ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন তিস্তাপাড়ের নারীরা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন তিস্তাপাড়ের নারীরা

তাহমিন হক ববি, নীলফামারী ॥ তিস্তাপাড়ের গৃহবধূ মিনা বেগমের ৩৫ বছরের জীবনযুদ্ধের কথা কোন সিনেমার কাহিনী মনে হলেও এটি যে বাস্তবতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক সময় তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে অসহায় হয়ে গাইডবাঁধে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করে আসছিল অনেক পরিবার, যাদের অতীত সময়ে গোলাভরা ধান পুকুরভরা মাছ, গোয়ালভরা গরু ছিল। নদী ভাঙ্গনে তারা হয়ে পড়েছিল নিঃস্ব। ভিটের মাটিটুকু পর্যন্ত ছিল না তাদের। ত্রাণের পানে চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হতো তাদের। অভাব-অনটন, অনাহার-অর্ধাহার ছিল জীবনের সঙ্গী। তাদের দিনবদলের হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভাব হয় বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় এবং অক্সফামের অর্থায়নে বেসরকারী সংস্থা পল্লীশ্রীর রি-কল প্রকল্প। তিস্তাপাড়ের অসহায় নারীদের জীবনমান পরিবর্তনে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে এই সংস্থাটি তিস্তাপাড়ে কাজ শুরু করে। ধাপে ধাপে অসহায় পরিবারের নারীদের নিয়ে এই প্রকল্পে ৩৪টি সিবিওর গঠন করে। এতে মোট নারী সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় চার হাজার ৪৩২ জন। গত চার বছরে পুরো জীবনযাত্রার মান পাল্টে ফেলেছে এসব নারী। তিস্তার চরে ফসল উৎপাদন করে তৈরি করে ফেলেছে ফুড বাস্কেট। ভুট্টার আবাদ ও ব্যবসা, কাপড় সেলাই, গবাধিপশু পালন, এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলে বসেছে এই নারীরা। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখায় এসব নারী তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে অনলাইন মার্কেট ধরতে ব্যবহার করছে ট্যাব বা স্মার্টফোন। তাদের আমূল পরিবর্তনের ধারা চারটি বছরে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই পরিবর্তনের ধারায় নারী সদস্যের জীবন-জীবিকা, জীবনমান, আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, জীবন ব্যবস্থা, তাদের চলাফেরা, প্রযুক্তি, পরিবারের সদস্যসংখ্যা, উপার্জনের ব্যবস্থাসহ নানা দিক নিয়ে গত চার দিনব্যাপী ধরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় বেইস লাইন সার্ভে করেছে ২৮ জন শিক্ষার্থী। এরা সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রী। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর চার দিন ধরে এই জরিপ চালায় তারা। সার্ভে টিমের সদস্য জিহান ইব্রাহিম জানান, তিস্তাপাড়ের বসবাসকারী নারীরা কিভারে জীবন অতিবাহিত করছে সেইগুলোই ফুটে উঠেছে জরিপে। হাতে-কলমে এই শিক্ষা নিতে এসেছি। তবে এসে দেখেছি এসব দরিদ্র ও হতদিরদ্র নারীর জীবন-জীবিকার মান কতটা নিম্নগামী। পল্লীশ্রীর প্রতীক প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার মকিম চৌধুরী বলেন, এ সার্ভের মাধ্যমেই এই জনপদের নারীদের জীবন-জীবিকায়নে একটি পরিপূর্ণ রূপ ফুটে উঠবে।
×