ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় দিবস হকি, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৩-২ বিকেএসপি

নৌবাহিনী অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

নৌবাহিনী অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যে দলটি তারকা খেলোয়াড়ে ঠাসা, সে ফেবারিট দলটিই যে শিরোপা জিতবে ‘ফু-ওয়াং পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বিজয় দিবস হকি প্রতিযোগিতা’র, এমনটাই অনুমেয় ছিল। শেষ পর্যন্ত এমন অনুমানই সত্যি হয়েছে। শিরোপা (তাও আবার অপরাজিত) জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দল। বৃহস্পতিবার মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা হারিয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে (বিকেএসপি)। তবে জয়টা এত সহজে আসেনি। এসেছে অনেক ঘাম ঝরিয়ে। স্কোরলাইন ছিল ৩-২। নৌবাহিনীর পক্ষে মাইনুল ইসলাম কৌশিক ম্যাচের ১৪ মিনিটে ফিল্ড গোল দলকে এগিয়ে নেন (১-০)। বিকেএসপির আশরাফুল ইসলাম পেনাল্টি কর্নার থেকে ২১ মিনিটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান (১-১)। নৌবাহিনীর রোমান সরকার ১টি ফিল্ড গোল করে আবারও এগিয়ে দেন দলকে (২-১)। ম্যাচের তখন ৪৬ মিনিট। ৫২ মিনিটে বিকেএসপির সোহানুর রহমান আরেকটি পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে আবারও সমতায় ফেরান নিজ দলকে (২-২)। মাঠে উপস্থিত হকিপ্রেমীরা যখন ধরে নিয়েছিলেন খেলা গড়াবে পেনাল্টি শূট আউটে, তখন ফরহাদ আহমেদ ৬১ মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি কর্নার (পিসি) থেকে দর্শনীয় গোল করে দলকে আবারও এগিয়ে দেন (৩-২)। বিকেএসপি আপ্রাণ চেষ্টা করেও সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি। খেলা শেষ হলে শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে নৌবাহিনী শিবির। প্রাইজমানি হিসেবে তারা পায় ৫০ হাজার টাকা। রানার্সআপ দল বিকেএসপি পায় ৩০ হাজার টাকা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন বিকেএসপির ফজলে হোসেন রাব্বি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে ১০ টাকা হাজার লাভ করেন বিকেএসপির আশরাফুল ইসলাম (১১ গোল)। ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান ও হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার মার্শাল আবু এসরার বিবিপি, এনডিসি, এসিএসসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন এটিএন বাংলা লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান। এছাড়া হকি ফেডারেশনের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শিকদার, খাজা রহমতউল্লাহ ও ফেডারেশনের অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এ বছর বিজয় দিবস হকি প্রতিযোগিতায় মোট ৭ দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। ‘ক’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং ‘খ’ গ্রুপ থেকে বিকেএসপি ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। গত ১৭ ডিসেম্বর টুর্নামেন্টের খেলা শুরু হয়। এর আগে বুধবার অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে নৌবাহিনী ৪-০ গোলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে এবং বিকেএসপি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ৭-৬ (৩-৩) গোলে হারিয়ে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর পর আবারও টার্ফে গড়ায় ঘরোয়া কোন হকির টুর্নামেন্ট। তবে দল বদল না হওয়াতে এ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেনি প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলো। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রিমিয়ার লীগের প্রায় দু’বছর পর কোন ঘরোয়া আসর হতে যাচ্ছে হকিতে। দীর্ঘ সময় পর ঘরোয়া কোন আসরে খেলতে পেরে স্বভাবতই আনন্দিত দেশের হকি খেলোয়াড়রা। দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিজয় দিবস হকিতে অংশ নেয় ক্লাবগুলো। ‘ক’ গ্রুপে খেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশ। ‘খ’ গ্রুপে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বিকেএসপি, রক্তিম সংঘ এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা। দুটি গ্রুপে দলগুলো প্রথম রাউন্ডে লীগ ভিত্তিতে খেলে। টুর্নামেন্টের মোট বাজেট ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ টাকা দিয়েছে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ফুয়াং পলিমার। হকির দীর্ঘদিনের সঙ্কটের কারণে দীর্ঘ ২২ মাসে বদলে গেছে হকির চিত্র। দল বদল না হওয়াতে বাধ্য হয়েই খেলোয়াড়রা ক্লাবের বাদ দিয়ে দলে দলে যোগ দেন সার্ভিসেস দলে। এবার নৌবাহিনীতে চূড়ান্তভাবে চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ৭ হকি খেলোয়াড় : জিমি, সারোয়ার, কৌশিক, অসীম, রুম্মান, ইমন এবং শিটুল। শেষ পর্যন্ত তাদের নৈপুণ্যের ওপর ভর করেই বিজয় দিবস হকির অপরাজিত শিরোপা নিজেদের করে নেয় নৌবাহিনী।
×