ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবু সুফিয়ান কবির

বন্ধু নির্বাচনে সাবধানতা

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

বন্ধু নির্বাচনে সাবধানতা

দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল বলেছেন বন্ধুত্ব হচ্ছে ‘বিশ্বাস’। বন্ধুত্ব হচ্ছে ‘দু’দেহ এক মন’। হেনরি ফোর্ড বলেছেন তোমার ভাল বন্ধু সে-ই যে তোমার মধ্যেকার সর্বাত্মক গুণটা বের করে আনতে পারে। আবার কারও কাছে ‘বন্ধুত্ব হলো জীবনের সূর্যোদয়’। আবার কেউ বলেছেন বন্ধুত্বতা হলো সমমর্মিতা। আসলে বন্ধুত্বের সঠিক সংজ্ঞা দেয়াটা অনেক কঠিন। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যার বন্ধু নেই। বলা হয় একজন ভাল বন্ধু পাল্টে দিতে পারে একজনের জীবনের পেক্ষাপট। কেউ কেউ বন্ধুদের মাধ্যমে পেয়ে থাকে জীবনের চরম সাফল্য। বলা হয় বন্ধুত্ব হলো একজনের নিস্বার্থ জীবনসঙ্গী। এখানে দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে লাভ ক্ষতির কোন হিসাব হয় না। কিন্তু বর্তমানে একজন আর একজনে টপকে উপরে ওঠার যে প্রতিযোগিতা এখানে বন্ধু নির্বাচনে কিছুটা সাবধান হতে হবে। না হলে পড়তে হবে নানা ধরনের বিপদে। বন্ধুর সম্পর্কে তৈরি হবে বিরূপ ধারণা। বন্ধু নানা ধরনের আছে যেমন মহল্লার বন্ধু, ছাত্র জীবনের বন্ধু, ক্লাব বা সাংগঠনিক সভার বন্ধু আর কর্মক্ষেত্রের বন্ধু। তবে কর্মক্ষেত্রের বন্ধত্বের কখনও কখনও হয়ে পড়ে জটিল মানসিকতার। আজকাল বিভিন্ন অফিসেই থাকে নানা মতলববাজ মানুষ যারা বন্ধুর মতো আচরণ করলেও অযাচিত কোন অশুভ কারণে সহকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি করে নানা জটিলতা। তাই এই বিষয়গুলো আমাদের খুব সতর্কতার সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। সহকর্মী হলেই সে বন্ধু হবে তা নয়। কর্মক্ষেত্রে যতটুকু পারা যায় সহকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে কারও ক্ষতি না করে নিজের দায়িত্ব নিজে পালন করা । নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের ক্ষতি করতে গেলে সেখানে বন্ধুত্ব নামের সম্পর্কটিতে ফাটল ধরে। অনেক বন্ধু আছে যারা কোন বন্ধুকে সামনে বসিয়ে রেখে অন্য বন্ধু বা পরিচিতজনদের সঙ্গে মোবাইলে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলতে থাকে। বিষয়টি অবশ্যই দৃষ্টিকটু। যা সামনে বসে থাকা বন্ধুর জন্য অবশ্যই বিরক্তিকর ও অপমানজনক। কয়েকজন বন্ধু যখন আড্ডা দেয় তখন কেই কেউ অন্যের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে কথা বলে যা করলে অন্যান্য বন্ধুরা বিড়ম্বনায় পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে তা অন্যান্য বন্ধুদের জন্য তিরস্কার করার মতো। কেউ কেই আছে প্রতিদিনের আড্ডায় এসে বন্ধুদের সঙ্গে সঙ্গে দেয় এবং যখন চা খায় তখন কোনদিন বিল দেয়ার কথা চিন্তা করে না। এটা বন্ধুত্বের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে। যার যতটুকু ক্ষমতা তাকে সেভাবেই বিল পরিশোধের চেষ্টা করতে হবে। আর এই ধরনের সুযোগ যে বন্ধু নিতে চায় তাকে এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা এই বন্ধুরা কখনই উপকারে আসে না। তারা শুধু উপকার নিতে জানে। জীবন চলার পথে এমন বন্ধু নির্বাচন করতে হবে যার কোন স্বার্থের মোহ থাকে না। বন্ধুরাই একজন একজনের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরায়। আবার বন্ধুত্বের মাধ্যমে অনেক মহৎ কিছু লাভ করা যায়। আবার অনেক বন্ধু আছে যারা একই ক্লাসের বন্ধুত্বের মধ্যে স্বার্থের টানাপড়েন খুব একটা বেশি থাকে না কিন্তু মহল্লা, অফিস বা সংগঠনের বন্ধুদের মধ্যে নান ধরনের স্বার্থ নিহিত থাকে। বন্ধু নির্বাচনে সব সময় বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। প্রথমত যে সব সময় অন্যের সমালোচনা করে অন্যের সম্পর্কে কটু মন্তব্য করে তাকে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব না করাই উচিত। যে ধূমপান ও মাদকের সঙ্গে জড়িত তাকে সব সময় এড়িয়ে চলতে হবে। যে কথা দিয়ে কথা রাখে না এবং সর্বদা মিথ্যা কথা বলে তাকে বন্ধু হিসেবে কখনও ভাববেন না। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন না যারা অহেতুক টাকা ধার নিয়ে তা দেয়ার চিন্তা করে না। মনে রাখবেন বন্ধু হিসেবে তাকে বেছে নিন যার সঙ্গে মনের কথা বিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন। যে আপনাকের অনুপ্রেরণা যোগায় জীবনের পথে সামনে এগিয়ে চলার জন্য। মনে রাখবের সেই ভাল বন্ধু যে কোন প্রকার ধর্মীয়, বা আর্থিক অবস্থার বিবেচনায় না নিয়ে আপনার পাশাপাশি পথ চলতে চায় এবং আপনাকে সব সময় হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করে বুঝতে চায়। মনে রাখবেন বন্ধু মানে আপনার খারাপ কাজের সমালোচনা করবে আপনার ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেবে। যে মানুষ তার বন্ধুর দ্বারা কোন অন্যায় ঘটতে দেখলে তাকে ছেড়ে না পালিয়ে গিয়ে তাকে শাসন করে, তাকে সাময়িক শাস্তি দিয়ে পুনরায় অন্যায় ঘটানো থেকে বিরত করে। মনে রাখবেন যার সঙ্গে মনের কথা বলা যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সেই আপনার প্রকৃত বন্ধু। বন্ধুত্বের ব্যাপারে একটি কথা মনে রাখবেন যে মানুষ এটা হিসেব করে আমি আমার সবসময়ের বন্ধুর কাছে কতটুকু পেলাম। তাকে বন্ধুর হিসেবের বাইরে রাখুন আর যে বন্ধু এটাই চিন্তা করে যে, আমি কতটুকু দিলাম, তাকেই বন্ধু হিসেবে বুকে আঁকড়ে ধরুন। মনের রাখবেন বন্ধুর উদারতার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। ববং তার উদার হৃদয়ে যেন কোন আঘাত না হয় সেভাবেই পথ চলতে হবে আপনাকে। মডেল : সাইফ, প্রীতি ও শাওন হাউস : চারুলতা কুটির
×