ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজব হলেও গুজব নয়

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

আজব হলেও গুজব নয়

পাথর কুড়িয়ে লাখোপতি কুড়িয়ে পাওয়া পাথর বিক্রি করে লাখোপতি হয়েছেন তুরস্কের বিনগুল অঞ্চলের একটি গ্রামের কয়েকজন। তবে প্রথমদিকে এই পাথরগুলোকে মোটেও পাত্তা দেননি তারা। বিশ্রী দেখতে পাথরগুলোতে প্রথমে তারা আর দশটা সাধারণ পাথরই ভেবেছিলেন। তবে হঠাৎ গ্রামে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নিরীক্ষণে বদলে যায় দৃশ্যপট। ওই শিক্ষক বলে যান, এ পাথরগুলো আসলে উল্কাখণ্ড। এরপর থেকেই সারিচিচেক নামের গ্রামটির চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। সবাই খুঁজতে থাকেন কোথায় সেই পাথর। উল্কাখণ্ডগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতি গ্রাম সর্বোচ্চ ৬০ ডলারে; বাংলাদেশী টাকায় যা সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি। তুরস্কের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে গত ২ সেপ্টেম্বর ছোট মাপের উল্কা বৃষ্টি হয়েছে অঞ্চলটিতে। আর এ সময়ই ছোটবড় নানা আকারের উল্কাপিণ্ড আঁছড়ে পরে গ্রামটির আশপাশে। খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর রাশিয়া, জার্মানি ও ডেনমার্কের রতœ ব্যবসায়ীরাও ভিড় জমিয়েছেন গ্রামটিতে। এখন পর্যন্ত বিক্রি হওয়া উল্কা পাথরের মূল্য প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডালার। সংগ্রাহক ও গবেষকদের কাছে মহামূল্যবান এই উল্কাখণ্ডের সর্বোচ্চ দেড় কেজি ওজনের একটি পাথর খুঁজে পাওয়া গেছে সেখানে। বিক্রিত পাথরের টাকায় ইতোমধ্যে স্বপ্নের বাড়ি-গাড়িও কিনেছেন বেশ ক’জন দরিদ্র গ্রামবাসী। এদিকে গণমাধ্যমের আলোড়নে নড়েচড়ে বসে তুরস্ক সরকার। স্থানীয় কর সংস্থা এই পাথর ব্যবসায় কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে অর্থমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে উন্মুক্ত মতামত জানতে চেয়ে একটি টুইট করেন। এতে ৭০ শতাংশ নাগরিক নেতিবাচক মতামত দিলে উল্কা পাথর বিক্রিতে কর আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। এরপরই এক বিবৃতিতে ‘আকাশ থেকে’ আসা এই সম্পদ সরকারের বা রাষ্ট্রের না হওয়ায় তা বিক্রি করতে গ্রামবাসীকে কোন বাধা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে তুরস্কের অর্থমন্ত্রণালয়। পৃথিবীর বুকে প্রতিবছর পতিত হওয়া কয়েক হাজার উল্কাখণ্ডের মাত্র কয়েকশ পাথর বাষ্পায়ন ক্রিয়া ছাপিয়ে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে। তাই এমন দুষ্প্রাপ্য পাথর থেকে অর্থ আয়কে ভাগ্যের কেরামতিই মনে করছেন গ্রামবাসী। পৃথিবীর বুকে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় উল্কাখণ্ডটি পাওয়া যায় নামিবিয়াতে। ২.৭ মিটার আকারের পাথরটি ১৯২০ সালে আবিষ্কৃত হয়। ৬০ টন ওজনের পাথরটির নাম ‘দ্য হোবা’। বিশ্বের নানা প্রান্তেই কম বেশি উল্কাপাত হলেও এর খুব কমই পাথর হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তবে এর আগেও এন্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা, আরব উপদ্বীপ, সাহারা মরুভূমি ও রাশিয়ায় আবিষ্কৃত হয়েছিল উল্লেখযোগ্য উল্কাখণ্ড। মেয়র হবেন বিড়াল! নগর পরিচালনার জন্য মেয়র ব্যবস্থা খুব একটা প্রাচীন নয়। নগর ব্যবস্থা পত্তন হওয়ার অনেক পরে এই মেয়র পদ সৃষ্টি করা হয় নগরবাসীর সুবিধা-অসুবিধা দেখভালের জন্য। প্রতিটি শহরের অধিবাসীরা তাদের পছন্দ এবং বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে মেয়র নির্বাচন করে থাকেন। কোথাও হয়ত এই নির্বাচন হয় পাঁচ বছর মেয়াদে আবার কোথাও তিন বছর মেয়াদে। কিন্তু রাশিয়ার বারনুয়েল শহরের অধিবাসীরা তাদের আগামী মেয়র নির্বাচনে কোন মানব সন্তানকে চাইছে না, আগামীর মেয়র হিসেবে তাদের পছন্দ বিড়াল। সাইবেরিয়ার এই শহরটির বাসিন্দা সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ এবং শহরটির অবস্থান রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পূর্বে। আগামী সপ্তাহেই এই শহরের বাসিন্দারা মোট ছয়জন প্রার্থী থেকে তাদের পছন্দসই মেয়র নির্বাচিত করবেন বলে জানা গেছে। অবশ্য অন্যান্য অঞ্চলের মতো মেয়রকে শহরবাসীর গণভোটে নির্বাচিত করা হয় না এই শহরে। অনেকদিন ধরেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন চলে এবং সেই নির্বাচনে যোগ্যপ্রার্থী মনোনীত করে চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য পাঠানো হয় শহরের কাউন্সিল ভবনে। কিন্তু এবারের মেয়র নির্বাচনের ঘটনা পুরোটাই ব্যাতিক্রম। শহরের কাউন্সিল ভবনের ওয়েবসাইটে ওই নির্ধারিত ছয়জন প্রার্থীর পাশাপাশি অপর একজন প্রার্থীকে দেখা যায়, যার নাম বারসিক। অবশ্য বারসিক কোন মানুষ নয় বরং একটি বিড়াল। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, নগরবাসীর পছন্দের মেয়রের প্রায় নব্বই শতাংশ জরিপই বারসিকের দিকে ঝুঁকেছে। অর্থাৎ যদি বারনুয়েলের নগরবাসীরা সত্যিই বারসিক নামের ওই বিড়ালটিকে ভোট দেয় তাহলে আগামীতে শহরের মহামান্য মেয়র হতে যাচ্ছেন বারসিক। এই ঘটনা শুধু যে বারনুয়েলের স্থানীয় পত্রিকাগুলোতেই প্রকাশিত হয়েছে তা নয়, রাশিয়ার জাতীয় পত্রিকাগুলোতেও বেশ ফলাও করে ছাপানো হয়েছে। অবশ্য এতেই নড়েচড়ে বসেছেন রাশিয়ার নগর প্রশাসন। কারণ অবস্থা এতটাই নাজুক যে, শহরবাসী মেয়র হিসেবে কোন মানবসন্তানকে আর দেখতে চাচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদে দুর্নীতি আর অপশাসনের ফলাফল ইতোমধ্যেই বারনুয়েলের অধিবাসীরা দেখে ফেলেছে। মস্কোর নগর বিষয়ক দফতরের চিন্তার বিষয় এই যে, যদি বারনুয়েলের দেখানো পথে অন্য শহরগুলোও হাঁটে তাহলে মেয়র কাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে দেশটির নীতি নির্ধারকদের। এ বিষয়ে বারনুয়েলের আঞ্চলিক গবর্নর আলেকজান্ডার কারলিন বলেন, ‘যদিও ছবিটা স্রেফ একটি বিড়ালের, কিন্তু আমাদের জনগণের ইচ্ছে অনুযায়ী বারনুয়েলে শহরের ভবিষ্যতের নগরপিতা হলেন বারসিক। আমাদের অবশ্যই অধিবাসীদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ তাদের মতামতটাই চূড়ান্ত।’ বাংলা মেইল
×