ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী অর্থায়নই নয়, জাল মুদ্রা পাচারেও জড়িত ছিল ফারিনা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

জঙ্গী অর্থায়নই নয়, জাল মুদ্রা পাচারেও জড়িত ছিল ফারিনা

শংকর কুমার দে ॥ পাকিস্তান হাইকমিশনের বহিষ্কৃত সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ জঙ্গী অর্থায়ন ছাড়াও ভারতীয় জালমুদ্রা পাচারের ট্রানজিট রুটে পরিণত করেছে বাংলাদেশকে। গত দুই বছরে বাংলাদেশে আটক করা হয়েছে পাকিস্তান থেকে আসা ৩০ কোটি টাকার ভারতীয় জালমুদ্রা। আলোচ্য সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ২২ পাকিস্তানী নাগরিককে, যার মধ্যে আছে, পাকিস্তান হাইকমিশনের কূটনীতিক ও জঙ্গী সদস্যরা। বাংলাদেশকে ভারতের জালমুদ্রা পাচারে ব্যবহারের জন্য পাকিস্তানী চক্রের সঙ্গে জড়িত ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের একশ্রেণীর কর্মকর্তাও। পাকিস্তান যাতে বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের জালমুদ্রা পাচার করতে না পারে সেজন্য গত দুই বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার বৈঠক, টাস্কফোর্স গঠনসহ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। ঢাকার ডিবি, এসবি, সিআইডি, শুল্ক গোয়েন্দা ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এই বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ বহিষ্কৃত হওয়ার পর জঙ্গী অর্থায়ন ছাড়াও ভারতীয় জালমুদ্রা পাচারের বিষয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। এর আগে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খান একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বহিষ্কৃত হন। পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের জঙ্গী অর্থায়ন, ভারতীয় জালমুদ্রা পাচারের বিষয়টির সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, ভারতীয় রুপীসহ বিভিন্ন দেশের জালমুদ্রা তৈরিতে জড়িত পাকিস্তানী একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এসব মুদ্রা পাচারের রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে চক্রটি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে এসব মুদ্রা পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ হয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশ থেকে এসব মুদ্রা ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে যায়। বাংলাদেশের রাজশাহী, যশোর, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়সহ ভারতীয় জাল রুপী পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ২২ পাকিস্তানী গ্রেফতার হন। জালমুদ্রা কারবারের সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনের দুই কর্মকর্তা বহিষ্কৃত হন। গত মার্চে জালমুদ্রাসহ আটক হয়েছিল পাকিস্তান এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তার গাড়িচালক। এছাড়া পাকিস্তান হাইকমিশন ও এয়ারলাইনসের বেশ কয়েক কর্মকর্তার জালমুদ্রা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। মুদ্রা চোরাচালানে আটক পাকিস্তানী নাগরিকদের ভিসা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই ভুয়া ভিসা ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়, ভিসা কেনার রসিদও নকল করেন তারা। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের জালমুদ্রা তৈরি ও পাচারের বিষয়ে তদন্তের জন্য ভারতের ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সির (এনআইএ) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন। পুলিশ সদর দফতর ও গোয়েন্দা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), শুল্ক গোয়েন্দা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানে গত দুই বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ভারতীয় জালমুদ্রা পাচারকালে উদ্ধার ও পাচারকারীদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ সদস্যরা জালমুদ্রা উৎপাদনকারী, পাচারকারী ও এসব মুদ্রা ব্যবহারকারী মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে। জালমুদ্রা পাচাররোধকল্পে দুই দেশের টাস্কফোর্সও কাজ করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানী একটি সিন্ডিকেট ভারতসহ বিভিন্ন দেশের জালমুদ্রা তৈরি ও পাচার করে যাচ্ছে, যার মধ্যে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের একশ্রেণীর কূটনীতিকও জড়িত। পাকিস্তানী এই চক্রটি বাংলাদেশকে ব্যবহার করে মুদ্রা পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে জালমুদ্রা পাচারকারীদের গ্রেফতার ও মুদ্রা পাচার বন্ধে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×