ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ হলো শিশুকিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

শেষ হলো শিশুকিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাস্নাত শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। আগামীর ভবিষ্যত নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশাত্মবোধ সঞ্চারী সংগঠনটির রয়েছে দেশব্যাপী সাড়ে ছয় শতাধিক শাখা। এসব শাখার সম্মিলনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় তিনদিনের জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উৎসবের মাধ্যমে আয়োজন করা হয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নেয় সারাদেশের ৫৬টি জেলা থেকে বাছাইকৃত সংগঠনের খুদে সদস্যরা। ছড়া গান, দেশের গান, লোকসঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি ও আবৃত্তিসহ ১৮টি বিষয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় প্রতিযোগীরা। শনিবার উৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ী প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার ও সনদপত্র তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ‘বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার হিন্দু, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার মুসলমান/আমরা সবাই বাঙালি’ ও ‘আজ যত যুদ্ধবাজদের’ গান দুটো গেয়ে শোনায় বহ্নিশিখার শিল্পীরা। রায়বেশে নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। আবৃত্তি করেন শাহাদাৎ হোসেন নিপু। এছাড়াও সমবেত পরিবেশনায় অংশ নেয় খেলাঘর খুলনা, চাঁদপুর ও শেরপুরের শিশু-কিশোররা। সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন উদ্্যাপন ॥ কবি-সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হকের ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ রবিবার। তবে শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় জন্মদিনের দু’দিন আগেই শুক্রবার উদ্্যাপিত হয় কবির জন্মদিন। বাংলার মাটি ও মানুষের কথা বলা এই কীর্তিমান কবি ও কথাশিল্পীর জন্মদিন উদ্্যাপন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ। দেয়া হয় তাঁকে সংবর্ধনা। জাতীয় জাদুঘরের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে জাদুঘর চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় আয়োজনটি। অনুষ্ঠানে সৈয়দ শামসুল হক উপস্থাপন করেন ৮০তম জন্মবার্ষিকীর অনুভূতির ভাষণ ‘দৃষ্টিভূমিতে দীর্ঘছায়া’। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। স্বাগত ভাষণ দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। তিনি বলেন, সৈয়দ শামসুল হক আজ আপনি রবীন্দ্রনাথের সমবয়সী হলেন। আপনাকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিবাদন। শুভেচ্ছা বক্তব্যে জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত বলেন, আজ আমাদের বাংলা সাহিত্যের একটি স্বর্ণালী দিন। অনুষ্ঠানে সম্মাননাপত্র পাঠ করেন কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি কবি রবিউল হুসাইন। এরপর কবি সৈয়দ হককে সম্মাননা পত্র, সম্মাননা ক্রেস্ট এবং ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়া হয়। জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি কবি রফিক আজাদ বলেন, আজ বাংলা সাহিত্যের একটি আনন্দঘন দিন। আমার সবচেয়ে প্রিয় কবি, যার কবিতা আমাকে ভীষণ টানে। সৈয়দ হক কুড়িগ্রামের মনভূমি জলেশ্বরীকে বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলা ভাষার নতুন ভাষা নির্মাণ করে সব শাখাকে উন্নত করেন। কবি বেলার চৌধুরী শুভেচ্ছা জানান সৈয়দ হককে। বাংলা একাডেমির বার্ষিক সাধারণসভা ॥ বাঙালীর মননের প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। শনিবার অনুষ্ঠিত হলো প্রতিষ্ঠানটির ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এই বার্ষিক সাধারণ সভা। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুরের ধারা’র শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সভা। এরপর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণী ব্যক্তিত্বদের স্মরণে পাঠ করা হয় শোক প্রস্তাব এবং তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। সভায় বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি পুরস্কার এবং দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০১৫ প্রদান করা হয়। সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বাংলা কবিতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কবি মোহাম্মদ রফিককে মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার ২০১৫, বাংলা কবিতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কবি কায়সুল হককে সা’দত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫, বিজ্ঞানসাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক অজয় রায়কে মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার ২০১৪ এবং বিবর্তনের পথে ইতিহাসের বাঁকে গ্রন্থের জন্য বিজ্ঞানলেখক আসিফকে হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান-লেখক পুরস্কার ১৪২০-২১ প্রদান করা হয়। কবি মোহাম্মদ রফিক ও অধ্যাপক অজয় রায়কে তাঁদের প্রাপ্য পুরস্কার মূল্য হিসেবে এক লাখ টাকা, কায়সুল হককে পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং আসিফকে ত্রিশ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। এ বছরে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সাংবাদিক আবেদ খান, অধ্যাপক অনুপম সেন, জনাব মাহফুজ আনাম, শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার ও অধ্যাপক স্বপন আদনান। মাহফুজ আনাম বিদেশে অবস্থান করায় তাঁর পক্ষে ভ্রাতৃবধূ ফেরদৌসী আনাম এবং পাপিয়া সারোয়ার বিদেশে অবস্থান করায় তাঁর পক্ষে স্বামী সারোয়ার এ আলম ফেলোশিপ সম্মাননা গ্রহণ করেন। পুরস্কার এবং ফেলোশিপপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র ও সম্মাননা-স্মারক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভায় সারাদেশ থেকে সাধারণ সভায় সারাদেশ থেকে বাংলা একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য এবং সদস্যসহ প্রায় দেড় হাজার বিশিষ্টজন অংশগ্রহণ করেন। সভায় গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ৩৭তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সারাদেশ দেশ থেকে আগত একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য ও সদস্যদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন ঘোষণা করেন বার্ষিক সাধারণ সভা ২০১৫ এবং বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
×