ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ক্রিকেট

২০১৫- সাফল্যে মোড়ানো বছর

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

২০১৫- সাফল্যে মোড়ানো বছর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটি বছরে যখন অনেক বেশি প্রাপ্তি, আগের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি প্রাপ্তি যুক্ত হয়ে যায়; তখন সেই বছরটি সাফল্যেই মুড়িয়ে যায়। ২০১৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য ঠিক তেমনই বছর। একসঙ্গে অনেক প্রাপ্তি মিলে গেছে। দলীয় ও ব্যক্তিগত প্রাপ্তির দিক থেকে অন্য যে কোন বছরের চেয়েও বেশি অর্জন যোগ হয়েছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা। পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে ১৯৯৯ সালের পর হারানোর সঙ্গে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করা। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সিরিজে হারিয়ে দিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয়া। বিশ্বের বাঘা বাঘা দলগুলোকে ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়া এখন কোনভাবে ‘হেলা-ফেলা’র দল নয় বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্ব ও চন্দিকা হাতুরাসিংহের কোচিং দর্শন এক সঙ্গে যোগ হয়ে ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে সব স্থানে ক্রিকেটারদের অন্যরূপে উপস্থাপন করা। তাতে একের পর এক জয় মেলা। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল আগেই তারকাখ্যাতি পেয়েছেন। বিজ্ঞাপনের আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন। তাদের সঙ্গে মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের খ্যাতি আরও বেড়েছে। নতুন করে মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানের তারকাখ্যাতি হয়ে ওঠা। শত ঝামেলার মাঝেও বিশ্বকাপে রুবেল হোসেনের জৌলুস। বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরি করার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করা। এবং ‘ব্যাক টু ব্যাক’ সেঞ্চুরি করা। পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করে টেস্টে ড্র করা। তামিম-ইমরুলের ৩১২ রানের জুটি গড়া। যা টেস্টটাকে ড্র’র পথে নিয়ে যায়। তামিমের ডাবল সেঞ্চুরি করা। সবকিছুই সাফল্যের মুহূর্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। তবে ওয়ানডেতেই যেন এ বছরটিতে যে কোন বছরের চেয়ে বেশি সাফল্য মিলেছে। এ বছর নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য মিলেছে। সেই ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ থেকে উনত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে এসে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ সাফল্যই মিলেছে বাংলাদেশের। এ বছর ১৮ ওয়ানডে ম্যাচের ১৩টিতেই জিতেছে। তাও আবার ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছে। পাকিস্তানকেত ১৯৯৯ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো হারিয়েছে। প্রথমবারের মতো সিরিজে হারানোর সঙ্গে পাকিদের হোয়াইটওয়াশও করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও প্রথমবারের মতো সিরিজে হারিয়েছে। আর বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। এ বছর একটি সিরিজেও হারেনি মাশরাফিবাহিনী। এমনকি দেশের মাটিতে ১২ ম্যাচ খেলে মাত্র ২টি ম্যাচ হেরেছে! বিশ্বকাপ দিয়েই এ বছর শুরু করে বাংলাদেশ। বছরের প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নেয়। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েই বছর শুরু করে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কার কাছে পরের ম্যাচটিতেই ৯২ রানে হারে। পরের ম্যাচেই আবার জয় পায় বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দেয়। এমন অবস্থা ছিল, যে করেই হোক বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে ইংল্যান্ডকে হারাতেই হবে। এমন ম্যাচে ইংলিশদের হারিয়ে দিয়ে শেষ আটে খেলা নিশ্চিত করে নেয় টাইগাররা। এরপর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেটে হারলেও লড়াই করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল খুবই প্রশংসিত হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু এ ম্যাচটি কতটা বিতর্কিত ছিল, তা সবারই জানা। বিশ্বকাপ শেষ হতেই দেশের মাটিতে টানা ম্যাচ খেলতে থাকে বাংলাদেশ। একটি করে দল আসে খেলতে, আর হারতে থাকে। বাংলাদেশ শুধুই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখে। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান আসে খেলতে। প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা হলেই হারে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা হলেই হতাশা ঘিরে ধরে। এবার তা থেকে বের হয় বাংলাদেশ। ১৬ বছর পর পাকিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ। শুধু এক ম্যাচ হারালেই কথা ছিল, দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ৭ উইকেটে জিতে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে পুনর্শক্তির কোন দলকে সিরিজে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এমনকি তৃতীয় ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে জিতে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরবও অর্জন করে। এরপর ভারতকে ২-১ ব্যবধানে ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে একই ব্যবধানে সিরিজে হারিয়ে দেয়। এ বছর টানা তিন সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়ে দেয়। সিরিজ জয় দিয়েই বাংলাদেশের বছর শেষ হলো, তাই বোঝা গেছে। তখনও কেউই জানত না জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলা হবে। অস্ট্রেলিয়ার দুই টেস্ট খেলতে আসার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সফর স্থগিত করে দিল অসিরা। অনেকদিন বিরতি পরে গেল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সূচীতে। জিম্বাবুইয়েকে সিরিজ খেলতে আনার চেষ্টা করল বিসিবি। জানুয়ারিতে তিন ওয়ানডে, দুই টেস্ট, দুটি টি২০ ম্যাচের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল জিম্বাবুইয়ের। বিসিবি প্রস্তাব দিল নবেম্বরে নির্ধারিত ওভারের সিরিজটি খেলতে। তাতে জিম্বাবুইয়ে রাজি হয়ে গেল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হলো। বাংলাদেশও আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ খেলার সুযোগ পেয়ে গেল। যেটি হয়ে গেল বছরের শেষ সিরিজ। এ সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে দিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে টানা জয় ধরে রাখার কারণেই ৫ টেস্ট খেলে ১টিতে হার ও চারটিতে ড্র এবং ৫ টি২০ খেলে ২টিতে জয় ও ৩টি ম্যাচে হারের ছোঁয়া গায়ে লাগেনি। ওয়ানডের জয়গুলোর জন্যই যে সাফল্যে মোড়ানো হয়ে গেছে এ বছরটি।
×