ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৬৭০ জনের মধ্যে ২৭০ ভুয়া

পার্বতীপুরে রাজাকারদের দেয়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

পার্বতীপুরে রাজাকারদের দেয়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা

শ. আ. ম হায়দার, পার্বতীপুর ॥ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট বাতিলের দাবিতে শহীদুল হকের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পার্বতীপুর প্রেসক্লাবে সমবেত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বলেন, আমরা কোথাও প্রতিকার না পেয়ে বিবেকের তাড়নায় সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে হাজির হয়েছি। দৃশ্যত পার্বতীপুরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ছড়াছড়ি। ভারতে না গিয়ে, সশস্ত্র ট্রেনিং তথা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও বহু লোককে মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২ বছর বয়সী শিশু-কিশোররাও এখন মুক্তিযোদ্ধা। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা রাজাকারদের গেজেটভুক্ত করে গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। রাজাকারের মৃত্যু হলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয়। এ লজ্জা আমরা রাখব কোথায়। চাকরিক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সরকারী চাকরি কোটা তারাই ভোগ করছেন। ভুয়াদের দাপটে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়ী করে বলেন, যাদের দ্বারা ভূরিভূরি ভুয়া ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্ত হয়েছে আগামী ১১, ১২, ১৩ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কার্যক্রমে তাদের বাদ রাখার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা জানান, এখানে মোট ৬৭০ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলছেন। তার মধ্যে ২৭০ জনই ভুয়া। তার মধ্যে ২০ রাজাকার, ভারতে না গিয়েও ১৯, মুক্তিযুদ্ধের সময় ২ থেকে ৫ বছর বয়সী ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রণীত এ তালিকা যেকোন যাচাই-বাছাইয়ে প্রদর্শন করে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান। ইতোমধ্যে ক্রটিপূর্ণ ও লাল মুক্তিবার্তায় নাম লিপিবদ্ধ না থাকায় পার্বতীপুর সমাজসেবা অধিদফতর থেকে ১৭৬ জনের পৃথক একটি তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকার সবাই ৩শ’ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়ে ভাতা তুলছেন। শর্তারোপ করা হয়েছে আগামীতে যাচাই-বাছাইকালে তাদের নাম বাদ পড়লে উত্তোলিত পুরো টাকাই তারা ফেরত দেবেন। এ তালিকায়Ñ সামছুল হক, পিতা মৃত ছাইদুল হক, গ্রাম সাকোয়াপাড়া; মোঃ ফজলুল হক, পিতা মৃত লালু মিয়া, জাহানাবাদ; মঞ্জুয়ারা বেগম, স্বামী মৃত শহিদুল হক, হুগলিপাড়া; মোঃ সেরাজুল হক, পিতা মৃত এমরতুল্ল্যাহ, মোজাফফর নগর; ফয়জার রহমান, পিতা মৃত আছিরউদ্দিন, হরিরামপুর; আমিনুল হক সর্দার, পিতা মৃত বছিরউদ্দিন, বাঘাচোরা; রেজিয়া বেগম, স্বামী মৃত আঃ জলিল, সোনাপুকুর; রেবতি চন্দ্র রায়, পিতা মৃত পঞ্চন্ন রায়, রামচন্দ্রপুর; মোঃ তাহেরউদ্দিন, পিতা মৃত আঃ রহমান, কালিকাপুর; আনোয়ারা বেওয়া, স্বামী মৃত আঃ জলিল, দরিখামার; মোফাজ্জল হোসেন, পিতা মৃত এরাদতউল্লাহ, দরিখামার; মোশারফ হোসেন চৌধুরী, পিতা মৃত আঃ সাত্তার চৌধুরী, বড় চন্ডিপুর; আঃ কাফী, পিতা মৃত আঃ বাকী, গোবিন্দপুর; মাইদুল হক, পিতা মৃত রইচউদ্দিন, মধ্যপাড়া; নূরুল ইসলাম, পিতা মৃত শহিদুল হক, গ্রাম হয়বৎপুর; শাহিনারা পারভীন, স্বামী মৃত মোঃ জিকরুল হক সরকার, বেলাইচন্ডি; মোঃ নজরুল ইসলাম, পিতা মৃত রজব আলী সরকার, ব্রমত্তোর সোনাপুকুর; নূরল ইসলাম, পিতা মৃত মোসলেউদ্দিন, জাহানাবাদ; শামসুল হক, পিতা মৃত খলিলুর রহমান, হুগলিপাড়া; নূরুল আমিন, পিতা মৃত আঃ কাফি, পূর্ব হুগলিপাড়া; আবু তাহের শাহ, পিতা মৃত ছহিরউদ্দিন শাহ, রিয়াজনগর; নাজমূল হক, পিতা মৃত মকবুল হোসেন, সরকারপাড়া; হামিদুর রহমান, পিতা মৃত হাজী সহিরউদ্দিন, বাঘাচোরা; আঃ হামিদ, পিতা মৃত ওসমান সরকার, সাকোয়াপাড়া; সাইদুর ইসলাম, পিতা মৃত মোঃ মকবুল হোসেন, সরকারপাড়া; এবিএমডি জালালউদ্দিন, পিতা মৃত খয়েরউদ্দিন, জুড়াই; আনসার আলী, পিতা মৃত আফামুদ্দিন, গ্রাম বড়চন্ডিপুর; মোজাম্মেল হক, পিতা মৃত আয়েনউদ্দিন, সাকোয়াপাড়া; আজিজার রহমান, পিতা মৃত রফিউদ্দিন, দাড়ারপাড়সহ অনেকের নাম রয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আঃ হাই জানান, যাচাই-বাছাইয়ে যারা প্রমাণ দেখাতে পারবেন তারা থাকবেন। প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে বাদ যাবেন। দিনাজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোঃ সাইদুল হক জানান, পার্বতীপুরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হোক এটা তার প্রত্যাশা। তিনি আগামী যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে উপস্থিত থাকবেন। পার্বতীপুরের ইউএনও তরফদার মাহমুদুর রহমান আগামী যাচাই-বাছাইয়ে প্রকৃত তালিকা প্রণীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সম্মেলনে মোঃ জহুরুল হক, তরনীকান্ত রায়, তহুবার রহমান, হাফিজুর রহমান, আব্দুস সামাদ, আমিনুল হক, সালাম ম-ল প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
×