ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কালো টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ হলে বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

কালো টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ হলে বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব মেলা-২০১৫ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, এটাকে রোধ করতে হবে। আর এটা করতে হলে সরকারের চলমান নীতি পাল্টাতে হবে। দেশের টাকা যেন দেশেই থাকে, এ বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। বুধবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। আবাসন খাতকে চাঙ্গা করা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বিনা প্রশ্নে কালো টাকা ব্যবহার করতে দিতে হবে। আগে প্রশ্ন করা হতো না। আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কালো টাকার বিষয়ে যেন প্রশ্ন না করা হয়। ৭৬ হাজার কোটি টাকার অর্ধেক হলেও এটাকে রোধ করতে হবে। এটা খুবই জরুরী কারণ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আবাসন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে কালো টাকা কি জানি না! টাকা থাকলেই না সাদা-কালো হয়। তবে কালো টাকা বলি আর অপ্রদর্শিত আয় বলি, এটা আবাসন খাতে বিনিয়োগ হলে বিদেশে টাকা পাচার অনেকাংশে কমবে। আমরা আগেও দেখেছি, আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগ হতো। তখন এ নিয়ে কোন কথা হয়নি। প্রশ্নও করা হয়নি। এ বিষয়টি যেন আবার ফিরে আসে। আবাসন খাত চাঙ্গা করতে হলে কালো টাকা ব্যবহার করতে হবে। দেশের টাকা যেন বাইরে পাচার না হয়। বেসরকারী খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করুন। আমরা বলতে পারি এ খাতে বিনিয়োগ করলে হলমার্ক ও ডেসটিনির মতো ভয় পেতে হবে না। রাজধানীর কালশীতে ভাল মানের এ্যাপার্টমেন্ট করছি। আপনারা ২০১৬ সালের মধ্যেই এখান থেকে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা অল্প টাকায় সবার জন্য ফ্ল্যাট দিতে চাই। আমি দেখেছি ইন্দোনেশিয়ায় ও মালয়েশিয়ায় আছে ৪০০ বর্গফুট। আমরাও অল্প টাকায় ফ্ল্যাট দেব সাধারণ মানুষকে। মানুষ যেন ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ফ্ল্যাট পায়, সেই ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাব। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। ঢাকা দূষণে ওয়াসাকে দায়ী করে মন্ত্রী বলেন, আজকে বুড়িগঙ্গা, বালু ও তুরাগে দূষণ ছড়াচ্ছে। আমরা এসব নদীর সামনে যেতে পারি না। এ দূষণের জন্য ওয়াসার সিস্টেমই দায়ী। ওয়াসা স্যুয়ারেজ পাইপলাইন করছে বলে মনে হয় না। এগুলো ড্রেজিং করতে হবে। আমরা নিজেরাই পাইপলাইন বসাতে পারি ওয়াসার জন্য বসে থাকব না। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দূষণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা কোন দিন দেখিনি কক্সবাজারে বর্জ্য, কিন্তু এখন দেখছি অনেকে নাকি সেখানে মানব বর্জ্য পাচ্ছে। এটার কারণে হোটেলের পয়োবর্জ্য পরিশোধনে নিজস্ব স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নেই। তবে আমার নিজস্ব হোটেলে এসটিপি আছে। আমি বিদেশ থেকে এসটিপি স্থাপন করেছি। কক্সবাজারের অনেক হোটেল মালিক জানে না এসটিপি কি? তাই পরিবেশ রক্ষায় এসটিপি স্থাপনের প্রতি আমাদের সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। অনুষ্ঠানে রিহাব সভাপতি আলমগীর সামছুল আলামিন বলেন, ২০১৩ সালে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশ থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় দেখেছি, পাচার হওয়া টাকা দিয়ে ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনেছেন পাচারকারীরা। অথচ দেশের টাকা দেশেই বিনিয়োগের কথা ছিল। এছাড়া কালো টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য পর পর তিনটি বাজেটে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সহায়তা দিয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টাকার সোর্স জানতে চাওয়ার আইনের কারণে এ টাকা দেশে ধরে রাখা যাচ্ছে না। দুদকের দ্বৈতনীতির কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ নীতি পাল্টাতে হবে, যাতে করে কালো টাকা বিদেশে পাচার না হয়ে আবাসন খাতে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়। তাই মন্ত্রীকে অনুরোধ করছি আপনি, অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে বলবেন। দেশের টাকা বিদেশে পাচার বন্ধে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আবাসন দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাত। ৫ জনকে নিয়ে শুরু হওয়া সংগঠনে আজ ১৩শ’ সদস্য। জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১৩ সালে এ খাত সরকারকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এ হার কমে যাচ্ছে। তিন বছর ধরে এ খাতে মন্দা যাচ্ছে। যে কারণে আমাদের সদস্যরা প্রকল্প নিতে ভয় পাচ্ছেন। এটা চলতে থাকলে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে একটা পার্থক্য তৈরি হবে এবং ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, রিহ্যাব মেলা আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মতো। আশা করি, এ মেলায় ব্যাপক দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের জমির ব্যবস্থা করলে আমরা অনেক কম দামে ফ্ল্যাট দিতে পারব। মন্ত্রীর মাধ্যমে ঋণ পেয়েছি। এজন্য আমরা প্রবাসীদেরও স্বল্পসুদে ঋণে ফ্ল্যাট দিতে পারছি। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামছুল আলামিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের সদস্যগণ ছাড়াও প্লট ফ্ল্যাট ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
×