ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটনি!

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

হারিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটনি!

‘ব্রিটনি প্রায়ই নগ্নাবস্থায় আমার সামনে হাঁটত এবং আমাকে বেডরুমে যাওয়ার জন্য আহ্বান করত।’ অভিযোগটি ফার্নান্দো ফ্লোরেসের। তিনি ব্রিটনির দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দেহরক্ষককে ভক্ষক বানানোর এই চেষ্টার অভিযোগকে কল্পনাপ্রসূত এবং ভিত্তিহীন বলেই অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন স্বয়ং ব্রিটনি। থেমে যাননি ফ্লোরেস। নতুন করে অভিযোগ তুলেছেন শিশু নির্যাতনের। ব্রিটনি নাকি তাঁর সন্তানদের মারধর করতেন! এরকম নেতিবাচক খবরের কারণে বহুবার শিরোনাম হয়েছেন এই পপকন্যা। তাতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে একটু ছাপ পড়েছে বটে, ক্যারিয়ার থেমে থাকেনি। ১৯৮১ সালের ২ ডিসেম্বর। অ্যামেরিকার মিসিসিপি রাজ্যের ম্যাককম্ব শহরটা যেন একটু নড়েচড়ে বসল। কারণ, সেদিনই জন্মেছিলেন ব্রিটনি জিন স্পিয়ার্স। তিন বছর বয়স থেকেই নৃত্য ও সঙ্গীতে তালিম নেন তিনি। প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘স্টার সার্চ’-এ অংশগ্রহণ করেন মাত্র ১০ বছর বয়সেই। ঠিক পরের বছরই বিখ্যাত টেলিভিশন চ্যানেল ডিজনির পর্দায় আসেন শিশু অনুষ্ঠান ‘মিকি মাউস ক্লাব’-এর উপস্থাপিকা হয়ে। পথচলা শুরু এভাবেই। আর থেমে থাকেননি কখনও। ১৯৯৭ সালে যোগ দেন মহিলা সঙ্গীত গোষ্ঠী ‘ইনোসেন্স’-এ। পরের বছরই চুক্তিবদ্ধ হন জিভ রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে। ১৯৯৯ সালে বেরোয় প্রথম একক। তখন বয়স মাত্র ১৭। এত কম বয়সে করা প্রথম এ্যালবামেই হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন বিশ্বজুড়ে। প্রায় তিন কোটি কপি বিক্রি হয়েছে বাজারে। আর তাতেই রেকর্ড হয়ে গেছে নতুন একটা। ‘বেস্ট সেলার’ পুরস্কার জুটেছে তরুণ মেয়ে শিল্পী হিসেবে। সেই থেকেই নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। সংসার জীবন কখনোই পরিপূর্ণ ভালো কাটেনি আবেদনময়ী এই পপকন্যার। ছেলেবেলার বন্ধু জেসন আলেকজান্ডারকে বিয়ে করেছেন ২০০৪ সালে। তাতেও ছিল কিনা রেকর্ড গড়ার প্রত্যয়! পৃথিবীর সবচেয়ে স্বল্পসময় মেয়াদী বিয়ের খাতায় নাম তোলার জন্য সেই বিয়েটি ভাঙনের পথ ধরে মাত্র ৫৫ ঘণ্টার ব্যবধানে। কয়েক মাসের মধ্যে আবারও বিয়ের ভূত চাপে ব্রিটনির ঘাড়ে। তখনও ২০০৪ পেরোয়নি। ঘাড়ে চেপে বসেন নাচিয়ে কেভিন ফেডারলিনের। ওর সঙ্গে মাত্র ক’দিনের পরিচয় ছিল। এই বিয়েটাও টিকেনি খুব বেশিদিন। কিন্তু, ততদিনে জেডেন আর শিন নামে দুই পুত্রসন্তানের মা বনে গেছেন ব্রিটনি। মাত্র তিন বছরের মাথায় বিয়ের পাততাড়ি গুটিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত ব্রিটনি জড়িয়ে পড়েন মাদকের দুনিয়ায়। সেই দুনিয়া থেকে ফিরে আসতে তাঁকে সংশোধন কেন্দ্রেও যেতে হয়েছে। ব্রিটনির সর্বশেষ প্রেমিক ছিলেন চার্লি ইবেরসল। তার সঙ্গেও ইতিমধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। অথচ, প্রেম থাকাকালীন সময়ে কতকিছুই না করেছেন চার্লির জন্য! সর্বশেষ জন্মদিনে একটি কালো ঘোড়াও পর্যন্ত উপহার দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি, সেই ঘোড়ায় চড়েই দু’জন ঘুরেও বেরিয়েছিলেন অনেকটা সময়। তবুও টিকল না প্রেমটা। প্রেম ও সম্পর্ক নিয়ে সঙ্কটে থাকা ব্রিটনিকে তাই বাবা পরামর্শ দিয়েছেন নতুন কোন সম্পর্কে আপাতত না জড়াতে। গুরুত্ব দিয়েছেন গানে মনোযোগ দেয়ার ব্যাপারে। রাগটাও কিন্তু কম নেই ব্রিটনির। একবার ডন নোয়েল নামক এক সহকর্মীর নাক ফাটিয়ে ফেলেছিলেন। কাজের সময় নোয়েল তাঁকে বিরক্ত করছিল। মামলাও হয়েছিল এই ঘটনায়। হতো না এসব, যদি নোয়েলকে ঠিকঠাক চিকিৎসা খরচ দিয়ে দেয়া হতো। ব্রিটনি তা দেননি। সে কারণে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হতে হয়েছে তাঁকে আরেকবার। তবুও জনপ্রিয়তা কমেনি মাদকতাময় এই পপ তারকার। সম্প্রতি ই অনলাইন এক খবরে জানিয়েছে, জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণে লাস ভেগাসের প্ল্যানেট হলিউডে ব্রিটনির ‘পিস অব মি’ কনসার্টটি আরও বেশ কিছুদিন চলবে। আয়োজকদের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তিও সম্পাদন করে ফেলেছেন তিনি। এটাই এখন ব্রিটনি ভক্তদের কাছে সবচেয়ে বড় খবর। ব্যক্তিগত জীবনে নানা জটিলতায় বিব্রত ও মানসিক ভোগান্তিতে থাকা এই ‘প্রিটি গার্ল’ও এই সাফল্যে খুব উচ্ছ্বসিত। ‘পিস অব মি’ কনসার্টটি নিয়ে ব্রিটনির সঙ্গীত সফরের শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের শেষের দিকে। হারিয়ে যাওয়া শিল্পীদের তালিকায় উঠে আসলেও ব্রিটনি কি আসলেই হারিয়ে গেছেন! এই বিষ্ময়ের ঘোর কেটে যায় তাঁর ভক্তদের ভিড় দেখেই। বারাক ওবামাকে পিছু ফেলে জনপ্রিয়তার তালিকায় শীর্ষে ওঠা ব্রিটনি এখনও মাইক্রোব্লগিং সাইটগুলোতে তুমুল জনপ্রিয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারেও জনপ্রিয়তায় তাঁর অবস্থান সপ্তম। সৃষ্টি কখনও মরে যায় না। স্রষ্টাও তাই বেঁচে থাকে সৃষ্টির হাত ধরে। ব্রিটনির গানগুলো মরে যাবে না, যুগযুগ ধরে তাই এ কারণেই বেঁচে থাকা হয়ে যাবে তাঁর...
×