ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আবুল মাল আবদুল মুহিত

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

ছাত্রজীবনের অবসান (২৭ ডিসেম্বরের পর) পরবর্তী মাসে পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তির পুনর্বিন্যাস শুরু হলো। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ এবং ফজলুল হক সাহেবের প্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক দুর্বল দল কৃষক-শ্রমিক-প্রজা পার্টি হলো ক্ষমতা প্রয়োগের প্রতিদ্বন্দ্বী। এই অঙ্গনে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা দল মুসলিম লীগ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তবে তাদের রক্ষণশীল চিন্তাধারা কৃষক-শ্রমিক-প্রজা পার্টিতে চলতে থাকলো। পশ্চিম পাকিস্তানে কিন্তু মুসলিম লীগই তখন ছিল ক্ষমতাসীন প্রধান দল। যদিও সেখানে নেতাভিত্তিক অসংখ্য উপদল ছিল। এবারে এই অপরিচ্ছন্ন অঙ্গনে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হলো। পশ্চিম পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ড. আবদুল গফুর খানের নেতৃত্বে স্থাপিত হলো নতুন দল রিপাবলিকান পার্টি। বিরোধী দল হিসেবে থাকলো একটি ছোট দল মুসলিম লীগ এবং একটি দেশশত্রু দল মওলানা মওদুদীর জামায়াতে ইসলাম। বাংলাদেশে আবু হোসেন সরকার কৃষক-শ্রমিক-প্রজা পার্টির রাজত্ব চালিয়ে গেলেন এই বছরের প্রথম আটটি মাস, যদিও প্রাদেশিক পরিষদে তার সমর্থন ছিল না। আওয়ামী লীগে ফরিদপুরের আবদুস সালাম খানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী উপদল ছিল। ১৯৫৬ সালের ১৫ আগস্ট এই দলটি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করলো। কিন্তু তারা একটি বিকল্প আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলেন। আওয়ামী লীগ এবং তার সমর্থক দলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল একেবারেই সুস্পষ্ট। প্রায় এক বছর প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন বন্ধ রেখে আবু হোসেন সরকার অবশেষে ৩০ আগস্ট পদত্যাগ করলেন। ৫ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান হলেন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ১২ সেপ্টেম্বর সোহ্রাওয়ার্দী পাকিস্তানের একটি স্বল্প পরিসর মন্ত্রিপরিষদের নেতা হিসেবে হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হলেন ময়মনসিংহের আবুল মনসুর আহমেদ, সিলেটের মোঃ আবদুল খালেক, খুলনার এ এইচ দিলদার আহমেদ এবং ঢাকার জহির উদ্দিন। এছাড়া রসরাজ মণ্ডল, আবদুল আলীম এবং নূরুর রহমান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে তিনজন প্রতিমন্ত্রী। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এই মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন মালেক ফিরোজ খান নূন, ধনকুবের সৈয়দ আমজাদ আলী, সিন্ধু এলাকার গোলাম আলী তালপুর, সীমান্ত প্রদেশের সরদার আমির আজম খান এবং পাঞ্জাবের মিয়া জাফর শাহ। প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সিন্ধু প্রদেশের হাজী মওলা বকস্ সমরু। এই মন্ত্রিসভা মাত্র এক বছর ক্ষমতাসীন ছিল। ১১ আগস্ট ১৯৫৫ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ পর্যন্ত। কিন্তু এই এক বছরে এই মন্ত্রিসভা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। বিশেষত উন্নয়ন ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তান তখন সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে। ১৯৫৬ সালে অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ মধ্যপ্রাচ্যে এক মহাবিপর্যয় দেখা দেয়। ইউনাইটেড আরব আমিরাতের (মিসর) ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রপতি নাসের সুয়েজ খালের জাতীয়করণ করলেন। এতদিন সুয়েজ খালের কর্তৃত্ব করত মিসরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। তারা নাসেরের এই পদক্ষেপ মানলেন না এবং সুয়েজ খালে ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করলেন। চলবে...
×