ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় বক্তারা

রাজ্জাক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন বলিষ্ঠ সৈনিক

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

রাজ্জাক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন বলিষ্ঠ সৈনিক

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ তিনি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন বলিষ্ঠ সৈনিক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই আদর্শে অবিচল ছিলেন তিনি। কখনও আদর্শের সঙ্গে আপোস করেননি। তার রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শন সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সকল গণমানুষের নেতা। বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুর রাজ্জাকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন এই সভার আয়োজন করে। এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কদ্বীপে রক্তদান ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাংসদ মোজাম্মেল হক, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, পীর হাবিবুর রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ। আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আব্দুর রাজ্জাকের মতো একজন আপোসহীন রাজনীতিবিদের খুব বেশি প্রয়োজন। তিনি পরিশ্রমী এবং সৎ মানুষ হিসেবে সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন। আদর্শের প্রশ্নে কখনও আপোস করেননি। তার রাজনৈতিক দর্শন ও কাজ নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ রচনা করার সময় এসেছে। এ সবের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে জানতে পারবে। বক্তারা ‘আব্দুর রাজ্জাক গবেষণা পরিষদ’ গঠন করে তাঁর সব স্মৃতি ও কর্ম সংরক্ষণ করার দাবি জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি একজন পরিশ্রমী নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ময়মনসিংহ অঞ্চলের কমান্ড দিয়েছেন এবং আমরা তার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। তাকে অনেক কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে তার অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার একটি দর্জির দোকানে গিয়ে তিনি সব থেকে দামি কাপড় খুঁজছিলেন শার্ট তৈরির জন্য। আমাকে বলেছিলেন তার ছোট ভাইয়ের জন্য। পরে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন ‘তোফায়েলই আমার একমাত্র ভাই।’ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ থেকে একচুলও নড়েননি। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি আমার হাতে হাত রেখে বলেছিলেন, আমি কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে পারব? এর কয়েকদিন পরেই তিনি মারা যান। তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। আমরা ভাইয়ের মতো ছিলাম। আমি তার কাছ থেকে অনেক স্নেহ আদর পেয়েছি। আমি জেল থেকে ছাড়া পাবার পর আমার মা ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসারত ছিলেন। রাজ্জাক ভাই আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন। আমার মা আমাকে কপালে একটা চুমু দিলেন এবং রাজ্জাক ভাইয়ের কপালে দুটো চুমু দিলেন। এরপর মা আমাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘তোমরা আজীবন ভাইয়ের মতো থাকবে।’ মায়ের সেই উক্তিই সত্য হয়েছে। তিনি আমার ভাই ছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক গবেষণা পরিষদ গঠনের দাবি জানিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাস ও আব্দুর রাজ্জাকের জীবনের ইতিহাস এক ও অভিন্ন। তার মতো বিশাল সংগঠক, গণতান্ত্রিক ও আপোসহীন নেতা, শুধু আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন সকল মানুষের নেতা। তাই আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে গবেষণা পরিষদ গঠনের দাবি ও প্রস্তাব জানাই। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবের কারণেই তিনি এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, তিনি কখনও শহীদ নয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাও দেননি। ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন। তার আগে আরও তিনজন এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের এজেন্ট হিসেবে তিনি ভূমিকা নিয়েছিলেন। তার পরিবার তখন পাক বাহিনীর কাছে সুরক্ষিত ছিল। পাক-বাহিনীর এক কর্মকর্তা জেনারেল জিয়াকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিলেন। তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একই কাজ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন। এখন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তার এ মিথ্যাচার থেকে বোঝা যায় তারা পাকিস্তানের হয়ে কাজ করছেন। আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, তিনি ছিলেন একজন আপোসহীন নেতা। কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জননেতা আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলতে গেলে কয়েকদিন কেটে যাবে। আলোচনা সভার এই সীমিত সময়ে তার সম্পর্কে বলে শেষ করা সম্ভব নয়।
×