ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শনিবার বিদ্যুত যাচ্ছে হালিমা মাহমুদার গ্রামে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

শনিবার বিদ্যুত যাচ্ছে হালিমা মাহমুদার গ্রামে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হালিমা-মাহমুদা-শিউলি-কল্পনারা বেশ পরিচিত নাম। বিশেষ করে নেপালে এএফসি কাপে ভুটানকে ১৬-শূন্য গোলে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৪ মহিলা ফুটবল দল। বিশাল এ অর্জনে আলোচনায় চলে আসে সাজেদা-আকলিমা কিংবা সানজিদাদের সেই অবহেলিত গ্রামগুলো। একে একে নয়টি গ্রাম ছবির মতো সাজানো। সেখানেরই প্রধান কোচ থেকে সহকারী কোচ আর ফুটবল দলের ১১ জন নিয়মিত খেলোয়াড়ের সবাই ময়মনসিংহর ধোবাউড়ার। যে গ্রামের মেয়েরা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে সেখানেই পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। বিষয়টিতে সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে। আর শনিবার নিজেদের এলাকার নয় গ্রামের মেয়েদের সাফল্যের উপহার হিসেবে ৮০৩ পরিবারের ঘরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বিজলীর আলো। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, বিজয় ছিনিয়ে এনে আমাদের মুখ তারা উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু তাদের গ্রামে বিদ্যুত নেই। বিষয়টি দৃষ্টিতে আসায় আমরা বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। শনিবার সেই ক্ষণ যখন তারা বিদ্যুত পাবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। আর এতে মোট নয়টি গ্রামের ৮০৩টি পরিবার বিদ্যুত পাচ্ছে। এ কাজে ব্যয় হচ্ছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-৩ লাইন নির্মাণ করেছে। শনিবার কলসিন্দুরে দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত সমিতি ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। একই সঙ্গে সুইচ টিপে সব গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। ধোবাউড়া উপজেলার গৌরিপুর গ্রামের মোঃ হাফিজ উদ্দিন মাস্টার অনুর্ধ-১৪ মহিলা ফুটবল দলের প্রধান কোচ। গৌরিপুরের হাফিজ মাস্টারের অনুপ্রেরণায় এ অঞ্চলের মেয়েদের ফুটবল খেলতে আসা। যেখানে পশ্চাদপদ গ্রামীণ জীবনে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামের সুযোগ অনেক কম সেখানে ফুটবল খেলার কথা চিন্তা করাই দুরূহ। কিন্তু এ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন এখানের নয় গ্রামের ১১ মেয়ে। এদের মধ্যে কলসিন্দুর গ্রামের মাহমুদা, শীউলী, সাজেদা, ইয়াসমিন আর পূর্ণিমা পাঁচ জন নিয়মিত খেলোয়াড়। পশ্চিম গামারীতলা গ্রামে এ সংখ্যাটা আরও একজন বেশি। সেখানে অনুর্ধ-১৪ দলের ছয় জন নিয়মিত খেলোয়াড় রয়েছেন। এরা হলেন- সানজিদা, আকলিমা, নাজমা, মার্জিয়া, সেলিনা, সালমা। দেশের ৮৭ হাজার ৩২০ গ্রামের মধ্যে কলসিন্দুর আর গামারীতলাই দেখিয়েছে অবাক বিস্ময়। ফুটবলার বানানোর কারিগর যেন দুটি গ্রামে। শুধু কলসিন্দুর আর গামারীতলা নয় বিস্ময় জাগাচ্ছে আশপাশের গ্রামগুলোও সেই বিস্ময়ের অংশ হয়ে উঠছে সোহাগীপাড়ার হালিমা, মারিয়ারা ফুটবলকে আপন করে নিয়েছে। এমনকি এরাও দলের অতিরিক্ত খেলোয়াড়। পঞ্চন্দনপুরের মরিয়াতো আগে থেকেই দলের নিয়মিত খেলোয়াড়। দক্ষিণ রানীপুরের সেই শামছুন নাহার দুর্দান্ত খেলে দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেয়ে গেল তাকে দেখে সাবিনা পায়ে টেনে নিলো ফুটবল। একই রকম মুক্তাগাছায়ও সেখানের তহুরাকে দেখে শামছুনাহার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। রামসিংহপুর রূপা কিন্তু আগে থেকে দলে নিয়মিত খেলছেন। তবে সব থেকে এগিয়ে গামারীতলাই সেখানের বালুশ্রী মানকিন ময়না আর কল্পনা ফুটবলের নতুন সম্ভাবনা। সঙ্গেতো সহকারী কোচ ময়নুল মাস্টার আছেনই।
×