ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

আবারও সেই কদর্য চেহারা। ফের ইতিহাস বিকৃতি। এবার টার্গেট একাত্তরে শহীদ হওয়া ত্রিশ লাখ মানুষ। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দাবি করেছেন, শহীদের এই সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে! তাঁর ইঙ্গিত- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এতো মানুষ শহীদ হননি। সংখ্যাটা আরও কম হবে! দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ও একটি বড় দলের বর্তমান প্রধান মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ ডেকে উদ্ভট এই আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতাকারী জামায়াত শিবির যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া খালেদা তাই তোপের মুখে। তাঁর কুৎসিত বক্তব্যের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেছে গোটা দেশ। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। সভা-সমাবেশ মানববন্ধন থেকে খালেদার বিচার দাবি করা হচ্ছে। সাধারণ আড্ডা আলোচনা থেকেও ঝড় উঠছে নিন্দার। একটু কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ক্ষোভের কথা। কেউ তীব্র ক্ষোব প্রকাশ করছেন। কেউ ধুর ধুর ছিঃ ছিঃ করছেন। রাজনীতি সচেতন মানুষের মতে, খালেদা খুকিটি নন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের এতকাল পর শহীদদের নিয়ে তামাশা করছেন; সজ্ঞানে। কিন্তু উদ্দেশ্য আসলে কী? এমন প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজা হচ্ছে। খালেদা জিয়া ও তাঁর মন্তব্য ঘিরে রঙ্গও কম করা হচ্ছে না। অনেক দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা হতাশ খালেদার সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শাহাব উদ্দীন নামের এক সিএনজি অটোরিক্সা চালকের কথা শুনে হাসতেও হলো কিছু সময়। নিউমার্কেট এলাকায় যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা এই চালক আরেক চালকের সঙ্গে আড্ডায় বলছিলেন, খালেদা জিয়া না লন্ডন গেছিল চিকিৎসা করাতে। শেষ না কইরা আইলো ক্যান? এখনও সহনীয় শীত। রাজধানীবাসীকে কাবু করতে পারেনি। অনেকেই উপভোগ করছেন। তবে, হতদরিদ্র ছিন্নমূল মানুষেরা ভাল নেই। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় এরা সারা বছরই খারাপ থাকে। শীতে খারাপ থাকাটা বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। ফুটপাত কিংবা ওভারব্রিজের উপর গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকা মানুষগুলোকে দেখে তা অনুমান করা যায়। গত কয়েকদিন ফার্মগেট পুলিশ বক্স এলাকার একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হওয়ার সময় দেখা যায়, দুপুরের কাছাকাছি সময় ঘুমে অচেতন কয়েকজন ছিন্নমূল মানুষ। এত বেলা পর্যন্ত ঘুম কেন? মনে মনে সে প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে। আর তার পর একজনের সঙ্গে কথা বলা। নাম মনির মিয়া। বয়সে প্রবীণ। বললেন, শীত বাড়ছে। রাইতে যেই বাতাস আহে, ঘুমাইতে পারি না। দিনে ঘুমাই। সকালের রইদটা শইল্যে পড়লে ঘুমডা আসে! ফুটপাতে বসবাসকারী মানুষ শীত থেকে বাঁচতে আগুনে হাত পা ছেঁকে নিচ্ছেন। অল্প আগুন ঘিরে বসছেন একদল ছেলে বুড়ো। শীত থেকে বেঁচে থাকার আর কোন পথ খোলা নেই যে! মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকাটা বিশেষ ঠা-া। পাশেই নদী। সেখান থেকে হিমেল হাওয়ায় ভর করে আসে শীত। এখানে তাই আগুন জ্বালিয়ে গা গরম করার দৃশ্য খুব চোখে পড়ে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখন পর্যন্ত কোন গরম কাপড় তারা পাননি। এ কারণে আগুনটাই ভরসা। অথচ হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা উত্তুরে হিম হাওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, উত্তরাঞ্চলে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ঢাকায়ও আজ শুক্রবার থেকে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। আরও নামতে শুরু করবে তাপমাত্রা। ১১-১২ ডিগ্রী পর্যন্ত নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এ অবস্থায় ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো খুব জরুরী। কেউ কি দাঁড়াব না আমরা? এখনই দাঁড়াব না?
×