ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পৌরসভা নির্বাচন

প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত, আগামীকাল শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত, আগামীকাল শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরসভা নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত রয়েছেন নির্বাচনী প্রচারে। তবে রাত-দিন নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকলেও প্রার্র্র্র্র্থীদের প্রচার সময় শেষ হয়ে আসছে। আগামীকালের মধ্যে সব ধরনের প্রচার শেষ করতে হবে। ইসি জানিয়েছেন আগামীকাল রাত ১২টার পরে নির্বাচনী এলাকায় কোন ধরনের জনসভার আহ্বান, সেখানে যোগদান, কোন মিছিল বা শোভাযাত্রা করা বা সেখানে কেউ যোগদান করতে পারবেন না। পৌরসভা নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগ থেকে সব ধরনের প্রচার শেষ করতে হবে। এরপরই নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে স্টাইকিং ফোর্স কাল থেকে সব নির্বাচনী এলাকায় টহল প্রদান করবে। এছাড়াও ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সব ধরনের প্রচার ও মিছিল জনসভার ওপর নিষেজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকায় ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে ভোটের সব ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী সরঞ্জাম রিটার্নিং কার্যালয়ে পাঠাতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তারা জানিয়েছে ২৩৩ পৌর সভায় মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের জন্য ২ কোটি ১০ লাখ ব্যালট পেপা ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করেছে বিজি প্রেস। সেখান থেকে রিটার্নিং অফিসারের প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব ব্যালট পেপার শুক্রবার থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভোটের আগের দিন রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এগুলো সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কেন্দ্রে পাঠানো হবে। এছাড়া ভোটের আগের দিন রাত থেকে নির্বচনী কেন্দ্রের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে চলে যাচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে ইতোমধ্যে কেন্দ্র দখল বা ভোটের আগেই ব্যালট পেপারে সিল মারার বিষয়ে কড়া সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে। কেউ যাতে এ জাতীয় কাজের সঙ্গে জড়িত হতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ভোটের আগে সব ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করে ভোট শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের। এদিকে নির্বাচনী এলাকায় যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইসির নির্দেশনা মেনে ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। পৌরসভা এলাকায় বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পোতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারী নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরী পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে ২৩৩ পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদের ২ কোটি ১০ লাখের বেশি ব্যালট পেপার ছাপা শেষে বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার সরকারী ছাপাখানা থেকে এসব ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ করা হয়। তবে আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় তিন পৌরসভার দেড় লাখের বেশি ব্যালট পেপার পুড়িয়ে নষ্ট করে নতুন করে ছাপতে হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় প্রায় ৩৫ হাজার ব্যালট পেপার আর কাজে লাগছে না। তারা জানিয়েছে আদালত নতুন কোন আদেশ দিলে নতুন করে ব্যালট পেপার ছাপানোর প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যেসব এলাকায় ভোটগ্রহণের ঝুঁকি রয়েছে বা যেসব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হবে। জানা গেছে ইতোমধ্যে তিন হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ও নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভোটে থাকা ২৩৩ পৌরসভার মোট ৩৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টিই ঝুঁকিপূর্ণ। যা মোট ভোটকেন্দ্রের ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগের ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া রংপুর বিভাগে ৩০৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি, বরিশাল বিভাগে ১৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি, ঢাকা বিভাগে ৯৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৬টি এবং সিলেট বিভাগে ১৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, সারাদেশে বিভিন্ন কেন্দ্রে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী (বিদ্রোহী) থাকায় দলীয় অন্তর্কোন্দলের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতা হতে পারে। ভোটের দিন পাঁচ কারণে গোলযোগের শঙ্কার কথা জানিয়ে তা নিরসনে দুই দফা সুপারিশসহ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা পাঠানো হয়েছে। যাতে ভোটে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়। এতে বলা হয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীদের জয়ী করতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে পারে। নাশকতা বা গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালাতে পারে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও একচেটিয়া ভোট পাওয়ার চেষ্টায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীরা কিছু কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচনকে বিতর্কিত কিংবা রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে বিএনপি জামায়াত গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া ভোটের পর পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এলাকায় গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, একাধিক প্রার্থীর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রে গোলযোগ করতে পারে বলেও গোয়েন্দারা মনে করছেন। এসব কারণে প্রতিবেদনে পৌর নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করার পাশাপাশি ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগ থেকে নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রাখা উচিত। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ভোট গ্রহণের আগ থেকে নির্বাচনের পর পর্যন্ত সর্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ ডিসেম্বর বুধবার পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৯ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ২০ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ২৩৩ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মুহূর্তে এসে আদালতের আদেশের কারণে ঠাকুরগাঁয়ের রানীশংকৈল পৌর সভায় নির্বাচন স্থগিত করেছেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১২ হাজারেরও বেশি প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচনে ভোটার ৭০ লাখের বেশি ভোটার ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
×