ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের জালে আফগানদের চার গোল

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশের জালে আফগানদের চার গোল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক যুগ আগে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ ফুটবল খ্যাত ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে’ শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার সেই শিরোপা পুনরুদ্ধারের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কেরলে যাত্রা করে বাংলাদেশ ফুটবল দল। কিন্তু শুরুতেই সেই যাত্রাতে হোঁচট খেয়েছে মামুনুল ইসলামরা। বৃহস্পতিবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তানের কাছে ৪-০ গোলে বিশাল ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে খেলা আফগানিস্তানের কাছে অসহায় ছিল বাংলাদেশ দল। আর এই হারে ফুটে উঠেছে বর্তমানে বাংলাদেশ দলের বেহাল অবস্থা। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই লজ্জানজনক এ হারে শেষ চারে ওঠার স্বপ্নটাও এখন কঠিন হয়ে গেছে। কারণ একই গ্রুপে আছে বাংলাদেশের চেয়ে র‌্যাঙ্কিং ও শক্তিতে এগিয়ে থাকা মালদ্বীপ। বাংলাদেশে শীতকাল দেখে গেছেন মামুনুলরা। কেরলে ঠিক বিপরীত অবস্থা। তীব্র গরম এখন এ রাজ্যে। তবে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল সম্প্রতি টানা ব্যর্থতার মধ্যে থেকে উঠে আসা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অনেক শক্তিধর অস্ট্রেলিয়া, জর্দান, তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানের কাছে টানা হার এবং তিন কোচ পরিবর্তনে এলোমেলো হয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। তবে সাফে যাওয়ার আগে দেশের মাটিতে প্রীতি ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিল কোচ মারুফুল হকের দল। কোচ, অধিনায়ক ও খেলোয়াড়দের কণ্ঠেও দারুণ কিছু করার প্রত্যয়ই ঝরেছিল। তবে বৃহস্পতিবার মাঠে নামার পর সে সবের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল বাংলাদেশ দলের মধ্যে। বর্তমানে ফিফা র‌্যাঙ্কিং অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল আফগানিস্তান। কৌশল, শক্তিমত্তা, ফিটনেস এবং সক্ষমতায় যে তারা কতটা এগিয়ে ম্যাচের শুরুতেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রথম থেকেই অসহায় হয়ে পড়ে বাংলাদেশ এবং আফগানদের আক্রমণে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনাহীন রণকৌশলে আরও ঘাটতি দেখা গেছে সঠিক সমন্বয়ের। ভুল পাসের ছড়াছড়ি, উদ্দেশ্যহীন ছোটাছুটি করে গলদঘর্ম হওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি মামুনুলরা। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বুঝেই চূড়ান্ত আঘাত হানতে শুরু করে আফগানিস্তান। প্রথমার্ধের ৩০ মিনিটের সময় পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ মাসিহ সাইগানির গোলে (১-০)। এ গোলটির পরেই বাংলাদেশের রক্ষণভাগের চরম দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশের নিস্পৃহ মিডফিল্ড ও ভঙ্গুর ডিফেন্সের সুযোগে একের পর এক আক্রমণে মামুনুলদের দিশেহারা করে তোলে আফগান আক্রমণভাগ। দুই মিনিট পরেই (ম্যাচের ৩২ মিনিটে) দ্বিতীয় গোল করেন অধিনায়ক ফয়সাল শায়েস্তা (২-০)। টানা দুটি গোল হজম এবং ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় দ্রুতই হাঁপিয়ে ওঠে ক্লান্ত বাংলাদেশ শিবির। আর এ সুযোগে ম্যাচের ৪০ মিনিটে আরেকটি গোল করে দলকে আরেক ধাপ এগিয়ে দেন জুবাইর আমিরি (৩-০)। প্রথমার্ধের এ বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকাতেই যেন বাংলাদেশের পরাজয়টা আগেভাগে নিশ্চিত হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা করে মারুফুলের শিষ্যরা। তবে আফগানিস্তানের দখলেই ছিল মাঝমাঠ। মুহুর্মুহু আক্রমণ চালিয়ে যায় তারা। বাংলাদেশ দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় অধিনায়ক মামুনুল বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের বিপদসীমায় ঢুকে গেছেন। তবে তিনি সমর্থন পাওয়ার মতো আর কাউকে আশপাশে পাননি। তাই ওই আক্রমণগুলোও নস্যাত হয়ে গেছে। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে আরেকটি সুযোগ পেয়েই কাজে লাগায় আফগানরা। এবার বদলি খেলোয়াড় খাইবার আমানি মাঠে নামার দুই মিনিটের মধ্যেই গোল করেন (৪-০)। এরপর পুরোপুরি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপরও মামুনুলদের রক্ষণভাগ ও মিডফিল্ডের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়নি। অবশ্য আর গোল পায়নি পরিশ্রান্ত আফগানরা। ৪-০ গোলে পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। পরবর্তী ম্যাচে শনিবার আরেক শক্তিশালী দল মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলবে মামুনুলরা।
×