ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাশিল্পে অশ্লীলতা বন্ধে নজরদারি বাড়ানো দরকার ॥ তাপস সরকার

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

যাত্রাশিল্পে অশ্লীলতা বন্ধে নজরদারি বাড়ানো দরকার ॥ তাপস সরকার

অভিনয়শিল্পী তাপস সরকার। দীর্ঘদিন ধরে যাত্রা, মঞ্চ, টিভি ও বেতার নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন যাত্রাদল লোকনাট্য গোষ্ঠী। দলটির প্রতিষ্ঠালগ্নের আহ্বায়ক পরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মহান বিজয়ের ৪৪তম বার্ষিকী ও আবহমান বাংলার ঐতিহ্যচর্চায় শিল্পকলা একাডেমিতে সংগঠনটির আয়োজনে চলছে যাত্রা উৎসব। যাত্রাশিল্পের বর্তমান অবস্থা ও উৎসব সম্পর্কে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। যাত্রা উৎসব সম্পর্কে বলুন তাপস সরকার : শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে চলমান এ উৎসব আয়োজক কমিটির আমি আহ্বায়ক। আজ রবিবার উৎসবের শেষ দিন। প্রতিবারের মতো এদিন সন্ধ্যায় সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের কয়েকজন গুণী অভিনয়শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সম্মাননা দেয়া হবে। এরা হলেন-যাত্রাভিনেত্রী পূরবী সরকার, যাত্রাশিল্পের পৃষ্ঠপোষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামাল ও দুস্থ মানবতার সেবায় নিবেদিত ইঞ্জিনিয়ার এম এ আওয়াল (পিএমজেএফ)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের অনারারি প্রফেসর নিরঞ্জন অধিকারী ও ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু। সমাপনী সন্ধ্যায় লোকনাট্য গোষ্ঠীর পরিবেশনায়, শ্যামল দত্তের রচনা ও আমার নির্দেশনায় মঞ্চায়ন হবে যাত্রাপালা ‘পার্থসারথি’। উৎসব উদ্বোধনী সম্পর্কে বলুন তাপস সরকার : যাত্রাপালার প্রতি এখনও মানুষের আগ্রহ রয়েছে, তার প্রমাণ মিলল শনিবার সন্ধ্যায়। শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে দর্শকের উপস্থিতি ছিলে চোখে পড়ার মতো। লোকনাট্য গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠালগ্ন সম্পর্কে বলুন তাপস সরকার : আমি তখন চারণিক নাট্য গোষ্ঠীর স্বত্বাধিকারী। এ যাত্রা দলের নির্দেশক ও কর্ণধার ছিলেন প্রখ্যাত যাত্রানট এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী অমলেন্দু বিশ্বাস। সময়টা ছিল ১৯৭৮’র ফেব্রুয়ারি। তখন স্বাধীন বাংলাদেশেও নাট্যচর্চায় বেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাভাষার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রেখে আমরা সমমনা কয়েকজন মিলে একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম নাটক করব। সেই চেতনা থেকে জন্ম হলো লোকনাট্য গোষ্ঠীর। অমলেন্দু দা’কে অনুরোধ করলাম আমাদের প্রথম নাটকের নির্দেশনার দায়িত্ব নিতে। দাদা সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। পুরোদমে মহড়া শেষে মঞ্চায়িত হলো ভৈরবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের পালা ‘মা-মাটি মানুষ’। লোকনাট্য গোষ্ঠীর প্রযোজনা নিয়ে বলুন তাপস সরকার : আমাদের সংগঠনটি শুধু নাটকই প্রযোজনা করছে না, পাশাপাশি যাত্রাপালাও মঞ্চে নিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে আমরা ১১টি নাটক ও ৯টিরও বেশি যাত্রাপালা মঞ্চে এনেছি। দেশে যাত্রাশিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন? তাপস সরকার : আপনারা হয়ত অবগত আছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে যাত্রাদল নিবন্ধনের সময় একটা বিশেষ অঙ্গীকারনামা দিতে হয়েছে যে, পালা মঞ্চায়নের সময় কোন অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা যাবে না। দেশের ত্রিশ শতাংশ দল এই নিয়ম মানছে বাকি সত্তর শতাংশ মানছে না। তারা যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করে যাত্রাশিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। যাত্রাশিল্পকে এগিয়ে নিতে করণীয় কি? তাপস সরকার : সরকারের উচিত একটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করে যেখানে যাত্রাপালা পরিবেশন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেখানে গিয়ে নজরদারি করা। মালিক পক্ষেরও সদিচ্ছা নিয়ে যাত্রাশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা উচিত। সরকারীভাবে নাটকের দলগুলোর মতো ভাল ভাল যাত্রাদলকেও অনুদান এবং বিদেশে পালা পরিবেশনের সুযোগ দেয়া উচিত। তাহলে যাত্রাশিল্প আবার প্রাণ ফিরে পাবে। যাত্রাশিল্প নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? তাপস সরকার: ইচ্ছে আছে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতাভিত্তিক যাত্রা পরিবেশনের ব্যবস্থা করা এবং বিজয়ী দলকে ঢাকাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানো। এ ব্যাপারে সরকারসহ অন্যান্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেরও সহযোগিতা কামনা করি। -গৌতম পাণ্ডে
×