ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণ এশিয়ায় আইএস ॥ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় খোরাসান অঞ্চল ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

দক্ষিণ এশিয়ায় আইএস ॥ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় খোরাসান অঞ্চল ঘোষণা

আগামী ৫ বছরের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা করেছে আইএস। ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক সি ক্রিস্টেইন ফেয়ারের গবেষণা প্রতিবেদন আল কায়েদার পুর্নভিবাব এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আইএসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চিত্রটি উঠে এসেছে। এছাড়া বিবিসির প্রতিবেদক এ্যান্ড্রু হসকেন তার নতুন বই ‘ভয়ের সাম্রাজ্য : ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে’ এ পৃথিবীতে খেলাফত প্রতিষ্ঠার নামে কিভাবে আইএস সাতটি ধাপে তাদের ভবিষ্যত কর্মসূচী নির্ধারণ করেছে তা উঠে এসেছে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়াকে আইএস খোরাসান অঞ্চল ঘোষণা করে তাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। সি ক্রিস্টেইন ফেয়ার তার গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেন তাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আল কায়েদার উপস্থিতি ও বিস্তার লাভের উচ্চাকাক্সক্ষা প্রকাশ করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় আল কায়েদার এই নতুন শাখার নাম হচ্ছে জামায়াত কায়দাত আল-জিহাদ ফি শিবাহ্ আল-কারা-আল হিন্দিয়া অর্থাৎ সাধারণভাবে বলা যায়, আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট বা উপমহাদেশে আল কায়েদা সংক্ষেপে আকিস। আকিসের প্রধান নেতার নাম শেখ আসিম ওমর, যিনি পাকিস্তানের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, যার সঙ্গে আল কায়েদার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পাকিস্তানে তিনি খুব স্বাধীনভাবেই তার কর্মকা- চালান। খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে উর্দুতে লেখা তার বেশকিছু বই রয়েছে। সেগুলো পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে- তিসরি জং-ই আজিম অর দাজ্জাল (দি থার্ড ওয়ার্ল্ড এ্যান্ড দি এন্টি-ক্রাইস্ট), দাজ্জাল কা লস্কর : ব্ল্যাকওয়াটার (ব্ল্যাকওয়াটার: দি আর্মি অব দি এন্টি-ক্রাইস্ট) এবং বারমুদা টাইকন অর দাজ্জাল (দি বারমুদা ট্রায়াঙ্গল এ্যান্ড দি এন্টি-ক্রাইস্ট)। বইগুলোর প্রাপ্তি আরও সহজ করতে অনলাইন ভার্সনে বুকস্টোরগুলোর নাম পর্যন্ত দেয়া আছে। জাওয়াহিরির বক্তব্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদী পতাকা উড়ানো হবে। তিনি এমনও আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে, তাদের এই সংগঠনকে বাংলাদেশ, বার্মা, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ এবং কাশ্মীরের মুসলমানরা স্বাগত জানাবে এবং সংগঠন দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের নির্যাতন ও অবিচার থেকে মুক্ত করবে। বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে আইএসের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে এবং এর জন্য উপযুক্ত সময়ও খোঁজা হচ্ছে। তবে দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে সাড়ম্বর ঘোষণার আগেই এ অঞ্চলকে ঘিরে আল কায়েদার উপস্থিতি ছিল। সেখানে দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়ার জন্য আল কায়েদার কেন্দ্র হিসাবে কাজ করেছে আফগানিস্তান। আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছেন। ২০০১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তুমুল আক্রমণের মুখে পড়ার পর আল কায়েদা পাকিস্তান, ইরানসহ আশপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। ৯/১১ এ টুইন টাওয়ারে আক্রমণের পরিকল্পনায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলেই সবাই জানে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী ওই ঘটনার পরই আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায়। আল কায়েদার নেতারা পাকিস্তান পালিয়ে যায়। পাকিস্তানে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে আমেরিকার সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান শেষ হয়। আফগান তালেবান নেতা মোল্লা ওমর দীর্ঘ সময় ধরেই বিন লাদেনকে লো প্রোফাইলে থাকতে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু বিন লাদেন ওমরের কথা শোনেননি। বরং ১৯৯৮ সালে তালেবানদের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি আফগানিস্তান থেকে কেনিয়া ও তানজানিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওপর হামলার মূল হোতা ছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব আফগানিস্তানে খোস্ট ও জালালাবাদের কাছে তালেবান ক্যাম্পে মিসাইল আক্রমণ করে। ওই ঘটনার পর আফগানিস্তানের স্বার্থ বিবেচনা করে ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রে ভবিষ্যতে কোন ধরনের আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে তালেবানরা অঙ্গীকার করায়। এমন কী বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে তারা কীভাবে বিন লাদেনকে ইসলামী আদালতে বিচারের জন্য তুলে দেয়া যায় সেই উপায়ও খুঁজছিল। তাকে আদালতে সোপর্দ করার চিন্তাভাবনাটা লাদেন একদমই পছন্দ করেননি। এটা তার কাছে মনে হয়েছিল ইসলামের শত্রুদের কাছে ভীরুতা প্রকাশের শামিল। তাই সব উপেক্ষা করেই তিনি একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছিলেন। ১৯৯০ সালে যখন মিসাইল আক্রমণে কোন আল কায়েদা সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি তখন পাকিস্তানী জঙ্গী সংগঠন হরকাত-উল-জিহাদ-ই-ইসলামী (হুজি) এবং হরকাত-উল-মুজাহিদিন (হুম)সহ কয়েকটি সংগঠন আল কায়েদার সঙ্গে যোগ দেয়। ওই সময় শিয়াবিরোধী আরও সংগঠন সিপাহ্-ই-সাহাবা-ই-পাকিস্তান (এসএসপি) এবং লস্কর-ই-জাংঘবি (লেজ) তালেবানদের সহায়তা করতে আফগানিস্তানে যায়। তালেবানদের সহযোগী হিসেবে পাকিস্তানের দেওবন্দি গ্রুপ হিসেবে হুজি, হুম, এসএসপি ও লেজের সঙ্গে আল কায়েদার সখ্য তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের পর আল কায়েদা ও তালেবান নেতারা আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আসে ওইসব সংগঠনের যোদ্ধাদেরসহ। ২০০১ সালের পর থেকে পাকিস্তানের সহায়তায় সেখানে আল কায়েদার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে লোক দেখানো ধরা হয়। ব্রুস রেইডেলের মতো কয়েকজন লেখক যুক্তি দিয়ে লিখেছিলেন যে, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, প্রধানমন্ত্রীর গোয়েন্দা সংস্থা এবং দি ইন্টারসার্ভিসেস ইন্টিলিজেন্স ডিরেক্টরেট (আইএসআই) আল কায়েদার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ২০০১ সালের শেষ দিকে আল কায়েদা ও তাদের পাকিস্তানী জঙ্গী জোট দেশটিকে লক্ষ্যস্থলে পরিণত করতে শুরু করে। ২০০৩ সালের মধ্যে আল কায়েদা পাকিস্তানের তৎকালীন সেনা স্বৈরশাসক স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রচার শুরু করে। তাকে বিশ্বাসঘাতক বলতে থাকে। ২০০৪ সালে আল কায়েদা পাকিস্তানী জনসাধারণকে পারভেজ মোশাররফের সরকারের পতন ঘটাতে উৎসাহ দেয়া শুরু করে। ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন লাদেন। ২০০১ সালের পর থেকে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। আল কায়েদার পরিকল্পনায় সেসব হামলা হলেও তা কার্যকর করে সহযোগী দেওবন্দি গ্রুপগুলো। সে সময় হুজি ও হুম থেকে বেশকিছু সদস্য বেরিয়ে জোস-ই-মোহাম্মদ (জেম) নামে আরেকটি দেওবন্দি জঙ্গী সংগঠন তৈরি করে। সংগঠনটি হয়ে ওঠে অন্যগুলোর চেয়ে ভয়ঙ্কর ও হিংস্র। ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে এই জেমই হামলা করে। ওই ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। এই দেওবন্দি গ্রুপ আল কায়েদাকে যোদ্ধা সরবরাহ করাসহ পাকিস্তানে বিভিন্ন হামলার ঘটনায় সহায়তা দিয়ে যেতো। এই দেওবন্দি গ্রুপের বিপরীতে পাকিস্তানে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আরও একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন গড়ে ওঠে। তারা তালেবানদের সহযোগী হিসাবে নয়, নিজেরাই আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ নেয়। আল কায়েদার সঙ্গে মিলিতভাবেও তারা হামলা করতো না। এককভাবেই চলতে শুরু করে ওই ভয়াবহ সংগঠনটি। যার নাম লস্কর-ই-তায়েবা। দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামের অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ও গুরুত্বপূর্ণ অতীতকে পুঁজি করে আল কায়েদা নতুন করে এ অঞ্চলকে ঘিরে তাদের কর্মপন্থা সাজাচ্ছে। ষোড়শ শতাব্দিতে ভারত উপমহাদেশে মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। ১৫২৬ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মোগল সাম্রাজ্য বর্তমানের ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ অংশের বেশিরভাগ যুক্ত করে নেয়। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার পর সত্যিকার অর্থে ব্রিটিশ রাজত্ব শুরু হওয়ার পর মোগল শাসনের অবসান ঘটে। সেই সঙ্গে মুসলিমদের প্রতিপত্তিও কমে যায়। জাওয়াহিরি মুসলিমদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যকে তুলে ধরে এ অঞ্চলের মুসলিমদের সমর্থন নিয়ে এক ভিন্ন ধরনের মুসলিম রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলন করতে চান। ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএস খেলাফত শাসন ব্যবস্থা চালুর যে ঘোষণা দিয়েছিল সেই প্রতিযোগিতায় দেরিতে হলেও যুক্ত হয়েছে জাওয়াহিরির আকিস। জাওয়াহিরি মনে করছেন আইএসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাকেন্দ্রিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেয়ে অতীতের গৌরবের কথা ভেবেই তার ভাবনার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের মুসলিমরা বেশি আগ্রহী হবে। ভারতীয় মুসলিমদের ফুঁসলানোর জন্য আইএস নিজস্ব কিছু কৌশল অবলম্বন করেছে। আইএসের স্বঘোষিত খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদী ২০১৪ সালের ৫ জুলাই প্রকাশ্যে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তার প্রথম বক্তৃতায় তিনবার ভারতের নাম উল্লেখ করেছেন। প্রথমত তিনি বলেছেন, তিনি কয়েকটি দেশের তালিকা তৈরি করেছেন যেখানে মুসলিমদের অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে। ভারত সেরকম একটি দেশ। দ্বিতীয়ত তিনি বলেছেন, ভারতের কাশ্মীরে মুসলিমদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন ও নাশকতা চালানো হচ্ছে। তৃতীয়ত তিনি স্স্পুষ্ট কর্মবিধি তুলে ধরে বলেছেন, ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠায় তার নতুন খেলাফতে অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ভারতকে যুক্ত করা হয়েছে। তবে বাগদাদীর এ বক্তব্য ভারতের ইসলামী চিন্তাবিদরা কী চোখে দেখছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তারা একেকজন একেক রকম করে ব্যাখ্যা করেছেন বিষয়টি। যেমন- লক্ষেèৗর দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা ইসলামিক ইনস্টিটিউটের মাওলানা সালমান নাদভি তাৎক্ষণিকভাবে বাগদাদীকে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এতে নাদভিকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া উলেমা কাউন্সিল এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড। তবে নাদভি একা নন, অনেকেই আইএসকে আলিঙ্গন করেছেন। কাশ্মীরের তরুণদের আইএসের কালো পতাকা বহন করতে দেখা গেছে। আইএস তরুণদের দলে টানতে নিয়োগ দিতে ভিডিও বার্তা হিন্দি, উর্দু ও তামিল ভাষাতেও প্রচার করছে। ভারতের অনেক মুসলিম আইএসে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সিরিয়া ও ইরাকে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় অসংখ্য মুসলিম রয়েছেন যারা যারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে একদম প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছেন। এমন কী নানাভাবে সহিংসতারও শিকার হচ্ছেন। এই কারণে বৈশ্বিক জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর কাছে দক্ষিণ এশিয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলে মধ্যপ্রাচ্যের চেয়েও মুসলমানদের সংখ্যা বেশি। ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ মুসলিম। ১ কোটি ২০ লাখ। জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর কাছে এটা একটি বিশাল অংক। এর ওপর আছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা। যারা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নন। আইএসের বাগদাদীর মতো আকিসের জাওয়াহিরির ভিডিও বক্তৃতাতেও ভারতের মুসলিমদের ওপর সহিংসতার ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে চিহ্নিত করে উস্কানি দেয়া হয়েছে। তিনি কাশ্মীরের কথা বলেছেন, যেখানে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের প্রচারণার শিকার হচ্ছেন বাসিন্দারা। অপরদিকে তারা প্রায়ই ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোরও নৃশংসতার শিকার হচ্ছেন। ২০০২ সালে ভারতের রাজ্য গুজরাটের শহর আহমেদাবাদে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার ঘটনাও তুলে ধরেন জাওয়াহিরি। সেসময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইন্ধন থাকার বিষয়টিও তুলে তাকে মুসলিম বিদ্বেষী উল্লেখ করে কঠোর সমালোচনা করেন। এর পাশাপাশি তিনি ভারতের অসমে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম সম্প্রদায় বড়োর ওপর যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা সহিংসতার বিষয়টিও তুলে ধরেন। তবে আকিস ও আইএস ভুক্তভোগী মুসলিমদের ফুঁসলানোর জন্য শুধু ভারতে শাখা খোলার লক্ষ্য রাখেনি। তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের কথা মাথায় রেখে মিয়ানমারকেও আরেকটি লক্ষ্যস্থল হিসেবে পরিকল্পনায় রেখেছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ মিয়ানমারে বহু সম্প্রদায়ের বসবাস থাকলেও দেশটির উত্তরে রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের তারা একেবারেই স্বীকৃতি দিতে চায় না। বাংলাদেশের নাগরিক উল্লেখ করে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর এতটাই সহিংস আচরণ করে যে বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দক্ষিণে চট্টগ্রামে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশও তাদের স্বাগত জানায় না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের কোন দেশ নেই। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যেকোন অপরাধমূলক কাজের জন্য প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হয়। বড় আকারে না হলেও বাংলাদেশে শিয়া মতবাদীদের হত্যা করেছে উগ্র জঙ্গীগোষ্ঠী। এছাড়া ভিন্ন মতবাদের মুক্তমনাদের ওপরও চলছে জঙ্গী হামলা। বিষয়গুলোকে পুঁজি করে জাওয়াহিরি তার ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশীদের তার সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহ দিয়েছে। আর মুসলিমপ্রধান দেশ পাকিস্তানে জাতিগত দাঙ্গারূপে ঘটছে ভয়াবহ সব জঙ্গী হামলা। জাওয়াহিরি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো মুসলিম দেশগুলোও রক্তস্নাত হওয়ার পেছনে ভারত, পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘ক্ষমতালোভী’ রাজনীতিকদের দায়ী করেছেন। তবে মজার বিষয়, শ্রীলঙ্কায় তামিল টাইগার এবং বৌদ্ধদের জঙ্গী সংগঠন বড় বালা সেনার হাতে সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর সহিংসতা ঘটলেও দেশটিকে তার তালিকায় রাখেননি জাওয়াহিরি।
×