ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন বছর, নতুন ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

নতুন বছর, নতুন ভাবনা

বিদায়ী বছরের বিষন্নতা কে ছাপিয়ে মন কে উৎফুল্ল করে তোলে নতুন বছরের আগমনী বার্তা। ক্যালেন্ডারের শেষ পাতাটি ছিড়ে একসঙ্গে উচ্চারিত হয় হ্যাপি নিউ ইয়ার। নতুন দিনের সূচনা,নতুন করে পথচলা। নতুন প্রান চাঞ্চল্য, নতুন শপথ সব কিছুই যেন একাকার হয়ে বছরের প্রথম দিনটিতে এসে। অতীত কে মুড়িয়ে দিয়ে নতুন এক সময় কে বরণ করে নেয়ার শিহরণই যেন অন্যরকম। প্রতি মূহুর্তেই চলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার প্রস্ততি। বন্ধু প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে শুরু নতুন বছরের দিন। পুরোনো গ্লানি মুছে নতুন ভাবে বাঁচার প্রত্যয়ে শুরু হয় নববর্ষ। যে কারনে উম্মাদনাও একটু বেশি থাকে নববর্ষকে ঘিরে। বিভিন্ন উৎসব পার্বনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় হয় নতুন বছরকে। ইংরেজী নববর্ষ পালনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসব হচ্ছে থার্টি ফাস্ট নাইট। বছরের শেষ এ দিনটিতে পুরো বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় নববর্ষের উৎসব। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সুর ও সঙ্গীতের মূর্ছণায় মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। আতশবাজির আলোকছটায় ছেয়ে যায় আকাশ। শুরু হয় প্রিয়জনদের শুভেচ্ছ বার্তা পাঠানো। একে অপরকে উপহার আদান প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয় নতুন বছর। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই পালন করে হয়ে থাকে ইংরেজী নববর্ষ। সবেমাত্র নতুন বর্ষ আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো আরেকটি নতুন বছরের। পথচলা এই নয়া বছরের অগ্রগতি যেন সঠিকভাবে সামনে এগিয়ে যায় তার জন্যও ছিল আকর্ষণীয় সব আয়োজন। মনে হয় নতুনকে নতুনরূপে বরণ করলে বা সাদর সম্ভাষণ না জানালে পুরোনটাই আঁকডে থাকবে। তাই তো উৎসমুখর পরিবেশে গোটা দুনিয়ার মানুষের পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষও একত্মতা ঘোষণা করে, বর্ষবরণ করে নিয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তরুণদের আবেশী বা আনন্দঘন চিন্তা-ভাবনা। বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্য হাজার বছরের। বারো মাসে তেরো পার্বণে অভ্যস্ত বাঙালি জাতি খুবই উৎসব প্রিয়। যে কারনে নিজস্ব উৎসব ছাড়াও অন্যের উৎসবেও রঙ ছড়াতে দ্বিধাবোধ করেনা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ জাতি ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে বেশ জাকজমক পূর্ন ভাবে। প্রিয়জনকে ফুল, মিষ্টি আর কার্ড আদান প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয় হয় নতুন বছরকে। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। গান, আলাপ চারিতা, উপহার আদান প্রদান আর ঘুরে বেড়ানো ট্রেডিশন এখন এদেশেও চালু হয়েছে। যদিও ইংরেজি বলা হয় তথাপি গ্রেগরিয়ানের ক্যালেন্ডার বিশ্ববাসীর সম্পদ। কারও নিজস্ব নয়। আমাদের দেশেও এর শিকড় অনেক গভীরে। গ্রাম বাংলার কিছু অঞ্চলে বাঙালীর নিজস্ব ক্যালেন্ডার ফলো করা হলেও সমাজ রাষ্ট্রের সব কাজ গ্রেগরিয়ান ক্যানেন্ডারকে অনুসরন করে করা হয়ে থাকে। যে ইংরেজী নববর্ষ আমাদের জীবনে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ইংরেজী নববর্ষের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে বছরের শেষদিনটিতে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ব। সমম্বরে চিৎকার করে ওঠে হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে। ঘুম ভাঙ্গা মানুষেরা জড়ো হয় নতুন অভিযাত্রা, নতুন রূপান্তরের তাগিদে। গেয়ে ওঠে নববর্ষের গান। আমাদের দেশে ইংরেজী নববর্ষের দিন সরকারী ছুটি না থাকলেও অন্যান্য দেশে রয়েছে। কারন থার্টি ফাস্ট নাইট এত বেশি উৎসবের মেজাজে থাকে যার ফলে পরের দিন কর্মব্যস্ত মুড আর আসেনা। আমাদের দেশেও থার্টিফাষ্ট নাইট জাতীয় ভাবে পালন করা না হলেও পাড়ায় পাড়ায় কিংবা মহল্লায় বেশ জাঁক জমক ভাবেই তা পালন করা হয়। থার্টি ফাষ্ট নাইট এর সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশকারী বোদ্ধদের মতে, এদেশে থার্টি ফাষ্ট নাইট ভুল ব্যাখ্যায় পালিত হয়। এলকোহল কিংবা মাদকের নেশায় ডুবে হৈ হুল্লড় করাই বুঝি থার্টি ফাষ্ট নাইট। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। শীত প্রধান দেশে এলকোহল অনেকটা পানি খাওয়ার মতোই স্বাভাবিক। ওরা এটাতে অভ্যস্ত। এবং এর জন্য ওরা জ্ঞানহীন কোন কাজ করে বসেনা। পরিবার পরিজন নিয়ে খাওয়া দাওয়া, গান গাওয়া উপহার আদান প্রদান করা কিংবা ড্যান্স পার্টিতে এটেন্ট করা পর্যন্তই। যা তাদের কালচারে খুবই মানানসই। আমাদের দেশেরও নিজস্বতা আছে। আমরারও আমাদের মতো করে উদ্যাপন করতে পারি। কিন্তু অন্যের টা ধার করতে গিয়েই বাধিয়ে ফেরি বিপত্তি। একটি বছরের বিদায় আর নতুন বছরের আগমন সত্যিকার অর্থেই জীবন যাপনে প্রভাব ফেলবে। বিষাদের গ্লানি দূর করে নতুনকে স্বাগত জানানোর উম্মাদনা থাকবেই। সেটা উপহার আদান প্রদান, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে, গান গেয়ে কিংবা বর্ষ বিদায় ও স্বাগত অনুষ্ঠান করে এবং পরিবার পরিজনকে ভালো সময় উপহার দিয়ে পালন করা যেতে পারে। কিন্তু খারাপ কোন পন্থায় যা দৃষ্টি কটু এমন কিছু দিয়ে বর্ষ বরণ কখনই হতে পারেনা। এতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর চেয়ে অপমানই করা হয়। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই থার্টি ফাস্ট নাইট নিয়ে অনেক উম্মাদনা থাকে কিন্তু এর মধ্যেও থাকে নির্মলতা। কখনই থার্টি ফাষ্ট নাইট নিয়ে কোন দূর্ঘটনা বা দূর্নাম পাওয়া যায়নি। অথচ আমাদের সমাজে থার্টি ফাষ্ট নাইটে কোনও কোন দূর্নাম কিংবা দূর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ নির্মল আনন্দ যেন খুজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাড়ায়। তবে মানুষ এখন অনেক সচেতন। যে কারনে এদেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্মল আনন্দের থার্টি ফাষ্ট নাইট অনুষ্ঠানের দেখা মেলে। বিশেষ করে ঢাকা শহর এখন ফ্ল্যাটের শহর বলা যায়। একই ছাদের নিচে অনেকগুলো ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা মিলে থার্টি ফাষ্ট নাইটে এক সঙ্গে রাতের ডিনারের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে থার্টি ফাষ্ট নাইট। কর্ম ব্যস্ত জীবনে ফ্ল্যাটের সবার সঙ্গে দেখা হওয়া এবং আলাপ চারিতার গুঞ্জনমুখর এ সময়টিই বা কম কি। একটি বছর গড়িয়ে আরেকটি বছর শুরু হয়। গত বছরের সব ব্যর্থতাকে মুছে দিতেই নতুন বছরের আগমন ঘটে এটাই আমাদের বিশ্বাস। দেশের মঙ্গল কামনা কিংবা নিজেদের মঙ্গল কামনা যাই বলি না কেন এ যেন সৌহার্দ সম্প্রীতির জন্যই। হাতে হাত ধরে সুন্দর একটি বছর পার করার কামনা, সাফল্যের ঝুড়ি প্রসারিত করা, বিশ্বের মানচিত্রে সফলদেশের একটি হিসেবে নিজের দেশকে তুলে ধরাই সবার কাম্য। আমাদের ছোট এ দেশ। আমাদের অবহেলাতেই নষ্ট করে ফেলছি। নতুন বছরের দৃঢ প্রত্যয় হওয়া উচিত আমাদের এ হাত দিয়েই যেন দেশের মঙ্গল বারতা বয়ে নিয়ে আসতে পারি। একেকটি বছর এখন থেকেই যেন আমাদের সফলতার বছর হয় সে লক্ষেই দেশের প্রতি নিবেদিত হওয়া উচিত। আমাদের সফলতার বার্তা ও নতুন বছরের শুভেচ্ছ আমরাই পৌছে দিব বিশ্ববাসীকে। আর চিৎকার করে বলবো শুভ হোক নতুন বর্ষ। শুভ নববর্ষ। ছবি : আরিফ আহমেদ মডেল : মেহজাবিন ও হাসিন
×