ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিলেন প্রকৃচি নেতারা;###;৩০ ডিসেম্বরের পর লাগাতার কর্মসূচী

বেতন স্কেল নিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে পেশাজীবীদের আন্দোলনের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বেতন স্কেল নিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে পেশাজীবীদের আন্দোলনের ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল, বেতন বৈষম্য নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের সংগঠন বিসিএস সমন্বয় কমিটি (প্রকৃচি)। দাবি বাস্তবায়নে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সিভিল সার্ভিসের পেশাজীবীদের বৃহত্তর এ জোট। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শিক্ষক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসকসহ বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণ ছাড়া আন্দোলন বন্ধ হবে না। একই অবস্থান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী কলেজ শিক্ষকরদেরও। এর আগে অর্থমন্ত্রী সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে বলেন, সরকারী চাকরিজীবীদের নতুন বেতন স্কেল পরিবর্তনের আর কোন সুযোগ নেই। অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অযৌক্তিক দাবিতে তারা এসব করছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি অবশ্য প্রমিজ করেছিলাম তাদের (বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের) স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেয়া হবে। কিন্তু যে বেতন স্কেল দেয়া হয়েছে, তাতে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পূর্বঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল পুনর্বহাল এবং ক্যাডার ও নন-ক্যাডার ‘বৈষম্য’ নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক ও ২৬টি বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ দাবিতে আন্দোলনকারীরা ফার্মগেটের পুলিশ বক্সের সামনের সড়কে সকালে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নিলে স্থবির হয়ে পড়ে যান চলাচল। এক ঘণ্টা পর বিসিএস সমন্বয় কমিটির কর্মকর্তারা সড়কে আবস্থান থেকে সরে এলে ওই যান চলাচল শুরু হয়। সমন্বয় কমিটির ডাকে কয়েক শত কর্মকর্তা প্রথমে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে জড়ো হন। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে রওনা দেন। ফার্মগেটের পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশ মিছিলটি আটকে দেয়। এরপর সেখানেই অবস্থান নিয়ে সেøাগান দিতে থাকেন পেশাজীবীরা। পরে সমন্বয় কমিটির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়। প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যরা হলেনÑ স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যসচিব ফিরোজ খান, সদস্য মোবারক আলী, অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান, প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, স ম গোলাম কিবরিয়া ও সমন্বয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক মাসুমে রব্বানী খান। প্রতিনিধিবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলে অন্য কর্মকর্তারা রাস্তায় অবস্থান করে। স্মারকলিপি প্রদান শেষে ফিরে আসার পর বিস্তারিত অবহিত হয়ে কর্মকর্তারা রাস্তা ছেড়ে দেন। সমন্বয় কমিটি স্মারকলিপিতে প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার, নন-ক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত বাতিল, ইউএনওকে কর্তৃত্ব প্রদানমূলক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস স্মারক বাতিল, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, পদোন্নতির সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সুপারনিউমারারি পদ সৃজন, নিজস্ব ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিস বহির্ভূত সকল ধরনের প্রেষণ বাতিল এবং পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে সকল ক্যাডার ও সার্ভিসে সুপারনিউমারারি পদ সৃজনের বিষয়ে নির্দেশনা দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। জাতীয় বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করে নতুন করে বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, অর্থমন্ত্রী ঠিক বলেননি। প্রশাসন ক্যাডারকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচে নামিয়ে তাদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে প্রশাসন ছাড়া সকল ক্যডারকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্য সকল ক্যাডারের ওপর খবরদারি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারকে। এ কাজ করে একটি চক্র সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে বলেও অভিযোগ করেন নেতারা। একই সঙ্গে তারা বলেন, বারবার বলার পরেও কারা এসব করছে তা খুঁজে বের করা দরকার। ২৬ ক্যাডারের বাইরের পেশাজীবীরাও পে স্কেল নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে সমাবেশে বলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই ২৬টি ক্যাডারের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনে নেমেছে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসকরাও। বিসিএস সমন্বয় কমিটি মঙ্গলবারই জানিয়ে দিয়েছে, দাবি আদায়ে ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টা এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে লাগাতার কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দাবি আদায়ে কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচী চলছে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডার নেতাদের বৈঠক ॥ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সরকারী কলেজ শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। অন্যান্য ক্যাডারের মতো সহযোগী অধ্যাপকরা যাতে পদোন্নতি পেয়ে সরাসরি তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন এবং সহযোগী অধ্যাপকগণ চতুর্থ গ্রেড পান, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যান্য পদ আপগ্রেডসহ বৈষম্য নিরসনে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলেও শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক নাসরীন বেগম ও মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করেন। এদিকে সমিতির সাক্ষাতের পরই মন্ত্রীর কাছে পে স্কেল ইস্যুতে সরকারী কলেজের শিক্ষকদের বঞ্চিত হওয়ার তথ্য দিয়ে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সবচেয়ে বড় জোট ২৪তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ফোরাম। সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একই সঙ্গে ২৪ বিসিএসর সিলেকশন গ্রেড নিশ্চিত করায় শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। ২৪তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ফোরামের সভাপতি এনামুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম মাসুমের নেতৃত্বে ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় সংগঠনের অন্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন নুরুল হক, এ কে এম মাসুদ, মোঃ জাকির হোসেন, শফিকুল ইসলাম, সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান লিখন, আহসান হাবিব, নাসির উদ্দিন কচি, রওশন আরা, দিল আফরোজ বিনতে আছির, ইব্রাহিম খলিল, সায়মা রহমান প্রমূখ। রাবিতে কর্মবিরতির ডাক, অসন্তোষ ॥ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে আগামী ২৭ ডিসেম্বর কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
×