ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক

বিজয় সন্ধিক্ষণে

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বিজয় সন্ধিক্ষণে

মুক্তিযুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে ধাবমান, যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যখন পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত। পশ্চিম রণাঙ্গনেও যখন যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে, তখনও শান্তি কমিটির ডাক্তার সাহেব এবং আমাদের প্রিয় চাচি পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলতে থাকেনÑ ‘আখেরে পাকিস্তানেরই বিজয় হবে।’ এরই মধ্যে ভারতীয় যুদ্ধবিমান আক্রমণ চালিয়ে শহরের অনতিদূরস্থ এয়ারপোর্টটি অকার্যকর করে দেয়। হাতিবান্ধা ও মোগলহাট এলাকা থেকে পাকসেনারা পাততাড়ি গুটিয়ে শহরে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। ঘরের কাছাকাছি এসে দোলজোর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের দিকে গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। ভারতীয় বিমানের আক্রমণের শঙ্কায় শহরের যত্রতত্র বাঙ্কার খোঁড়াখুঁড়ির ধুম পড়ে যায়। তখনও স্থানীয় দালাল ও ‘পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন বিশ্বাস করতে ভালোবাসত, সবকিছু পূর্বাংশে ঠিক-ঠাকমতো চলছে।’ বিবিসি বা আকাশবাণীর সংবাদ ছিল তাদের কাছে ‘প্রোপাগান্ডা’। পশ্চিম পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য কোন কোন নেতা তখন পূর্ব পাকিস্তানে যায়নি। ভুট্টো ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছিলেন ‘গঙ্গা-যমুনার রক্ত লাল হয়ে যাবে।’ (মামুন। পাকিস্তানী জেনারেলদের মন। পৃষ্ঠা : ২৫২-২৫৩)। ওরা বাঙালীদের সমস্ত বিজয় নাকচ করে দিয়ে বলতে থাকে- ‘পাকসেনারা রণকৌশলের প্রয়োজনে সাময়িক সময়ের জন্য পিছু হটে এসেছে, সুযোগমতো আবার আক্রমণ চালিয়ে মোগলহাট পেরিয়ে কোচবিহার দখলে নিয়ে নিবে।’ এই প্রত্যাশা লালন করতে করতেই বাঙালী দালালরা দেখে, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বিহারীদের নিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীর আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পরিশেষে ডিসেম্বরের ৫ তারিখে তারা বাঙালী দালালদের অনিশ্চয়তার গহ্বরে নিক্ষেপ করে শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিদায় প্রাক্কালে দালালদের এই মর্মে আশ্বাস দিয়ে যায় যে, ‘ভারতীয় বাহিনী পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করলেও তা ধরে রাখতে পারবে না। ওদিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীরা ওদের দিল্লী দখল করে নিবে। তখন তারা বেকায়দায় পড়ে পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।’ পাকিস্তানীরা পালিয়ে যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা বিনা বাধায় শহরে প্রবেশ করে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। শান্তি কমিটির ডাক্তার সাহেব জান বাঁচানোর জন্য গা ঢাকা দেন। চাচি কিছুটা হতাশ হলেও ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যাশার প্রভাত বুকে নিয়ে দিন গুজরাণ করতে থাকেন। চায়নার নাটা নাটা ফৌজ আসেনি, আমেরিকার সপ্তম নৌবহর আসেনি, জাতিসংঘও কিছুই করেনি, তার পরও চাচি হতাশ হননি, অবশেষে ডিম্বেরের ১৬ তারিখে আত্মসমর্পণের খবর শোনার পর তিনি অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন। জাতিসংঘও অন্তিম সময়ে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ইজ্জত বাঁচাবার জন্য আত্মসমর্পণ পরিহার করে যে কোন উপায়ে একটি যুদ্ধ বিরতির জন্য ওরা মরিয়া হয়েও কিছু করতে পারেনি। মোড়ল আমেরিকাও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধিতার কারণে পেয়ারা ইয়াহিয়ার জন্য শত সচেষ্ট হয়েও আখেরে কোন কিছুই করতে পারেনি। পরাজয় যখন অনেকটা নিশ্চিত বলে প্রতীয়মান হতে থাকে তখন অস্তিত্ব রক্ষার্থে পাকিস্তানীরা পশ্চিম রণাঙ্গনে ফ্রন্ট খুলে ভারতের ওপর বিমান হামলা করে বসে। এ পরিস্থিতিতে ভারত কর্তৃক পরদিন যুদ্ধ ঘোষিত হলে, সামগ্রিক অবস্থা ত্বরিতগতিতে পাল্টে যেতে থাকে। ভারতীয় বিমানগুলো পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আক্রমণ চালাতে থাকে। এর ফলে পাক বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চোখের নিমিষে ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। ঢাকার কিছু স্যাবর বিমান মিগ-২১ এর সাথে কুলাতে না পেরে মুখথুবড়ে পড়তে থাকে। সে সময় তখনকার গবর্নর হাউসে শেলিং করা হলে বেসামরিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। গবর্নর ডা. মালেক তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়ে জীবন বাঁচাবার জন্য এসে ওঠে নিরপেক্ষ এলাকা বলে ঘোষিত হোটেল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টালে’। ইতোমধ্যে ডিসেম্বরের ১১ তারিখে কলকাতা থেকে উড়াল দিয়ে দলে দলে প্যারাট্রুপার ঢাকার অনতিদূরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় অবতরণ করে ঢাকার দিকে অগ্রাভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এ খবর সম্পর্কে লন্ডনের ‘ঊাবহরহম ঝঃধহফধৎফ’ পত্রিকায় ১১ ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলা হয়Ñ ‘ওহফরধহ ঢ়ধৎধঃৎড়ড়ঢ়বৎং ঃড়ফধু সধফব ধহ ধরৎনড়ৎহব ধংংঁষঃ ড়হ ঃযব চধশরংঃধহর ঢ়ড়ংরঃরড়হ ড়হ ঃযব ড়ঁঃ ংশরৎঃং ড়ভ ঃযব ঊধংঃ চধশরংঃধহর ঈধঢ়রঃধষ ড়ভ উধপপধ. অ ঈঁষপঁঃঃধ ফরংঢ়ধঃপয নু ঁহরঃবফ ঢ়ৎবংং ওহঃবৎহধঃরড়হ ৎবঢ়ড়ৎঃবৎ কবহহবঃয ইৎধফফরপশ ংধরফ ধহ বধংঃরসধঃবফ ৫০০০ ঢ়ধৎধঃৎড়ড়ঢ়বৎং বিৎব ংববহ নড়ধৎফরহম ধনড়ঁঃ ৫০ প৭ ্ প১১৯ ভষুরহম নড়ী পধৎ ধরৎপৎধভঃ ধঃ ঃযব পরঃু’ং উঁস উঁস ধরৎঢ়ড়ৎঃ ভড়ৎ ধহ ধরৎনড়ৎহব ধংংঁষঃ. গরষরঃধৎু ্ উরঢ়ষড়সধঃরপ ংড়ঁপবং ংধরফ ঃযব ঃধৎমবঃ ভড়ৎ ঃযব ফৎড়ঢ়. ঞযব ভরৎংঃ রহ ঃযব ঢ়ৎবংবহঃ ধিৎ রিঃয চধশরংঃধহ, ওহফরধহ ভড়ৎপবং যধফ বধৎষরবৎ বধংঃধনষরংবফ ধ নৎরফমব যবধফ ধপৎড়ংং ঃযব গবমযহধ ৎরাবৎ ৪০ সরষবং হড়ৎঃয বধংঃ ড়ভ উধপপধ.’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র। খ -১৪। পৃষ্ঠা-৪৩৫)। প্যারাট্রুপারদের অবতরণের খবরটি বিবিসির মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রচারিত হওয়ার পর, এ নিয়ে কিছু গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের শহর তখন শত্রুমুক্ত হয়ে গেলেও আলতাফ চাচি এ ধরনের কিছু গুজবে আস্থা জ্ঞাপন করে ভেতরে ভেতরে কিছুটা উৎফুল্ল হয়ে উঠেন। এক সময় উচ্ছ্বাস দমন করতে না পেরে ফিসফিসিয়ে বলেন, ‘শুনলাম আজ বৈকালে টাঙ্গাইলের দিকে কয়েক হাজার চাইনিজ ফৌজ উড়োজাহাজ থাকিয়া প্যারাস্যুটে করে ঝাঁপায়ে নামছে।’ তাকে যখন জানানো হলো যে ওগুলো চাইনিজ ফৌজ নয়, ভারতীয় সৈন্য। তখন তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘এন্ডিয়ার সৈন্য উড়ো জাহাজ থাকি নামবে কেন? তারা তো গাড়ি চালায়াই আসতে পারে। ওরা চায়না থেকেই আসছে, এখন লড়াই জমি উঠবে।’ কিন্তু শেষপর্যন্ত লড়াই আর জমে উঠেনি। এভাবেই অনেকে সেদিন ওই প্যারাট্রুপারদের আগমন সংবাদের গুজবে প্রভাবিত হয়ে অনেকটা শঙ্কিত হয়েছিল। শেষপর্যন্ত যা মিথ্যে সংবাদ বলে প্রমাণিত হয়। এরই মধ্যে জেনারেল নিয়াজী এক তারবার্তা পেয়ে পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠেনÑ ‘১৪ ডিসেম্বর জেনারেল হেডকোয়াটার্স থেকে টেলিফোনে নিয়াজী এই মর্মে একটি বার্তা পেয়েছিলেন যে, উত্তর দিক থেকে হলদেরা এবং দক্ষিণ দিক থেকে সাদারা আসছে। এই বার্তায় অনুপ্রাণিত হয়েই নিয়াজী এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, এমনকি ট্যাঙ্কও যদি তার শরীরের ওপর দিয়ে যায়, তাহলে তিনি সে ট্যাঙ্কগুলোকেও থামিয়ে দেবেন।’ (আলী খান। পৃষ্ঠা-১৬৮) পরাজয়ের ওই অন্তিমপর্যায়েও বেচারা নিয়াজী আশাবাদী ছিলেন যে, তাকে তাজা করার জন্য উত্তর থেকে চাইনিজরা মার্চ করে চলে আসবে এবং আমেরিকানরা বে অব বেঙ্গলে অবস্থান নিয়ে তাদের জন্য জান কোরবান করে দেবে। প্রথম প্রত্যাশাটি কখনই পূরণীয় ছিল না। কারণ গণচীন কোন দিনই তাদের এ ধরনের কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ভুট্টো এবং নিক্সনের পীড়াপিড়িতেও এ ব্যাপারে তারা কখনও সম্মত হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় প্রত্যাশাটি পুরোপুরিই সত্য ছিল। সাদা তথা আমেরিকানরা সে সময় প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্দেশ পেয়ে সপ্তম নৌবহর নিয়ে সত্যি সত্যিই এ্যাডমিরাল মুরারের অধিনায়কত্বে ভিয়েতনামে টংকিন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এবং ডিসেম্বরের ১০ তারিখে সিঙ্গাপুরে এসে অপেক্ষমাণ ছিল, কিন্তু সোভিয়েতরা আগে থেকেই এখানে ষষ্ঠ নৌবহর মোতায়েন করে রাখায় তারা আর ঝুঁকিপূর্ণ পথে অগ্রসর হয়নি। সোভিয়েতদের ঐকান্তিক সহযোগিতার কারণে সেদিন এদেশ যেমন ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের কবল থেকে রক্ষা পায়। তেমনি জেনারেল নিয়াজীও আত্মসমর্পণ করে হলেও তার সাঙ্গোপাঙ্গসহ জীবন নিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে সপ্তম নৌবহর থেকে আক্রমণ পরিচালিত হলে, পাল্টা আক্রমণের কোপানলে পড়ে জেনারেল নিয়াজী যে তার সুরক্ষিত ক্যান্টমেন্টসহ মাটির সাথে মিশে যেতেন এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণের কোন অবকাশ নেই। ইতোমধ্যে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পড়ে তারা এক নৃশংস হত্যাযজ্ঞের নীলনক্সা আঁকতে থাকে। স্বাধীনতা লাভ করলেও দেশটি যেন কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে লক্ষ্যে চলতে থাকে দেশকে মেধাশূন্য করার মহাষড়যন্ত্র। এভাবে আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে এদেশকে মেধাশূন্য করে দেয়ার কুমতলবে হানাদারদের সহযোগিতায় আলবদর-রাজাকাররা নির্মমভাবে বিপুলসংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ফেলে রাখে এবং পরবর্তী সময়ে সেই অপকীর্তির দায় মিত্রবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়। শেষপর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কোন অবস্থান থেকেই তিনি আর কোন আশার আলো দেখতে পাননি। এহেন পরিস্থিতিতে ‘ভিক্ষা চাই না কুত্তা খেদাও’ এর মতো তিনি যুদ্ধ জয়ের সকল প্রত্যাশা পরিত্যাগ করে যে কোন উপায়ে পূর্ব পাকিস্তানে পদায়িত সেনাসদস্যদের জীবন রক্ষার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েন। রণক্লান্ত নিয়াজীও যৌথবাহিনীর আক্রমণ সামাল দিতে না পেরে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইজ্জত রক্ষার জন্য হন্যে হয়ে উপায় সন্ধান করতে থাকেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতেÑ ‘১৩/১৪ ডিসেম্বর রাতে নিয়াজী পাকিস্তানী কম্যান্ডার-ইন-চীফ জেনারেল হামিদের (ঐধসরফ) সঙ্গে কথা বলে তাকে অনুরোধ করেন, যাতে ইয়াহিয়া খানকে বলে অবিলম্বে তিনি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যবস্থা করেন। ১৪ ডিসেম্বর নিয়াজীর কাছে এক বার্তা পাঠিয়ে ইয়াহিয়া অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। নিয়াজীকে পাঠানো ইয়াহিয়ার বার্তাটি ছিলÑ ‘প্রবল প্রতিকূলতার মুখেও আপনারা বীরত্বের সাথে লড়াই করেছেন। জাতি আপনাদের নিয়ে গর্বিত এবং সারা পৃথিবী প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানকল্পে মানুষের পক্ষে সম্ভব এমন সমস্ত পদক্ষেপই আমি গ্রহণ করেছি। বর্তমানে এমন একপর্যায়ে আপনারা পৌঁছেছেন যে, এরপর প্রতিরোধের যে কোন প্রচেষ্টাই হবে অমানুষিক এবং সেটা কার্যকরীও হবে না; বরং তা আরও প্রাণহানি ও ধ্বংসেরই কারণ হবে। এ অবস্থায় আপনাদের উচিত হবে যুদ্ধ বন্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনীর সকল সদস্য ও অন্যান্য বিশ্বস্ত সহযোগীদের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সমরাভিযান বন্ধ করে পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনীর এবং অন্যান্য জনসাধারণ যারা দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে, তাদের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভারতকে অনুরোধ করার জন্য আমি ইতোমধ্যেই জাতিসংঘে তৎপরতা চালিয়েছি।’ (জেকব। পৃষ্ঠা-১১১)। এভাবেই একপর্যায়ে জেনারেল আগা মোঃ ইয়াহিয়া খানের সকল দম্ভ চূর্ণ হয়ে যায় এবং টাইগার নিয়াজীও এক বিল্লিতে পরিণত হন। এ সময় একদিকে নিয়াজী কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতি পরিহারের লক্ষ্যে জেনারেল মানেক শ কর্তৃক আত্মসমর্পণের তাগিদ প্রদান করা হতে থাকে, একই সঙ্গে পাকিস্তানী সেনাদের জেনেভা কনভেশন অনুযায়ী পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাসও দেয়া হতে থাকে। বেতারে ঘন ঘন ঘোষিত হতে থাকেÑ ‘মনেক শ-কে এলান, হাতিয়ার ডাল দোও।’ জেনারেল মানেক শ তার বার্তায় আরও বলেনÑ ‘নিরাপত্তার ব্যাপারে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই, যেখান থেকেই তিনি আসুন না কেন। আমার অধীনস্থ সৈন্যদের প্রতিশোধ নেয়ার কোন ব্যাপার নেই।’ তিনি আরও জানান, যে মুহূর্তে তিনি ইতিবাচক সাড়া পাবেন, তৎক্ষণাৎ তিনি জেনারেল অরোরাকে আকাশ এবং ভূমিতে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সকল অপারেশন বন্ধের নির্দেশ দেবেন। নিজের সদিচ্ছার নমুনা প্রদর্শনের জন্য জেনারেল মানেক শ ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে পরদিন ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকা এবং আশপাশ এলাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধের নির্দেশ দেন এবং এরপর তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেনÑ ‘যদি আপনি আমার কথা মেনে না নেন, সেক্ষেত্রে আমার জন্য বিকল্প কিছু রাখছেন না। বরং ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে আমাকে পুরো শক্তিতে পুনরায় আক্রমণ শুরু করতে হবে।’ (সিং। পৃষ্ঠা-১৭১)। মানেক শ’র এ ধরনের এলান শোনার পর থেকেই দলে দলে মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ করে বিচ্চুবাহিনী খ্যাত গেরিলারা ঢাকার ঢিলেঢালা কারফিউ উপেক্ষা করে শহরে প্রবেশ করতে থাকেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাকসেনারাও রেসকোর্স ময়দান এবং ক্যান্টনমেন্টের দিকে গাট্টি-বোচকা নিয়ে ধাবিত হতে থাকে। নিয়াজীর পক্ষে আত্মসমর্পণ ব্যতিরেকে আর কোন পথ যখন খোলা ছিল না, তখন তাকে আত্মসমর্পণের খসড়া পাঠ করে শোনানো হয়। এ প্রসঙ্গে এক জেনারেল লিখেছেনÑ ‘আমি নিয়াজীর অফিসে ফিরে এলে কর্নেল খারা আত্মসমর্পণের শর্তাবলী পাঠ করে শোনান। নিয়াজীর চোখ থেকে দরদর করে পানি পড়তে থাকে, সেই সাথে ঘরে নেমে আসে পিনপতন নিস্তব্ধতা। উপস্থিত অন্যদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। তাদের আশা ছিল, ১৪ ডিসেম্বরে স্পিভ্যাককে দেয়া তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী এই দলিল প্রণীত হবে, যেটাতে জাতিসংঘের দেয়া ব্যবস্থা অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি ও প্রত্যাবর্তন কার্যকর করা হবে। ফরমান আলী ভারতীয় ও বাংলাদেশী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানান। নিয়াজী বলেন যে, আমি তাকে যেটাতে সই করতে বলছি সেটা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দলিল। আমরা যখন এই দলিল প্রণয়ন করি, তখন আমরা একটা বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখেছি যে, কোনভাবেই এটা যেন অপমানজনক মনে না হয়।’ (জেকব। পৃষ্ঠা-১১৬)। এরপর বাঘা কাদের সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে ওখানে এসে হাজির হন মেজর জেনারেল নাগরা। পুরনো দিনের দোস্ত নাগরাকে দেখে নিয়াজী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘পিন্ডিমে বাইঠে হুয়ে হারামজাদো নে মারওয়া দিয়া’ (পি-ির উর্ধতন সদর দফতরের হারামজাদারা আমাকে ডুবিয়েছে)। (সিং। পৃষ্ঠা-১৬৩)। এভাবেই পাকিস্তানী হানাদারদের নাকে খত দিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিতে হয়। যে ময়দান থেকে একদিন বঙ্গবন্ধু (৭ মার্চ) স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই ময়দানেই পাকিস্তানীদের পরাজয়ের দলিলে দস্তখত প্রদান করতে হয়। অতঃপর ত্রিশ লাখ শহীদ, চার লাখ লাঞ্ছিত নারী এবং এক কোটি গৃহহারা বাঙালীর বিনিময়ে অর্জিত হয় বহুল প্রত্যাশিত স্বাধীনতা। এদিকে পূর্ব পাকিস্তান যখন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত, তখনও পাকিস্তানীরা উজবুকের মতো পূর্ব পাকিস্তানকে কী ধরনের স্বায়ত্তশাসন দেয়া হবে, সে বিষয় নিয়ে মহাগবেষণায় নিয়োজিত। বিচারপতি কর্নোলিয়াস তখনও সংবিধান চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত। ভুট্টোর একদল ‘এক্সপার্ট’ রোজ এসে তার এইড বাহিনী এবং সর্বময় ক্ষমতাবান পীরজাদা ও তার একদল সিভিল অফিসারের সাথে মিটিং করে যায়। পীরজাদা ও কর্নোলিয়াসকে মনে হলো পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের জন্য কর্নোলিয়াস কমিশনের রচিত ‘কোয়ান্টাম প্রভিনশিয়াল অটোনমির’ ব্যাপারে বেশ সন্তুষ্ট। সেটার উল্লেখযোগ্য দিক হলোÑ সংবিধানে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একজন ‘বাঙালী ভাইস প্রেসিডেন্টের’ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যিনি ঢাকায় বসে ‘প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন’ প্রয়োগ করবেন। পাক প্রশাসনের রাসপুটিন পীরজাদা আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেনÑ এটা বাঙালী জাতির জন্য ‘বিরাট এক ছাড়’ হতে যাচ্ছে। এসব কর্মকা দেখেশুনে যে কারও পক্ষে হাসি চেপে রাখা কঠিন হয়ে উঠতে বাধ্য। আমার মনে হলো পাকিস্তানের সংবিধান লেখা বোধহয় কোনদিনও শেষ হবে না। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দেশ স্বাধীন হাওয়ার পর থেকে শুরু হয় এ কাজ। চব্বিশ বছর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন ঢাকায় পতন হয়, তখনও তা শেষ হয়নি। চলছেই। এতকিছু ঘটে যাচ্ছে, তারপরও ভুট্টো বা পীরজাদা কী করে ভাবেন, কিছু পশ্চিম পাকিস্তানী সিভিল ও মিলিটারি অফিসিয়াল রাওয়ালপিন্ডিতে বসে সংবিধান লিখলেই বাঙালী জাতি তা মেনে নেবে, যাদের জাতীয় লক্ষ্য একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ? (চৌধুরী। পৃষ্ঠা-১৫৮)। এভাবেই দেখতে দেখতে সকল শঙ্কাকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করে একদিন বাঙালীদের জীবনে উদিত হয় বিজয়ের লালসূর্য। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে বাঙালীর ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বহুল প্রত্যাশিত বিজয়ের বার্তা। চারিদিকে ধ্বনিত হতে থাকে আনন্দের প্রতিধ্বনি। আমাদের জনপদে বিজয়ের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয় দুই দফা। ৬ ডিসেম্বরে লালমনিরহাট শত্রুমুক্ত হলে একবার বিজয়ের সুখ অনুভূত হয় এবং চূড়ান্তভাবে ১৬ ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হলে দ্বিতীয় দফা আনন্দ অনুভূত হয়। ৫ তারিখ সন্ধ্যার আগ দিয়ে পাকসেনাদের এবং বিহারীদের ট্রেনে করে পালিয়ে যাওয়া দেখি ঢঢোগাছ গ্রামের পশ্চিম সীমানায় দাঁড়িয়ে। সেদিন সারা সময় শোনা যায় গোলাগুলির শব্দ। একটি নিক্ষিপ্ত গোলা আমাদের গ্রামের পশ্চিমপ্রান্তে পড়ে একটি তালগাছের গোড়ায় আঘাত হানে। একরাশ কৌতূহল নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখি, তালগাছটির গোড়ার অনেকটা লোপাট হলেও গোলাটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় সেখানে পড়ে আছে। সম্ভাব্য বিস্ফোরণের ভয়ে কেউ আর সাহস করে গোলাটির কাছে যাইনি। সন্ধ্যার পর থেকেই গোলাগুলির শব্দ আর শোনা যায়নি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শোনা যায়, শহর থেকে পাকসেনারা ক্যাম্প গুটিয়ে পালিয়ে গেছে, সাথে করে নিয়ে গেছে তাদের পেয়ারা দোসর বিহারীদেরও। সকালে এ আনন্দের সংবাদ শোনার পর তাড়াহুড়া করে নাস্তা সেরেই ছুটে যাই শহরের দিকে। ফায়ারব্রিগেড রোড ধরে শহরে প্রবেশের পরই জনশূন্য সুনসান অবস্থা দেখে অনেকটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। দু’একজন পরিচিত লোকের হঠাৎ দেখা পেয়ে কিছুটা সাহস জাগে মনে। তাদের একজনের কাছে জানতে পারি মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস তার দলবল নিয়ে শহরে প্রবেশ করেছেন এবং নিউ কলোনি এলাকায় থেকে যাওয়া একটি বিহারী পরিবারের সকলকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছেন। বাবুপাড়ায় প্রবেশের পর দেখি প্রায় প্রতিটি ঘরেরই দরজার তালা ভাঙ্গা। অনেক ঘরের দরজা খোলা, কোন তালা নেই। বাবার সহকর্মী, হারুন সাহেবের ঘরের দুয়ার উন্মুক্ত দেখে কৌতূহলবশত ভেতরে প্রবেশ করে দেখি, রান্নাঘরে বেশ কয়েকটি থালায় রুটি ভাজি মাংস পড়ে আছে, অবস্থা দেখে বোঝা যায় যে ওরা ভোজন সমাপ্ত না করেই পালিয়ে গেছে। ঘরের উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাপড়ের ব্যাগ, সুটকেস, ঝুঁড়িভর্তি মালামাল। আশপাশের কয়েকটি বাসায় ঢুকেও একই অবস্থা পরিদৃষ্ট হয়। এসব দেখে মনে হয়, ওরা শুধু পৈত্রিক জীবনটা নিয়েই পালিয়ে গেছে, পালানোর সময় কেউ-ই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও সঙ্গে করে নিতে পারেনি বা নেয়ার সময় পায়নি। হারুন সাহেবের পরিবারের ওই দুরবস্থা দেখে মনে মনে একটু হাসি-ই পায়। ইনি এক সময় দাম্ভিক স্বরে বাবাকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন যে, এবারের ঈদটি তিনি দিল্লীতেই পালন করবেন, ওখানকার জামে মসজিদেই ঈদের নামাজ আদায় করবেন। অথচ এই হারুন সাহেবকে পাতের খাবার ফেলে পালিয়ে যেতে হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বেশ ঘটা করে লালমনিরহাট শত্রুমুক্ত হওয়ার সংবাদটি প্রচার করা হয়। এরপরও আমাদের আরও কয়েক দিন ওই গ্রামেই থেকে যেতে হয়। সে সময় প্রতিদিন মাথার ওপর দিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিগ বোমারু বিমান উড়ে যেত, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বোমাবর্ষণের পর বিমানগুলো আবার একই পথে ফিরে আসত। উচ্ছ্বসিত হয়ে বিমানগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। শব্দের চেয়ে গতিশীল ছিল বলে মাঝে মাঝে দেখতে দেখতেই বিমানগুলো দৃষ্টির আড়ালে চলে যেত। এভাবেই এক উচ্ছ্বাসমুখর পরিবেশ সত্ত্বেও আমেরিকার সপ্তম নৌবহর ও চৈনিক সৈন্যদের আগমন শঙ্কার মধ্যে বাকি দিনগুলো কেটে যেতে থাকে। পরিশেষে এক সময় কাক্সিক্ষত মাহেন্দ্রক্ষণের দেখা মেলে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকেই শোনা যেতে থাকে পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের সংবাদ। অপেক্ষার উৎকণ্ঠায় অতিবাহিত হতে থাকে প্রহর। অবশেষে বিকেলেই পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণের আনন্দের বার্তাটি বাঙালীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। বিকেলে শহরে বের করা হয় এক বিশাল বিজয় মিছিল। বয়স নির্বিশেষে শত শত নারী পুরুষ সে মিছিলে যোগ দিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দিতে থাকে। মিছিলটি বাবুপাড়া প্রদক্ষিণ শেষে রেলওয়ে স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ পেরিয়ে পশ্চিমের রাস্তা ধরে অগ্রসর হতে থাকে। ওই আনন্দের মধ্যেও হঠাৎ মনটা বিষণœ হয়ে ওঠে, মিছিল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি ব্রিজের পশ্চিমপ্রান্তে, ট্রলিস্ট্যান্ড সংলগ্ন উন্মুক্ত প্রান্তরের যেখানে এপ্রিলের ৫-৬ তারিখে শত শত বাঙালীকে হত্যা করা হয়েছিল, একবুক বেদনা নিয়ে সেই বধ্যভূমির দিকে তাকিয়ে থাকি অশ্রুসজল দৃষ্টিতে। সহায়ক গ্রন্থসূচী ও কৃতজ্ঞতা ১। চৌধুরী, জি ডাব্লিউ। দ্য লাস্ট ডে’জ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান (অনুবাদ : ইফতেখার আমিন)। ঢাকা। ঐতিহ্য। ২০০৫ ২। জেকব, লে. জেনারেল জে এফ আর। সারেন্ডার এ্যাট ঢাকা (অনুবাদ : আনিসুর রহমান মাহমুদ)। ঢাকা। দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। ২০১৪ (সপ্তম মুদ্রণ) ৩। ফরমান আলী খান, রাও। বাংলাদেশের জন্ম (ভূমিকা : মুনতাসীর মামুন)। ঢাকা। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। ২০১৪ (সপ্তম মুদ্রণ) ৪। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র। খ -১৪। সম্পাদক : হাসান হাফিজুর রহমান। ঢাকা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয়। ২০০৩ (পুনর্মুদ্রণ) ৫। মামুন, মুনতাসীর। পাকিস্তানী জেনারেলদের মন। ঢাকা। সময় প্রকাশন। ২০১১ (তৃতীয় মুদ্রণ) ৬। সিং, সুখওয়ান্ত। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় (অনুবাদ : সায়দুল হক)। ঢাকা। মীরা প্রকাশনী। ২০০০
×