ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশের মদদ ॥ গ্রেফতার অধিকাংশই জামায়াত-শিবির ক্যাডার

অর্থের বিনিময়ে দুই বিদেশী ও পুলিশ হত্যা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

অর্থের বিনিময়ে দুই বিদেশী ও পুলিশ হত্যা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থের বিনিময়ে বিদেশের মদদে দুই বিদেশী ও পুলিশ হত্যাসহ নানা নৃশংস এবং নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সম্প্রতি আলোচিত সব হত্যাকা- ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশই গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই জামায়াত-শিবিরের সদস্য। নৃশংস হত্যাকা-ের পর সাইট ইন্টেলিজেন্স নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে কখনও আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা, কখনও আনসার আল ইসলাম আবার কখনও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ নানা নামে হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রকাশ করা হতো। মূলত বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতেই এমন অপপ্রচার চালানো হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীরা জড়িত। বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়ামে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও ইসলামের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে আলেম-ওলামা-ইমাম-খতিবদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, মূলত অর্থের বিনিময়ে বিদেশের মদদে ও পরামর্শে এসব হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে। চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলা ও চলতি বছরের ৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানী নাগরিক হোশি কুনিওকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে তিন হত্যাকারী গুলি চালিয়ে হত্যার পর পালিয়ে যায়। আর ঘটনার পর পরই আইএস বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের নামে হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। যা একেবারেই পরিকল্পিত। মূলত বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা থাকার প্রপাগান্ডা চালানো হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত তদন্তে বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা থাকার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারাবাহিক উন্নতির দিকে যাওয়া বাংলাদেশকে একটি জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরে দেশের ধ্বংস ডেকে আনতেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোন কোন মহল এমন অপতৎপরতা চালাচ্ছে। ইহুদী নাসারা আইএস জন্ম দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আল কায়েদা, আইএস, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সব এক সুঁতোয় গাঁথা। এদের মদদদাতাও এক। তাভেলা হত্যার পর সর্ব প্রথম ইহুদী মহিলা রিটা কাৎজে তার সাইট ইন্টেলিজেন্স থেকে আইএস হত্যাকা-টি ঘটিয়েছে বলে প্রচার করে। এরপর বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছুটে যান। তাঁরা বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা আছে বলেও অভিযোগ করেন অথচ সবই মিথ্যা। দুই বিদেশী হত্যার পর ষড়যন্ত্র সফল না হওয়ায় তারা আবার নতুন করে খ্রীস্টানদের ওপর হামলা করা শুরু করল। মূলত বাংলাদেশের ধারাবাহিক সফলতা ও উন্নয়ন মেনে নিতে পারছে না দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রগুলো। এ জন্য তারা বাংলাদেশে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, ইরান ও লিবিয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। কমিশন যে রকম নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী কাজ হবে। নির্বাচনে কোন সহিংসতা হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, যারা আইএসের জন্ম দিয়েছে তারাই তাদের দমনের জন্য নেমেছে। আইএস সৃষ্টিকারীরা মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করতে চায়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ওই গোষ্ঠীগুলো ষড়যন্ত্রে নেমেছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে এদেশে জঙ্গীবাদী কর্মকা- চালানোর চেষ্টা চলছে। আলেম সমাজ পবিত্র ইসলাম ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে দেশকে জঙ্গীবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করতে অনেক ভূমিকা রাখতে পারেন। সারা বিশ্বে জঙ্গীবাদের কারণে মুসলমানরা বিপদে রয়েছেন। বাংলাদেশের মতো শান্তিপূর্ণ দেশকেও জঙ্গীবাদী দেশ বানানোর অপচেষ্টা চলছে। শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমাম আল্লামা ফরিদউদ্দিন মাসউদ বলেন, যে দেশে জামায়াতে ইসলামীর মতো দল আছে, সেদেশে আইএসের প্রয়োজন নেই। কারণ জামায়াত-শিবির আইএসের চেয়েও নৃশংস। যার প্রমাণ তারা রেখেছে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে। তিনি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের সব প্রতিষ্ঠান সরকারের হেফাজতে নেয়ার দাবি জানান।
×