ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আবুল মাল আবদুল মুহিত

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

ছাত্রজীবনের অবসান (২৮ ডিসেম্বরের পর) মধ্যপ্রাচ্যে তাদের এজেন্ট ইসরাইলও এই সুযোগে মিসর আক্রমণ করলো এবং সাইনাই উপত্যকা পুরোটাই দখল করে নিল। বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো। তবে তা প্রশমনে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের প্রভাবে মিসরের পদক্ষেপ গৃহীত হলো এবং মার্কিন-ফরাসি আক্রমণ বন্ধ হলো। পাকিস্তানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর আকর্ষণ ছিল ইঙ্গ-মার্কিন বলয়। তিনি ইঙ্গ-ফরাসি পদক্ষেপটির মৃদু সমালোচনা করে পার পেয়ে গেলেন। তবে তার পশ্চিম ঘেঁষা নীতি অন্ততপক্ষে পূর্ব পাকিস্তানে তেমন জনপ্রিয় ছিল না। প্রধানমন্ত্রী সোহ্রাওয়ার্দী এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করলেন ডিসেম্বর মাসে। ১৯৫৫ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি সলিমুল্লাহ হলের মাঠে বিরাট ছাত্রসভায় তার পররাষ্ট্র নীতির যৌক্তিকতা সজোরে তুলে ধরেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, আদর্শগতভাবে বিভক্ত পৃথিবীতে কোন একটি বলয়ের সঙ্গে তার অন্তর্ভুক্ত না হয়েও সংযুক্ত থাকা উচিত। সেখানে তার তত্ত্বকথা ‘জিরো + জিরো’র অসারতা অত্যন্ত জোরালো ভাষায় উপস্থাপন করেন। প্রধানত পশ্চিমাবিরোধী ছাত্রদলের এই বিরাট সভায় পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। সোহ্রাওয়ার্দী সাহেব তার জোরালো বক্তৃতা সমাপ্ত করেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন ব্যাপক পরিবর্তন এলো আমার জীবনেও তখন প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটলো। আমি ইতোমধ্যে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে নিযুক্তি পাই এবং লাহোরে সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেয়ার জন্য ৯ সেপ্টেম্বর সেখানে চলে যাই। লাহোরে আমার এক দাদা এস এম আকরম সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে অবসর পেয়ে সেখানেই বসবাস করতেন। আমি তার বাড়িতে গিয়ে কয়েক দিনে লাহোর মহানগরটি ঘুরে দেখার সুযোগ নিলাম। লাহোর আমার কাছে তেমন বড় শহর বলে মনে হয়নি। তবে একটি সুন্দর ছিমছাম নগর বলে প্রতিভাত হয়। সবচেয়ে ভাল লাগে লাহোরে সেচকার্যের জন্য পানি সরবরাহ ব্যবস্থাটি। প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে খালের পানি ছেড়ে দেয়া হতো বাগান এবং মাঠে ব্যবহারের জন্যে। এভাবে লাহোরকে একটি সবুজনগর হিসেবে রাখার প্রয়াস নেয়া হতো। শালিমার বাগানের পরিকল্পনা এবং পানি ও সবুজের খেলা খুবই আকর্ষণীয় মনে হলো। যাহোক, আমার ছাত্রজীবনের পরিসমাপ্তিতে আমি ফিরে যাচ্ছি। পূর্ব বাংলায় আমার ঢাকা জীবনের শেষ হলো ৯ সেপ্টেম্বর। আমার হিসেবে ঢাকায় সলিমুল্লাহ হলে ৫ বছর ৯ দিন অবস্থান করে আমার ছাত্রজীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং নিয়মিত চাকরি জীবনের সূচনা হয়। আমার ছেলেবেলা এবং ছাত্রজীবনের কাহিনী শেষ করার এটিই হলো যুক্তিযুক্ত সময়। আমার স্মৃতিকথার প্রথম বইটি আমি এখানেই সমাপ্ত করছি। (প্রথম খণ্ড শেষ)
×