ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রশিক্ষিত ৩ জেএমবি নেতাসহ আটক ৭;###;অস্ত্র তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে ১৬ হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি পাইপ গ্রেনেড, সুইসাইডাল ভেস্ট এবং দু’ শ’ গ্রেনেড তৈরির বিস্ফোরক

মিরপুরে জঙ্গী অস্ত্রাগার ॥ শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরক উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

মিরপুরে জঙ্গী অস্ত্রাগার ॥ শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরক উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খোদ রাজধানীর মিরপুরে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) শক্তিশালী হ্যান্ডগ্রেনেড তৈরির কারখানা আবিষ্কৃত হয়েছে। কারখানায় টানা ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালাতে হয়েছে পুলিশকে। শেষ পর্যন্ত সেই কারাখানা থেকে শক্তিশালী ১৬টি হ্যান্ডগ্রেনেড ও ১টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাইপগ্রেনেড, সুইসাইডাল ভেস্ট (আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য শরীরের সঙ্গে গ্রেনেড বেঁধে রাখার বিশেষ বেল্ট) ও ২শ’ হ্যান্ডগ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনার আটক করা হয়েছে ৭ জনকে। যার মধ্যে ৩ জন খুবই উঁচুমানের জেএমবি প্রশিক্ষিত গ্রেনেড প্রস্তুত, মজুদ ও সরবরাহকারী। সন্দেহভাজন হিসেবে অপর ৪ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মিরপুর থেকে উদ্ধারকৃত হ্যান্ডগ্রেনেড আর হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলে হামলায় ব্যবহৃত হ্যান্ডগ্রেনেড এক ও অভিন্ন। হোসেনী দালানে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের সদস্য। গ্রেফতারকৃতরা কারাবন্দী জেএমবি আমির জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সদস্য মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের অনুসারী। দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতেই শক্তিশালী গ্রেনেড তৈরি করে মজুদ ও সরবরাহ করতেই মিরপুরে কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছিল। ঘটনাস্থল ॥ বুধবার রাত দেড়টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন মিরপুর-১ নম্বরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এ ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালাতে যায় পুলিশের ৫টি দল। যেভাবে অভিযান চালানো হয় ॥ সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাড়িটিতে জেএমবির বোমা তৈরির কারখানা স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরেই অভিযান চালানো হয়। মূল অভিযান চালানোর আগে বাড়ির মালিক আবুল হোসেন ভূঁইয়াকে বিষয়টি জানানো হয়। বাড়ির মালিক মিরপুর কো-অপারেটিভ মার্কেটে কাপড় ব্যবসা করেন। তার সহযোগিতায় মূল অপারেশন শুরু হয় রাত ২টার দিকে। প্রায় আড়াই কাঠা জমির ওপর নির্মিত ৬তলা বাড়িটির ছয়তলার পূর্ব দিকের ফ্ল্যাটটির সামনে হাজির হয় পুলিশ। পুলিশ দরজা খোলার জন্য প্রথমে ডাকাডাকি করতে থাকে। কিন্তু তাতে ভেতর থেকে সাড়া দেয় না। এরপর দরজার একের পর এক আঘাত করা হয়। তাতেও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ সময় ভেতরে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। জানালার কাঁচ ভেঙ্গে পড়ার শব্দ শোনা যায়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ওই বাড়ি ও আশপাশের পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে শাহআলী থানা পুলিশ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটসহ ৫টি দল অভিযানে অংশ নেয়। পুলিশ দরজা খোলার জন্য বার বার চেষ্টা করতে থাকে। তাতে কাজ না হলে ফ্ল্যাটের দরজায় গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। বিপুল পরিমাণ সাউন্ডগ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায় পুলিশ। যাতে ভয় পেয়ে জঙ্গীরা দরজা খুলে আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হয় না। পুলিশ সকাল পর্যন্ত বাড়িসহ আশপাশের এলাকা ঘিরে অবস্থান নেয়। এরপর শেষ পর্যন্ত পুলিশ পুরো বাড়িসহ আশপাশের এলাকা ঘেরাও করে অবস্থান নিতে থাকে। দরজার বাইরে অবস্থান নেয় পুলিশের সোয়াট ও অন্য সদস্যরা। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দরজা না খুললে পুলিশ আবারও গুলি চালানো শুরু করে। এর আগে বাড়িটির আশপাশে ও পূর্বদিকের নিচতলায় থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়। একপর্যায়ে গুলি চালিয়ে দরজা ভেঙ্গে পুলিশ ভেতরে ঢুকে পড়ে। অনেকটা জীবন বাজি রেখেই পুলিশ সদস্যরা ৩ জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে ফেলে। আর পাশের আরেকটি বেডরুম থেকে ৪ জনকে আটক করে। আটকের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তারা ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশকে দিকভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তাদের কড়া নিরাপত্তায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান ॥ সাতজনকে আটকের পর শুরু হয় পুরো ফ্ল্যাটে তল্লাশি। তল্লাশি চালানো ডিবির পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলছিলেন, দেখলেই বোঝা যায়, ফ্ল্যাটটি জঙ্গীদের বোমা তৈরির কারখানা। চারদিকে বোমা তৈরির বিস্ফোরক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণীর বই রয়েছে সেখানে। মূলত এটি ছিল তাদের ছদ্মবেশ। যারা বোমা তৈরির কারখানার সঙ্গে জড়িত তারা হাতে বই নিয়ে ঢুকত। যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। আসলে তারা পড়ার জন্য বই বহন করত না। এছাড়া বিভিন্ন পাত্রে বিস্ফোরক রাখা। দুপুরে ফ্ল্যাট থেকে ১৬টি হাতে তৈরি উন্নত প্রযুক্তির হ্যান্ডগ্রেনেড, একটি পাইপ দিয়ে তৈরি শক্তিশালী বোমা, সুইসাইডাল ভেস্ট (আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য বোমা রাখার কাপড় বা ফোমের তৈরি বিশেষ পোশাক) উদ্ধার হয়। আর একটি ট্রাঙ্ক থেকে ২শ’ হ্যান্ডগ্রেনেড তৈরির বিস্ফোরক ও নানা সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। বিকেল চারটায় পুরো অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় উদ্ধারকৃত গ্রেনেডের ॥ গ্রেনেডগুলো একে একে উদ্ধার করা হয়। এরপর সেগুলো বিশেষ পাত্রে সংরক্ষণ করে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িটির পাশেই অন্তত ১৫ ফুট নিচে সারেং বাড়ি জামে মসজিদের পাশের বালুর মাঠে। গ্রেনেডগুলোতে সেফটি লক ছিল। সেই সেফটি লকের সঙ্গে প্রথমে অনেক লম্বা তার সংযুক্ত করা হয়। এরপর অনেক দূর থেকে সেই দুই তারের মাথা একত্রিত করে গ্রেনেডগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। গ্রেনেড বিস্ফোরণের সময় পুরো এলাকা কেঁপে উঠছিল। অনেকেই কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করেছিলেন। গ্রেনেড বিস্ফোরণের আগেই আশপাশের মানুষদের সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানে যে কোন ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট রাখা হয়েছিল। গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করার দায়িত্ব পালন করেন এডিসি ছানোয়ার হোসেন। তিনি জানান, হ্যান্ডগ্রেনেডগুলো যথেষ্ট উন্নতমানের ছিল। গ্রেনেডগুলোর সঙ্গে হোসেনী দালানে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের মিল রয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য ॥ রাত থেকেই শত শত মানুষ বাড়িটির চারদিকে ভিড় করতে থাকেন। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে পর পর কয়েকটি বিকট শব্দ হয়। এতে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। আশপাশের লোকজন দ্রুত বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যায়। পরবর্তীতে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের পূর্বদিকের দুইটি জানালার কাঁচই ভাঙ্গা। জেএমবির গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর জানালা দুইটির কাঁচ ভেঙ্গে পড়ে। জেএমবি সদস্যরা ফ্ল্যাটের পূর্বদিকের জানালা ভেঙ্গে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের কারণে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। স্থানীয়রা আরও জানান, বাড়িটিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিশেষ করে ছাত্রদের বেশি যাতায়াত ছিল। তারা ঘন ঘন বাড়িটিতে যাতায়াত করত। তাদের কাঁধে বা হাতে ব্যাগ থাকত। অনেক সময় তাদের হাতে বইপত্রও দেখা যেত। পাশেই সারেং মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়ত। দেখে বোঝার উপায় নেই তারা জঙ্গী। ঢাকা মহানগর পুলিশের বক্তব্য ॥ ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সকাল থেকেই সরেজমিনে উপস্থিত থেকে অভিযানের সার্বিক বিষয় তদারকি করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িটি মূলত জেএমবির গ্রেনেড তৈরির কারখানা। ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত জেএমবি জঙ্গীদের তথ্য এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্রধরে তারা কারখানাটির সন্ধান পান। কারখানা থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে ৩ জন জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তারা গ্রেনেড তৈরি, মজুদ ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। অপর চারজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের যে নাম পাওয়া গেছে, তা সঠিক নয়। তাদের ঠিকানাও ভুয়া। তাদের প্রকৃত নাম ঠিকানা জানার জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের হয়েছে। ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে তারা ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে গ্রেনেড তৈরির কারখানা স্থাপন করেছিল। উদ্ধারকৃত গ্রেনেডের সঙ্গে হোসেনী দালানে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের মিল রয়েছে। বলতে গেলে হুবহু এক ও অভিন্ন। ধারণা করা হচ্ছে, হোসেনী দালানে বোমা হামলার গ্রুপটির সঙ্গে এই গ্রুপটির যোগাযোগ ছিল। এমনকি এখান থেকে তৈরি হওয়া হ্যান্ডগ্রেনেড দিয়ে হোসেনী দালানে বোমা হামলা চালানোও বিচিত্র নয়। গ্রেফতারকৃতরা কারাবন্দী জেএমবির আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের অনুসারী। এ সংক্রান্ত অভিযান চলমান আছে। উদ্ধারকৃত গ্রেনেড দিয়ে ২৫ ডিসেম্বর খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা থার্টিফাস্ট নাইটে হামলা চালানোর কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, জেএমবির কারাবন্দী আমির জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সদস্য মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের অনুসারী গ্রুপটি নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। গ্রুপটির অধিকাংশ সদস্যই ছাত্রশিবির থেকে নতুনভাবে যোগ দিয়েছে। এই গ্রুপের হাতেই চলতি বছরের ২২ অক্টোবর রাজধানীর গাবতলী আমিনবাজার ব্রিজের ঢালে চেকপোস্টে ছুরিকাঘাতে খুন হয় ঢাকার দারুস সালাম থানার এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা। হত্যার পর পালানোর সময় গ্রেফতার হয় বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাথী মাসুদ রানা। মাসুদ রানা জানায়, বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি কামাল ওরফে প্রকাশ পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। মাসুদ রানার তথ্যমতে, পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার রাতেই ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে ৫টি হ্যান্ডগ্রেনেডসহ এক জামায়াত নেতা ও তার দুই ছেলে ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী গ্রেফতার হয়। কামরাঙ্গীরচর থেকে উদ্ধারকৃত হ্যান্ডগ্রেনেড আর চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর হোসেনী দালানে গ্রেনেড হামলা করে ২ জনকে হত্যা এবং দেড়শতাধিক আহত করার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত হ্যান্ডগ্রেনেড এক ও অভিন্ন। এতে হোসেনী দালানে বোমা হামলায়ও জেএমবিপন্থী জামায়াত-শিবির গ্রুপটির জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য ॥ গ্রেফতারকৃত সাতজনের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। এরা হচ্ছে, নাহিদ, মামুন ও কামাল। তিনজনই ছাত্র। নাহিদ ও মামুন উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র। অপরজন রাজধানীর একটি খ্যাতিমান কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। অপর ৪ জন সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায়নি। তবে অভিযানের আগে গ্রেফতারকৃতদের প্রশিক্ষক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেছে। পলাতক প্রশিক্ষকের বাড়ি চট্টগ্রামে বলে জানতে পেরেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। বাড়ির মালিকের বক্তব্য ॥ বাড়ির মালিক আবুল হোসেন ভূঁইয়া জানান, তিনি দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন। অন্যান্য তলা ভাড়া দেয়া। বাড়িটি দুই ইউনিটে করা। পূর্বদিকের ৬ তলার তিন কক্ষ বিশিষ্ট ফ্ল্যাটটিতে গ্রেফতারকৃতরা থাকত। চার মাসে চার ছাত্র নিজেদের মিরপুর সরকারী বাঙলা কলেজের ছাত্র পরিচয়ে মাসিক ৯ হাজার টাকায় ভাড়া নেয়। এরপর সেখানে বিভিন্ন বয়সী মানুষের যাতায়াত ছিল। এর মধ্যে বইখাতা হাতে ছাত্র বয়সী ছেলেদের যাতায়াত ছিল সবচেয়ে বেশি। এতে বিষয়টি তেমন সন্দেহ হয়নি। ভদ্র ব্যবহার। নিয়মিত পাশের সারেং বাড়ি জামে মসজিদে নামাজ পড়ত। কারও দেখে বোঝার উপায় নেই তারা জঙ্গী। আচার ব্যবহার ভাল। সবমিলিয়ে সন্দেহ করার মতো কোন কারণ ছিল না। বাড়ি ভাড়া নেয়ার আগে থানা পুলিশের তরফ থেকে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য সরবরাহকৃত ফরমও পূরণ করে দিয়েছে তারা। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও দিয়েছে। গ্রেফতারের পর দেখা গেল এসবই ভুয়া।
×