে। এছাড়া আনসার ও ভিডিপি ৪৯ হাজার ৭২৮ ও ৪ হাজার ৫১২ ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োজিত থাকবে। সব মিলিয়ে পৌর ভোটে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ ফোর্স মাঠে থাকছে। র‌্যাব বিজিবি কোস্টগার্ড সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪ দিন নির্বাচনী এলাকায় স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে থাকছে। শামসুল আলমের ২৮ ডিসেম্বর প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনে বিশটি দল অংশ নিচ্ছে। এতে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী ৯৪৫ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকছেন ২৮৫। অংশ নেয়া দলগুলো হচ্ছে এলডিপি ১, সিপিবি ৪, আওয়ামী লীগ ২৩৪, বিএনপি ২২৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ৮, বিকল্পধারা ১, প্রগশ ১, জাতীয় পার্টি ৭৪ ও তরিকত ফেডারেশনের একজন প্রার্থী মেয়র পদে লড়ছেন। এছাড়া খেলাফত মজলিশের ৪, জাসদের ২১, বাসদের ১, এনপিপি ১৭, ন্যাপ ১, ইসলামী ঐক্যজোট ১, ইসলামী আন্দোলনের ৫৭, ইসলামী ফ্রন্টের ৩ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির একজন নির্বাচনী মাঠে থাকছেন। কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, ভোটের জন্য কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘেœ ভোট প্রদানে কোন সমস্যা হবে না। জঙ্গী হুমকির বিষয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখভাল করছে। তাদের ওপর সব ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। যা যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার তারা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। যেখানে তারা মনে করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশি প্রয়োজন সেখানে তা বাড়াবে। কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যারা দায়িত্ব অবহেলা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে অভিযোগ দিয়েছেন তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দল যারা থাকবে তারা অভিযোগ করবে এটা একটা ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও আমরা যেগুলো বাস্তবসম্মত পেয়েছি সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিএনপির অভিযোগকে বাড়তি বলে মন্তব্য করেন তিনি। সারাদেশে ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচনের জন্য ২৩ নবেম্বর তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। নির্বাচনে প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১২ হাজারের বেশি প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ২০ রাজনৈতিক দলের প্রায় সাড়ে ৬শ’ প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ২৮৮ জন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। এছাড়া কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৮ হাজার ৫৮৯ জন। সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ২ হাজার ৫৩৩ জন। ৭২ লাখের বেশি ভোটার এ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। ফুলপুরের ওসি প্রত্যাহার ॥ এদিকে নির্বাচনের একদিন আগে ময়নমসিংহের ফুলপুর থানার ওসি মাজহারুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপসচিব সামসুল আলম জানান, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠায় তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পক্ষপাতিত্ব ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে এ নিয়ে সাত ওসি প্রত্যাহার করে নিল ইসি। এর আগে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানা, নোয়াখালীর হাতিয়া, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, মাদারীপুরের কালকিনি, চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এ পর্যন্ত শতাধিক প্রার্থী-সমর্থকদের জরিমানা করেছেন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ছয় সাংসদকেও সতর্ক করে নোটিস দিয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরার কলারোয়া ও জয়পুরহাটের রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও বদলি করা হয়েছে।
×